অনেক নেগেটিভ সংবাদ চারিদিকে । নারী নির্যাতনের অনেক খবর ছুটে আসে প্রায়ই । আমরা হতাশ হই । অনেকে অনেক ধরণের কথা বলে । অনেক দোষ খুঁজে বেড়ায় নারীর, পুরুষের । কেউ কেউ আবার সামাজিক অবস্থার । এর মধ্যেও অনেক জাগরণ আছে, অনেক ত্যাগ আছে আর এই ত্যাগ, জাগরণ আছে বলেই নারীরাও ভালো আছে । নির্যাতন, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক অধিকার বঞ্চনার পরও এমন কিছু সংবাদ আছে যা আমাদেরকে আশা জাগায় । সেদিন গ্রামের বাজারে রাত দশটার সময় দাঁড়িয়েছিলাম । একজন বৃদ্ধ আমারই স্বজন দাঁড়িয়ে আছে বাজারের এক কোণে । তাকে দেখে আমি এগিয়ে গেলাম । গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “চাচা এত রাতে কার জন্য অপেক্ষা করছেন ?” তিনি আমাকে বললেন তোর চাচীর জন্য । আজকে দ্বিতীয় সিফটের ডিউটি ছিল । খুব অবাক হয়ে আমি বললাম এমন অপেক্ষা করতে আপনার ভালো লাগে? তিনি আমাকে বললেন তোর চাচী আমার পুরো সংসার ধরে রেখেছে । আমার কোন ডর নাই আমার পোলা যদি আমারে নাও খাওয়ায় আমার তোর চাচী আছে । ট্যাকার কোন চিন্তা নাই এমন বউ কয়জনের আছে !
আমার এই চাচীকে আমি দেখছি সেই ছোটবেলা থেকে । তিনি পোষাক কারখানায় চাকুরী করছেন এবং সংসারটাকে আগলে রেখেছেন । বাড়িতে অভাব আসলে নিজে কিস্তির টাকা তুলে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন । কোন সময় বলেননি আর পারবোনা । তার সম্মান তার স্বামীও রেখে যাচ্ছেন এখনও । একটি খারাপ ঘটনা দ্রুত যেভাবে চলে আসে কিন্তু এই ঘটনাটি কিন্তু মানুষ জানেই না । এই ঘটনায় নারী পুরুষ উভয়েই সম্মানিত ।
আরেকটি ঘটনা । গত কয়েকদিন আগে গাজীপুরের হোতাপাড়ায় অটো করে যাচ্ছিলাম । দেখলাম অটো চালকের ড্রাইভার বুকে সন্তানকে ঘুম পারিয়ে রেখেছেন । খুব মমতা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এই ছেলেটির মা নেই ? তিনি আমাকে উত্তর দিলেন হ্যা মা তো আছে । আমি বললাম তবে ওকে নিয়ে আপনি ড্রাইভ করছেন এবং সে ঘুমিয়ে আছে এমন কেন ? সে আমাকে বলল একজনের আয়েতো ভাই সংসার চলেনা । বাচ্চার মা গার্মেন্টেসে চাকুরী নিতে আজ ইন্টারভিউ দিতে গেছে । বাচ্চাও একা থাকতে চাইছিলোনা । তাই তাকে নিয়েই গাড়ি চালাচ্ছি । আমি তাকে আরও কথা জিজ্ঞেস করার পাশাপাশি জিজ্ঞেস করেছিলাম আচ্ছা অনেকেইতো বউকে চাকুরী করতে দিতে চায় না আপনি যে দিলেন ? সে আমাকে বলছিল চাকুরী করতেতো দেইনি দিয়েছি সংসারের দায়িত্ব এবং সে সেটা নিয়েই আনন্দিত এবং আমিও । শুনে আমি ভাবলাম প্রত্যেকটি ঘরেই নারীরা নির্যাতন হচ্ছে এমন চিত্র যা প্রায়ই প্রকাশিত হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য নয় । আমি যেখানে চাকুরী করি সেখানেও নারীরা একই সাথে তার স্বামীর সাথেই চাকুরী করছে । তারা ভালো আছে ।
এবার একটু ঘরের দিকে আসি । মাকে প্রায়ই বাবা বলতেন তুমিই আমার একাউন্টস ম্যানেজার । বাবা সকালে অফিসে যাওয়ার সময় যখন বের হতেন তার আগেই আমাদের স্কুলে যাওয়ার ব্যাগ থেকে শুরু করে বাবার অফিসে যাওয়ার জন্য সমস্ত কাজ রেডি করে দিতেন । ভোর থেকে শুরু করে একেবারে রাত বারোটা পর্যন্ত একাধারে কাজ করে যাওয়ার পরও মার মুখে হাসি থাকতো । কোন রকমের ক্লান্তি বা অবসাদ ছাড়াই বাড়ির একজন মানুষ যেভাবে সব কাজ শেষ করতেন তা আজও মনে লেগে আছে ।
আমার স্ত্রীও চাকুরী করেনা । সে উচ্চ শিক্ষিতা একজন মানুষ । তাকে দেখি সারাদিন ধরে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকতে । কিন্তু তার একটাই কথা আগে নিজ সন্তানকে সঠিক পথ দেখানো । আমার মেয়ের লেখিকা হয়ে ওঠার পেছনের গল্প বলতে গেলে সব কৃতিত্বইতো যাবে তার মায়ের দিকেই । আমি নিজেই দেখি কিভাবে সে তার মেয়েকে বোঝায় কেন জীবনে শিক্ষাগ্রহন করতে হবে, কেন স্বপ্ন দেখতে হবে এই কথাগুলো ।
অনেক না পাওয়া, অনেক নির্যাতনের ঘটনা আমরা দেখি তবুও নারীরা ভালো আছে, ভালো থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং সংসারের সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য মূল ভারটা এখনও নারীরাই নিয়ে থাকে । নারী দিবসে সকল নারীর প্রতি রইলো শুভেচ্ছা, সম্মান ও ভালোবাসা । জয়ী হয়ে উঠুক সকল নারীরা, সকল পুরুষেরা সর্বপরি সকল মানুষেরা তবেই সুন্দর হয়ে উঠবে আমাদের সমাজ, দেশ ।
সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
ও রসায়নবিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post