বিডিলনিউজ: ব্লগে লেখা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বারবার প্রকাশ করে যেসব সংবাদপত্র ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে, তারা বিরত না হলে সরকার ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলে সতর্ক করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে এই অপপ্রচারের পেছনের ‘নাটের গুরু’ উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে’ এসব প্রচারণার পেছনে জামায়াতের সঙ্গে ‘অন্যান্য মহলও’ কাজ করছে।
কতিপয় প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লগ ও ফেসবুকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে প্রকাশিত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রচার, পুনঃপ্রচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একান্ত ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত যে কোনো পর্যায়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কোনো কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। সরকার মনে করে, কমিউনিটি ব্লগ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগত পর্যায়ে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে প্রকাশিত কুরুচিকর বক্তব্য গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর সমাজ বা জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রকাশ বা প্রচার ও পুনঃপ্রচার করা মহানবী (সা.)-এর প্রতি আরও বেশি অবমাননা। ব্লগের ক্ষুদ্র পরিসরে প্রকাশিত এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য গণমাধ্যমে বারবার প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি, উস্কানি দেওয়া শুধু সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতারই পরিপন্থী নয়, আইনের দৃষ্টিতেও অপরাধ।’
মন্ত্রী বলেন, ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব বক্তব্য বা ছবি বা চলচ্চিত্র বৃহত্তর সমাজের অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ বা প্রচার বন্ধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ধর্মীয় বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা বিজ্ঞাপন নীতিমালার পরিপন্থী। এ ছাড়া নিহত রাজীবকে নিয়ে ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত লেখালেখির প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (রাজীব) আস্তিক না নাস্তিক_ তা যাচাই-বাছাই না করে বারবার এ ধরনের সংবাদ প্রচার করা আইনত দ নীয়, যা যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে পাশ কাটানোর শামিল। তাই আমরা এ ধরনের প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানাব।”
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের বিকাশ চাই। সরকার গণমাধ্যমের প্রতি সংবেদনশীল। তাই এ আহ্বান জানাচ্ছি। এর পরও যদি এ ধরনের প্রচার বন্ধ না হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে বলব।’
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের যেসব বক্তব্য মানুষের অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে বা সমাজের ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেগুলোকে ‘ইউটিউবের মতোই’ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ইতিমধ্যে এসব ব্লগ বন্ধ করে দিয়েছে এবং যেসব অভিযোগ আসছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে অন্য কোনো ধর্মীয় দল নিষিদ্ধের বিষয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই এবং এ বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের কী ধরনের সাজা হবে, তা নির্ধারণ করতে প্রয়োজনে আমরা আইন সংশোধন করব।’
এদিকে অপর এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জামায়াতের রাজনীতি ধর্ম ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের রাজনীতি দেশের গণতন্ত্রের পাশাপাশি ধর্ম ও মানবতার জন্যও মারাত্মক হুমকি। তাই এ অপশক্তিকে এখনই রুখে দিতে হবে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত ফাঁসি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু একাডেমী নামে একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, জামায়াত দলগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। এখন আবার দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জামায়াতকে কীভাবে নিষিদ্ধ করা যায়, সরকার এ আইনগুলো খতিয়ে দেখছে।
তিনি বলেন, সারাদেশ আজ শুধু যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির জন্য সোচ্চার নয়, একই সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতিও নিষিদ্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ। শাহবাগের এ আন্দোলন কয়েকজন ব্লগারের নয়, সারা দেশবাসীর।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্বশান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুুল মান্নান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়েজউদ্দিন মিয়া প্রমুখ।
Discussion about this post