ডেস্ক রিপোর্ট: ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বিএস২১১ ফ্লাইট বিধ্বস্ত হওয়ার দুর্ঘটনার জন্য নিহত পাইলট আবিদ সুলতানের ওপর দোষ চাপিয়েছে নেপাল।
এ ঘটনা তদন্তে নেপাল সরকারের পক্ষ থেকে যে তদন্ত টিম গঠন করা হয়, তাদের দেয়া এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পাইলট আবিদের মানসিক হতাশা ও তা থেকে নেয়া একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হয়েছে।
নেপালি গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট তদন্ত প্রতিবেদনের ওই কপি হাতে পেয়েছে দাবি করে এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু যেতে এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে পাইলট আবিদ ‘বেপরোয়া’ আচরণ করেছেন। এমনকি ককপিটে বসেই অনবরত ধূমপান করেছেন।
গত ১২ মার্চ ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিএস২১১ ফ্লাইটের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হলে ৫১ জন মারা যায়। এর মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি।
তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট বলছে, ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ব্যাপকভাবে মানসিক হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ছিলেন এবং এর ফলশ্রুতিতে তিনি একের পর এক যে ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন তার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ফ্লাইটের শুরু থেকেই আবিদ সুলতান অস্বাভাবিক আচরণ করেছেন দাবি করে নেপালি তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, অবতরণের সময়ের ছয় মিনিট আগে পাইলট আবিদ সুলতান ত্রিভুবনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে তার উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো ও লক করার কথা জানিয়ে বলেন, ‘গিয়ারস ডাউন, থ্রি গ্রিনস।’
কিন্তু পরে সহকারী পাইলট পৃথুলা রশিদ যখন অবতরণের আগে শেষবারের মতো সব প্রস্তুতি মিলিয়ে দেখেন, তখন দেখা যায় ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো হয়নি। এর কয়েক মিনিটের মাথায় উড়োজাহাজটি রানওয়ে ছেড়ে পাশে বিধ্বস্ত হয় এবং আগুন ধরে যায়। ওই সময় উড়োজাহাজে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু ছিল।
তদন্তকারীরা বলেছেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক এ পাইলট সংস্থাটির কাছে তার ধূমপানের কথা কখনও প্রকাশ করেননি। যার কারণে তাদের (তদন্তকারীরা) কাছে মনে হয়েছে, সুলতান ককপিটে ব্যাপক মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন।
তারা বলছেন, ‘ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারের কনভার্সেশন বিশ্লেষণ করে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে, তিনি (আবিদ) ব্যাপক মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে তাকে অবসন্ন ও ক্লান্ত বলেও মনে হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেকর্ড থেকে জানা যায়, অপর সহকারী নারী পাইলটের সঙ্গে আবিদ অপমানজনক কথাবার্তা বলেন। আর তার নিষ্ক্রিয় শ্রোতা ছিলেন রশিদ।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ফ্লাইটের এক পর্যায়ে পাইলট মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং বলেন, ‘তিনি খুব আপসেট এবং এক নারী সহকর্মীর আচারণে কষ্ট পেয়েছেন’ এবং ‘একমাত্র সে কারণেই তিনি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’।
প্রসঙ্গত, ওই ঘটনার একদিন আগেই চাকরি ছাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান। যদিও তিনি লিখিতভাবে কিছু জানাননি। তবে সহকারী পাইলটদের প্রশিক্ষণ শেষ করতে আরো তিন মাস ওই কোম্পানিতে (ইউএস-বাংলা) চাকরি করার কথা বলেন তিনি।
নেপালি তদন্দকারীদের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএস-বাংলা যখন পাইলট আবিদকে নিয়োগ দেয় তখন তার মেডিকেল হিস্ট্রি যাচাই-বাছাই করেনি।
তবে এসব ব্যাপারে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার ও মুখপাত্র কামরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বলে জানিয়েছে কাঠমান্ডু পোস্ট।




Discussion about this post