নিজস্ব প্রতিবেদক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। এরই অংশ হিসেবে আগামী ৩১ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে কমিশন। প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ বিষয়ক এ সভায় জাতীয় নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণসহ ১১টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। অপরদিকে তফসিল ঘোষণার আগে ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সংক্রান্ত কার্যক্রম আগামী পহেলা নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে সকল নির্বাচন কর্মকর্তা ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি জারি করা হয়েছে। ইসি সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী পহেলা নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারগণ দেখা করার পর ওই মাসের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা সামনে রেখে এ সব কার্যক্রম শেষ করা হচ্ছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর বা তার পর সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, তফসিলের আগে আমাদের নেয়া সব প্রস্তুতির বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সহযোগিতার জন্যই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ কীভাবে সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে। তফসিল ঘোষণার আগে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় ওই সভার সভাপতিত্ব করবেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ওই বৈঠকের এজেন্ডাগুলোর মধ্যে রয়েছে— নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরিকল্পনা; ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ; নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ এবং বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি পর্যালোচনা। আরও রয়েছে— ভোটকেন্দ্রের স্থাপনা মেরামত ও ভৌত অবকাঠামো সংস্কার; পার্বত্য দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে নির্বাচনী মালামাল পরিবহন এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের আনা-নেয়ার পদক্ষেপ; নির্বাচনী প্রচার; দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ; পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে সহায়তা; আবহাওয়ার পূর্বাভাস; আগাম প্রচারণা সামগ্রী অপসারণ।
ইসির চিঠিতে সভায় উপস্থিত থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর মহাব্যবস্থাপক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের ডাকা হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, ডাক অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক; স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এনআইডি সংশোধনের শেষ সময় পহেলা নভেম্বর
আগামী পহেলা নভেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকার সিডি ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সংক্রান্ত কার্যক্রম শেষ করতে চিঠি দিয়েছে ইসি। পৃথক দুই চিঠির একটিতে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সংক্রান্ত কাজে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে তা পাঠাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নিতে হবে। অপরদিকে যেসব ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে অতিরিক্ত দলিলাদি চাওয়া হয়েছে সেগুলোও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করে দিতে বলা হয়েছে। এ দিকে অপর এক চিঠিতে পহেলা নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অফিস করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম (অন্তর্ভুক্তি, সংশোধন ও স্থানান্তর) বন্ধ থাকবে। এ কারণে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অফিস খোলা রেখে ভোটার তালিকার সিডি, স্থানান্তর আবেদন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধনের আবেদন নিষ্পন্ন করতে হবে।
৮ অঞ্চলে ইভিএমে মেলা ২৭ অক্টোবর
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন না হলেও আগামী ২৭ অক্টোবর দেশের ৮টি অঞ্চলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেলা আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি। ওইদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার খুলনায়, অন্য কমিশনারগণ পৃথক অঞ্চলে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করবেন। একইভাবে ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক আলাদা আলাদা অঞ্চলে ইভিএমে মেলা উদ্বোধন করবেন।
Discussion about this post