ডেস্ক রিপোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়ার সময় তিনি একথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন: রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি অঙ্গ যদি দূর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত হয় তাহলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে পারে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অপর দু’টি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগ ও ব্যক্তিকে অবশ্যই বারবার স্মরণ করতে হবে যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক সভ্যতা পরাজিত হবে।
ন্যায়বিচার জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া জনগণের প্রতি দয়া নয় বরং এটি জনগণের সহজাত অধিকার উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন: এই অধিকারকে কেবল সাংবিধানিক অধিকার বলে সাব্যস্ত করতে রাজি নই। ন্যায়বিচারের সৌন্দর্য এবং আইনের রাজকীয়তা প্রকৃতপক্ষে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন বটে। সে কারণে দেশের সকল বিজ্ঞ বিচারককে নিরপেক্ষতার সাথে, নির্মোহ হয়ে, নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সহজাত অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
বিচার বিভাগে কোনো দুষ্ট ক্ষতকে ন্যূনতম প্রশ্রয় দেয়া হবে না উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন: সুপ্রিম কোর্টের সকল শাখাসমূহের অস্বচ্ছতা, অনিয়ম, অলসতা এবং অযোগ্যতাকে নির্মূল করতে যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণে আমি সকলকে পাশে পাবো এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যারা নিয়ামক শক্তি রয়েছেন তারা সকলে আমাদের প্রতি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন এটা আমার একান্ত আবেদন। ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয় এমন সকল কারণ চিহ্নিত করে তা দূর করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর হবো।
দেশের অধস্তন আদালতে মামলা জট নিরসন তথা বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ৮টি বিভাগে একজন করে হাইকোর্টের বিচারপতিকে প্রধান করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন: প্রতিমাসে আমি তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করবো। পুরাতন মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে নিষ্পত্তির বিষয়ে সুপারভাইস এবং মনিটরিং করা হবে।
বিচার বিভাগকে নিয়ে আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে যেকোনো গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন: আপনারা যারা বিচার বিভাগের আলোচক ও সমালোচক বন্ধু রয়েছেন তারা বিচার বিভাগের সমস্যা উপলব্ধি করবেন। নিঃসংকোচে আলোচনা বা সমালোচনা করবেন, তবে রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর কল্যাণকামীতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদালত কক্ষে আয়োজিত এই সংবর্ধনায় উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ, আ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার রমনাথপুর গ্রামের আবদুর গফুর মোল্লা ও নূরজাহান বেগম দম্পতির সন্তান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে খোকসা জানিপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। আইএসসি পাস করেন ১৯৭৪ সালে সাতক্ষীরার সরকারি পিসি কলেজ থেকে। এরপর বিএ পাস করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে। আর এমএ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। পরবর্তীতে ধানমন্ডি ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন।
এরপর ১৯৮১ সালে ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। ২০০৯ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। অবশেষে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে গত ৩১ ডিসেম্বর শপথ নেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তার বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী আপিল বিভাগের বিচারপতি থেকে অবসরে গিয়েছেন।
Discussion about this post