নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারে পুরান ঢাকার কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জের নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর আদালত স্থানান্তরে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে হাইকোর্টে করা রিটের পরবর্তী শুনানি ১০ জুন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৮ মে) এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে রয়েছে এ জে মোহাম্মদ আলী, মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, এ কে এম এহসানুর রহমান। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
এর আগে, পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে আদালত পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬ মে রিট আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আদালতের অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন। খালেদা জিয়ার রিটে দাবি করা হয়েছে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞা সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ বহির্ভূত। একইসঙ্গে প্রজ্ঞাপনে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধির (সিআরপিসি) ধারা ৯ এর (১) ও (২) উপধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগার থেকে বিশেষ জজ আদালত-৯ কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই নম্বর ভবনে স্থানান্তরে জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ এবং বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে রিটে। সেই সঙ্গে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য গত ১২ মে সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এই প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে রবিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার মীর হেলাল। পরে রিটটি গ্রহণ করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।
এর আগে গত ২১ মে খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশে তিনি দাবি করেন, গত ১২ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুসারে খালেদা জিয়ার মামলা শুনানির জন্য পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালত (বিশেষ জজ আদালত-৯) স্থানান্তর করে কেরানীগঞ্জে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেকোনো বিচার হতে হবে উন্মুক্তভাবে। কারাগারের একটি কক্ষে উন্মুক্তভাবে বিচার হতে পারে না। ফলে এই প্রজ্ঞাপন সংবিধানবিরোধী। একই সঙ্গে কোথায় কোথায় কারাগার স্থানান্তরিত হতে পারে তা ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে দেয়া আছে। ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে কোথাও উল্লেখ নেই যে, কারাগারের মধ্যে আদালত স্থাপন হতে পারে। সুতরাং সংবিধান ও ফৌজদারি আইনের বিরুদ্ধে সরকার অবস্থান নিয়েছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তার কোনো জবাব না পাওয়ায় এ রিট করেন।
প্রসঙ্গত দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত হয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কাবাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে তার বিচারের জন্য আদালত স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত এলো।
Discussion about this post