নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সোনাগাজী থানার ওসি (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ ইনভেস্টিগেটিভ ব্যুরোতে (পিবিআই) মামলা স্থানান্তর করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেনী জেলা পুলিশ সুপার এএসএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখন থেকে স্পর্শকাতর এ মামলাটি তদন্ত করবে পিবিআই। ফেনীর পিবিআইপ্রধান এএসপি মনিরুজ্জামানকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিকে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার এজহারভুক্ত আসামি জোবায়ের আহমেদকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার জোবায়ের সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতলি এলাকার আবুল বাশারের ছেলে। আর পপি অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর সহপাঠী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক কামাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তারা জোবায়েরকে গ্রেফতার করেন। পরে রাতেই সোনাগাজী পৌর এলাকার চনচান্দিয়ার বাসা থেকে পপিকে আটক করা হয়।
এ নিয়ে মামলায় এজাহারভুক্ত তিনজনসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হলো; যাদের মধ্যে সাতজন কারাগারে এবং বাকিদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ওই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে সোনাগাজী থানায় সোমবার দুপুরের পর মামলা করেন তার ভাই। ওই দিন রাতেই মামলার এজাহারে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ আটজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে পুলিশ। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও চারজনকে।
প্রসঙ্গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। নুসরাত জাহান ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। তাকে লাইফসাপোর্ট দেয়া হয়েছে। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে মঙ্গলবার তার অস্ত্রোপচারও হয়। অস্ত্রোপচারের পরও তাকে নিয়ে শঙ্কা কাটেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে।




Discussion about this post