নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৫ তলা ভবনের দশম তলার বারান্দার বাইরে কার্নিশে দাঁড়িয়ে গ্রিল ধরে ঝুলে থাকা কিশোরী খাদিজাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। রাজধানীর কাকরাইলের বাসা থেকে উদ্ধারের পর মঙ্গলবার তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। সেখানে তাকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে সে বারান্দায় ঝুলে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করেছে। সে ওই বাসায় কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়নি বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম বুধবার গণমাধ্যমকে জানান, খাদিজাকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদেতাকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা তা বারবার জানতে চাওয়া হয়েছে। সে কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা পুলিশকে জানায়নি। সে কেন গ্রিলে ধরে ঝুলে ছিল—জানতে চাইলে আরেক গৃহকর্মী হেলেনার সঙ্গে তার ঝগড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে। নারী পুলিশ সদস্য দিয়েও নানাভাবে ওই বাড়িতে কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে কিনা, তাও জানতে চাওয়া হয়। তবে খাদিজা নির্যাতনের শিকার হয়নি বলে জানিয়েছে।
তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে খাদিজা পুলিশকে বলেছে যে, সে দেড় বছর ধরে এই বাসায় আছে। সুনামগঞ্জ থেকে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে এ বাসায় কাজে এসেছিল। তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। বাবা-মা উভয়েই আবার বিয়ে করেছে। এমন অবস্থায় সে এখানে কাজ করতে এসেছিল। ওই বাসার ছেলেমেয়েরাও তার সঙ্গে খারাপ কিছু করেনি। সেখানে সে ভালোই ছিল। গতকাল আরেক গৃহকর্মী হেলেনা কাপড় কাচার কাজ করার সময় সে দাঁড়িয়ে সেটি দেখছিল। তখন হেলেনা তাকে বকাঝকা করতে থাকে। এর পর সে এসি মেরামতের জন্য থাকা বারান্দার পকেট গেট দিয়ে বের হয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়। আশপাশের লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে গৃহকর্ত্রী সেখানে যান। পরে সে নিজেই বাসায় ওঠে আসে।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সহকারী কমিশনার সুরঞ্জনা সাহা জানান, খাদিজাকে মঙ্গলবার রাতে ওই সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। সে মানসিকভাবে আতঙ্কের মধ্যে আছে। এ অবস্থায় সাধারণত কোনো ভিকটিমই কিছু বলতে চায় না। ভয়ের মধ্যে থাকে। খাদিজা সুস্থ হলে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অপর গৃহকর্মীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে সে কার্নিশে নেমেছিল বলে জানিয়েছে। সুনামগঞ্জে তার পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা এলে তাদের হাতে তাকে তুলে দেয়া হবে। তবে, মেয়েটির বয়স কম হওয়ায় পুলিশ তাকে সেখানে রাখাটা নিরাপদ মনে করছে না। তবে আবারও জিজ্ঞাসাবাদে যদি তার ওপর কোনো ধরনের নির্যাতনের তথ্য পাওয়া যায়, তবে ওই পরিবারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত রাজধানীর কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির পাশে ১৫ তলা একটি ভবনের দশম তলার বারান্দার কার্নিশে দাঁড়িয়ে গ্রিলে ঝুলেছিল এক কিশোরী। বহুতল ভবন হওয়ায় প্রথমে বিষয়টি খেয়াল করতে পারেননি পথচারীরা। পরে মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে সেখানে উৎসুক জনতার জটলা বাঁধে। খবর পেয়ে আসে পুলিশও। ততক্ষণে বারান্দার গ্রিলের জানালা খুলে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন গৃহকর্ত্রী।
গৃহকর্ত্রী লাভলী রহমান পুলিশকে জানান, খাদিজা ও হেলেনা নামে তার দুই গৃহকর্মী রয়েছে। দুজনের মধ্যে ঝগড়ার পর খাদিজা পালাতে চেয়েছিল। তাকে উদ্ধারের পর তিনি স্বজনদের খবর দিয়েছেন।




Discussion about this post