বিডিলনিউজ: দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অধ্যাপক গোলাম আযম, কামারুজ্জামানের রায় ঘোষণার অপেক্ষায়। আবদুল কাদের মোল্লার আপিলের শুনানি চলছে। ২ মে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের শুনানি শুরু হবে। সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর পাল্টে যায় দেশের রাজনীতির চিত্র। রায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন, সংঘাত-সহিংসতা ও পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় প্রায় পৌনে দুইশ’ লোক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীরও ৮ সদস্য নিহত হয়। এসময় পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণের ঘটনাও ঘটে। সরকারের অদূরদর্শিতায় এসব অঘটন ঘটে। এ অবস্থায় গোলাম আযমের রায় ঘোষণার পর দেশ-বিদেশে কি ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে তা নিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে সরকার। বিশেষ করে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে খুবই সমাদৃত ব্যক্তি গোলাম আযম। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর কাজ পাইয়ে দেয়ায় ঘুষ দেয়ার অভিপ্রায়ের মামলা এসএনসি-লাভালিনের দুই কর্মকর্তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কানাডায়। এ মামলার ‘রায়ে’র উপর বর্তমান সরকারের সুখ্যাতি কুখ্যাতি নির্ভর করবে। কারণ কানাডার মামলার রায়ে মহাজোট সরকার দুর্নীতিমুক্ত না দুর্নীতিযুক্ত এ প্রশ্নের ফয়সালা হয়ে যাবে।
’৭১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে জামায়াত-শিবির বিচারের বিরোধিতা করছে। আওয়ামী লীগের বাইরে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে নেতিবাচক কোনো কথা না বললেও বিচারের স্বচ্ছতা দাবি করে। বিচারকের ‘স্কাইপি সংলাপ’ প্রকাশ পাওয়ায় বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। এমনকি বিচারের জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলনরত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরামও বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। একই সঙ্গে তারা বিচার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করতে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেন। বিব্রতবোধ করে বিচারকের পদত্যাগ, ‘স্কাইপি সংলাপে’র দায় নিয়ে বিচারকের পদত্যাগ এবং বিচার চলার সময় নতুন বিচারক নিয়োগের ঘটনাও ঘটে। জামায়াতের মারমুখী অবস্থান এবং ছাত্রশিবিরের জ্বালাও-পোড়াও ভয়ঙ্কর সহিংসতা মোকাবিলা করলেও ‘মাওলানা সাঈদীর ব্যক্তি জনপ্রিয়তাকে আমলে নেয়নি সরকার। জামায়াতের রাজনীতির বাইরে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সারাদেশে ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। দেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত তার লাখ লাখ ভক্ত-আশেকান রয়েছে। সাঈদীর অন্ধ ভক্তরা বিশ্বাস করেন না তিনি (সাঈদী) ’৭১ সালে মানবতাবিরোধী কোনো অপরাধ করতে পারেন। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব) ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীরবিক্রম ও মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনও মিডিয়ায় বলেছেন ‘এই মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সেই দেলোয়ার সিকদার’ নয়। এ অবস্থায় সাঈদী ভক্তরা সরকারের উপর ছিল চরমক্ষুব্ধ। সাঈদীর জনপ্রিয়তাকে অবমূল্যায়ন করায় মামলার রায় ঘোষণার পর সারাদেশে কি ঘটতে পারে সে সম্পর্কে সরকার অন্ধকারে ছিল। সরকারের এ উদাসীনতা আর সাঈদীকে ‘খাটো করে দেখার মানসিকতা’ দেশকে চরম সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার পর ‘রায়ের বিরুদ্ধে’ দেশব্যাপী শুরু হয় সংঘাত সংঘর্ষ। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সারাদেশের সাঈদী ভক্তরাও রাস্তায় নেমে আসে। এ অবস্থায় পুলিশ মারমুখী হওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সাঈদীর প্রতি ভালবাসা মানুষ হৃদয়ে ধারণ এমন পর্যায়ে চলে যায় যে ‘চাঁদে সাঈদীর ছবি’ দেখা গেছে প্রচার করা হলে মানুষ সেটাও বিশ্বাস করে। মানুষের এ বিশ্বাসকে গুরুত্ব না দেয়ায় এতোগুলো প্রাণহানি ঘটে। সাঈদীর মতো দেশে অধ্যাপক গোলাম আযমের জামায়াত-শিবিরের বাইরে এতো ‘ব্যক্তি ইমেজ’ এবং জনপ্রিয়তা না থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তার গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক। দীর্ঘদিন সউদী আরবে থাকা এবং রাজনৈতিক ভাবধারার কারণে দীর্ঘদিন থেকে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গোলাম আযমকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার শুরুর পর বিচার বন্ধের দাবি করেছে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে। এ অবস্থায় গোলাম আযমের রায় ঘোষণার পর সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় তা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক চাপের মুখে পড়ে গেছে সরকার। দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার বাইরে কানাডায় পদ্মা সেতুর দুর্নীতি সংক্রান্ত এসএনসি-লাভালিনের দুই কর্মকর্তার বিচারের রায় কোন দিকে যায় সেটা নিয়েও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সরকার। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেও এ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দল। এমনকি বিশিষ্টজন ও পেশাজীবীরা মহাজোট সরকারের প্রশাসনকে দুর্নীতির প্রশ্রয়দাতা হিসেবে অবিহিত করছেন। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিপ্রায়ের অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক যখন ঋণচুক্তি বাতিল করেন; তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল হোসেনকে দেশপ্রেমিক হিসেবে সার্টিফিকেট দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনও আবুল হোসেন ‘সাদা মানুষ’ হিসেবে সার্টিফাই করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে আবুল হোসেনকে পদত্যাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। দুর্নীতির অভিযোগে মোশাররফ হোসেনসহ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। এ অবস্থায় কানাডায় এসএনসি-লাভালিনের দুই কর্মকর্তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই বিচারের রায়ের উপর বর্তমান সরকারের দুর্নীতিমুক্ত ইমেজ নির্ভর করছে। কানাডার আদালতের মামলার বিচারপ্রক্রিয়া সরকারকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলেছে।সুত্রঃইনকিলাব
Discussion about this post