আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ধর্ষণের অভিযোগে জেলে থাকা ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমকে সাংবাদিক হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণার কথা রয়েছে আগামী ১৭ জানুয়ারি। এর আগে দু’জন নারী অনুসারীকে ধর্ষণের অভিযোগে তাকে ২০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে ২০১৭ সালে। ডেরা সাচ সাউদা সেক্টরের এই ধর্মগুরু সেই থেকে জেলে আছেন। খবর অনলাইন বিবিসি।
উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় সিরসা শহরে অবস্থিত ডেরা’র সদর দফতরে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনের কাহিনী ফাঁস করার দায়ে একটি পত্রিকার সম্পাদক রাম চান্দর চট্টপতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যায় অভিযুক্ত করা হয় কুলদিপ সিং, নির্মল সিং ও কৃষ্ণান লালকে। মামলাটির শুনানিতে হরিয়ানার পাঁচকুলা আদালতে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে জেল থেকে হাজিরা দেন স্বঘোষিত এই ধর্মগুরু।
শুনানি চলাকালে পুরো রাজ্যে এবং পাঞ্জাবের অনেক এলাকায়, যেখানে ডেরার বেশির ভাগ ভক্তের বসবাস, সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এর আগে ২০১৭ সালের আগস্টে যখন ধর্ষণের দায়ে ওই ধর্মগুরুকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন ব্যাপক সহিংসতা দেখা দেয়। এতে কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত হন। এর পরই প্রায় ৫০ জন নারী সামনে এগিয়ে আসেন। তারা তাদের ওপর ডেরার ওই সদর দফতরের ভিতরে চালানো যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রকাশ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে ৫১ বছর বয়সী রাম রহিম সিং নিজেকে ধর্মীয় নেতা ঘোষণা করার ফলে সারা বিশ্বে সৃষ্টি হয় তার অসংখ্য ভক্ত। কিন্তু ২০০২ সালে সব এলোমেলো হতে শুরু হয়। স্থানীয় একটি পত্রিকায় একটি চিঠি প্রকাশিত হয়। লিখেছিলেন রাম রহিম সিংয়ের একজন অজ্ঞাত ভক্ত। তা প্রকাশিত হয়েছিল সম্পাদক রাম চান্দর চট্টপতির হিন্দি ভাষার পত্রিকা ‘পুরা সাচ’-এ। যার বাংলা অর্থ সম্পূর্ণটাই সত্য।
ওই চিঠিতে ডেরার ভিতরে যে যৌন নির্যাতন করা হয় তার বর্ণনা প্রকাশ করা হয়েছে। গুলিতে নিহত ওই সম্পাদকের ছেলে অংশুল চট্টপতি দ্য প্রিন্টকে বলেছেন, তার সহকর্মীরা তার পিতাকে ওই সময় সতর্কতা অবলম্বলের অনুরোধ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, কেউ আপনাকে গুলি করতে পারে। এর জবাবে তার পিতা রাম চান্দর চট্টপতি বলেছিলেন, একজন প্রকৃত সাংবাদিক বুক পেতে বুলেট নিতে পারেন, জুতা নয়। এর ৫ দিন পরে ২০০২ সালের ২৪ শে অক্টোবর ডেরা সাচ সাউদের অনুসারীরা নিজের বাড়ির বাইরে গুলি করে রাম চান্দর চট্টপতিকে।
এর এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মারা যান রাম চান্দর চট্টপতি। কিন্তু ‘পুরা সাচ’ পত্রিকায় যে চিঠি প্রকাশিত হয়েছে তা চারদিকে তোলপাড় করে দেয়। এতে ওই ডেরার ভিতর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে বড় রকমের অনুসন্ধান শুরু হয়। ওদিকে পিতা মারা যাওয়ার সময় অংশুল চট্টপতির বয়স ছিল ২১ বছর। তিনি তখন পত্রিকাটির হাল ধরেন এবং রাম রহিম সিংয়ের ধর্ষণের কাহিনী প্রকাশ করা শুরু করেন। রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে তার পিতাকে হত্যার অভিযোগ আনেন।
Discussion about this post