নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা প্রয়োজন ও ছেলেধরার বিষয়ে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, সেটা পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জানিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, গুজব ছড়ানোর সাথে বেশ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালেরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এর কারণে গত ১৬ দিনে ১০টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একইসাথে ৬০টি ফেসবুক পেজ ও ২৫টি ইউটিউব চ্যানেলও বন্ধ করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।
পদ্মাসেতুতে নির্মাণে ১ লাখ মানুষের মাথা প্রয়োজন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেয়ার পর দেশজুড়ে অবিশ্বাস্য নানা ঘটনা ঘটেছে। ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এই মাথা সংগ্রহ করার জন্য ৪২টি দল কাজ করছে ও তার প্রধানত শিশুদেরকে হত্যা করতে চাইছে।
গুজবে বিশ্বাস করে বিভিন্ন স্থানে অপরিচিতদের দেখা মাত্রই পিটুনির ঘটনা ঘটেছে। খোদ রাজধানী ঢাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় অন্তত তিনজনকে। সারাদেশে এই সংখ্যাটি অন্তত ১০। মেয়েকে দেখতে যাওয়া বাবাকে হত্যা করা হয়; মেয়েকে স্কুলে ভর্তির করতে খোঁজ নিতে যাওয়া মাকে খুন করে উন্মত্ত জনতা। মানসিক বিকারগ্রস্থ এক নারীকে পেটানো হয় তার কাঁধে ব্যাগ দেখে।
এর মধ্যে ফের নতুন গুজব ছড়ানো হচ্ছে; ২ দিন দেশে বিদ্যুৎ বন্ধ করে ঘরে ঢুকে শিশুদেরকে হত্যা করা হবে। বিশেষত, স্বল্পশিক্ষিতদের মধ্যে এই গুজবের ভয়াবহতা বেশি। কিন্তু, ফেসবুকে যারা এগুলো ছড়াচ্ছে; যেসব আইডি থেকে ম্যাসেজ আসছে; তাদের মধ্যে বহুজন ইংরেজিতে বাক্য লিখতে জানে। আর এই সব আইডির বহুগুলোই ভুয়া।
সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি বলেন, পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িত অসংখ্য আইডি লিঙ্ক খুঁজে পায়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গাতে বসে এই সব আইডি ব্যবহার করা হচ্ছিলো। আরব আমিরাতের দুবাই থেকে পোস্ট দেয়া হয়েছে। তিনি বিরোধী দলের রাজনীতির সাথে জড়িত।
বাংলাদেশের যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে; তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সাথে সম্পৃক্ত বলেও জানান পুলিশ প্রধান।
গুজব প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সারাদেশের সব থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, গুজব ছড়িয়ে এই পর্যন্ত আটজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। মারা যাওয়া একজনও ছেলেধরার সাথে জড়িত ছিলো না; তারা ছিলো নিরপরাধ।
আইজিপি বলেন, সারাদেশে এই পর্যন্ত ৩১ মামলা হয়েছে ও ১০৩ জন্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে, কোনো ঘটনার সাথেই ছেলেধরার অস্তিত্ব মেলেনি। এমন অবস্থায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সচেতনতা সপ্তাহ পালন করবে পুলিশ।
কোনো কারণে সন্দেহ হলে ৯৯৯-এ কল করে জানানোর আহ্বান জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক। একইসাথে স্বল্প সময়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাবে বলে জানান তিনি।




Discussion about this post