মোঃ আল-ইমরান খান:
কিছুদিন আগে পত্রিকার পাতায় একটি খবর দেখে খুব মর্মাহত হলাম- নারায়ণগঞ্জে ঘুষের টাকা দিতে না পারায় যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করেছে পুলিশ। এ নিয়ে একটা রিটও হয়েছে জেনেছি কিন্তু মোশন এখনো হয়নি বোধ হয়। যাহোক, আজকে এ প্রকার কিছু আতঙ্কিত হবার মত তথ্য দিয়েই লেখা শুরু করবো। বিষয়টিকে প্রোভোকেটিভ ওয়েতে নিবেন না, প্লিজ। পুরো লেখাটি আগে পড়ুন…
ঘটনা চিত্র এক. ১৯৯৮ সালের ঘটনা অভিযোগ ওঠে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য কর্তৃক রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে হত্যা করা হয় যার মূল হোতা ছিলেন সহকারী কমিশনার (এসি) আকরাম। এ বিষয় নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছিল। নিন্ম আদালতে এসি আকরামের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে হাইকোর্টে আসামীগণ খালাস পান।
ঘটনা চিত্র দুই. ২৯/৩০ মে, ২০১২ অভিযোগ করা হয় ঢাকার নিন্ম আদালত প্রাঙ্গনে বিচার প্রার্থী এক তরুণীর পুলিশ কর্তৃক শ্লীলতাহানি ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় আইনজীবী সহ প্রতিবাদ কারীরা পুলিশি নির্মমতার শিকার হন।
ঘটনা তিন. ২৮ এপ্রিল, ২০১১ –এর ঘটনা মানুষটি ছিলেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একজন এএসপি। পত্রিকার সংবাদে জানা যায়, বাংলাদেশে আগত থাইল্যান্ড থেকে আসা এক বিদেশী মহিলার হ্যান্ডব্যাগ থেকে মোবাইল চুরি করেছিলেন বিমান বন্দরে দায়িত্বে থাকা এএসপি মহিউদ্দিন ফারুক।অনেক ঘটনা-রটনা শেষে চুরি করা মোবাইল ফেরত দিতেই মহিউদ্দিন ফারুকের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছিলেন বিদেশীনি। পরবর্তীতে এ ঘটনা নিয়ে আর কোন কিছু হয়েছিল কিনা জানি না।
ঘটনা চার. মাত্র কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম ঢাকা কারাগারে এক মহিলা কয়েদী গর্ভবতী হয়েছেন; অভিযোগে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কয়েক জেল পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বলে পত্রিকার মধ্যমে জানতে পেরেছি।
ঘটনা পাঁচ. পুলিশ হেফাজতে ধর্ষন ও হত্যার কথা ও আমরা অনেক শুনেছি। ইয়াসমিন হত্যা মামলা তার বড় প্রমাণ। এরুপ ঘটনা যে শুধু ইয়াসমিনের ক্ষেত্রেই ঘটেছে এমন না দেশে বিদেশে পুলিশের এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা আমাদের অজানা নয়।
ঘটনা ছয়. এক ঘটনায় পাবনায় কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও সরকারি কর্মকর্তাদের মারধর করেছিলেন ক্ষমতার লেবাসধারী কিছু সুযোগ সন্ধানী নব্য ক্ষমতাসীন নামধারী কিছু কুলাঙ্গার। আলোচিত এ ঘটনায় মামলা করেছিলেন দুজন ম্যাজিস্ট্রেট। দ্রুত বিচার শেষে এ মামলার রায় হয়। কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে ৩১ আসামির সবাই খালাস পান।
ঘটনা চিত্র আর লম্বা করবো না, এগুলো ছাড়াও পুলিশের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যাবহার, ডাকাতি সংগঠন ইত্যাদি মারাত্নক ফৌজদারী অপরাধে জড়িত থাকার মত অভিযোগও নেহায়েত কম না। পুলিশ জনগণের বন্ধু; কিন্তু প্রায় ১লক্ষ পঞ্চাশ হাজার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সকলে যে পুলিশের বন্ধু-এ কথা আমি মানতে পারবো না বরং হিসাব করলে দেখা যাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের বন্ধু নির্ধারণী সমীকরণে ভুল হবে। লেখা দেখলে মনে হবে সব শত্রুতা যেন পুলিশের সাথে; কিন্তু না বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে সঙ্কট উত্তরনী একটি উপায় হিসাবে আমার এ লেখার প্রয়াস। এ লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অনুসন্ধান আমি এখানে করবো—
ক। প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুলিশের এ ইমেজ সংকটের জন্য দায়ী কি?
খ। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণই বা কিভাবে সম্ভব?
দায় দায়িত্বের প্রশ্নে পুলিশ অর্থ কি এবং প্রকৃত অর্থে সভ্য সমাজে তাদের দায় দায়িত্বই বা কি?
অক্সফোর্ড ডিকশনরী’তে পুলিশের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে তা হল- ‘একটি অফিসিয়াল সংগঠন যার কাজ জনগণকে আইন মান্য করানো সহ আপরাধকে প্রতিরোধ,নিয়ন্ত্রণ ও সমাধান করা।‘ উপরে বর্ণিত এই সংজ্ঞা ছাড়াও পুলিশের নানাবিধ সংজ্ঞা আপনারা হয়ত খুজে পাবেন। কিন্তু অক্সফোর্ড ডিকশনরী’তে প্রদত্ত এই সংজ্ঞার মধ্যে পুলিশের দায়িত্বের একটি রুপরেখা পাওয়া যায়-যার কারণে এই সংজ্ঞা নির্ধারণ। যাইহোক, International Code of Enforcement Ethics-এ পুলিশের যে দায়িত্ব সম্পর্কে বলা আছে তা হল- “ একজন আইন প্রয়োগকারী আফিসার হিসাবে পুলিশের প্রধাণ দায়িত্ব হল মানব জাতির সেবা করা; জীবন ও সম্পত্তির রক্ষা করা; নিরপরাধকে প্রতারকের, দুর্বলকে শোষক বা ভীতি প্রদানকারীর, শান্তিপূর্ণ অবস্থানকারীকে সন্ত্রাসী বা বিশৃংখলাকারীর হাত থেকে রক্ষা করা; প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনতা, সাম্য ও ন্যায় বিচারের সাংবিধানিক অধিকারকে সম্মান করা।”
V.B. Malleswari রচিত Police Reforms: Global Perspectives (2007) পুস্তকে পুলিশের যে প্রধান দায়িত্বের কথা বলা আছে তা হল জনশৃংখলা রক্ষা। এছাড়া সমাজের প্রতি পুলিশের অন্য যে দায়িত্বের কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন তা হলঃ ১, জনগনের জীবন ও সম্পত্তির রক্ষা (Protection and Preservation); ২, একতাবদ্ধ ও সুশৃংখলার সহিত জনগণের পাশে থাকা (Integration and Unity); ৩, আইন শৃংখলার উন্নয়ন ও জনগণের মধ্যে আস্থার জায়গায় বিপুল উন্নতি সাধন করা (Development and Progress)। এছাড়া সংবিধানে বর্ণিত নাগরিকের মৌলিক অধিকারের সমুন্নত করন।
মোটা দাগে পুলিশের দায়িত্ব নিন্ম বর্ণিত ক্ষেত্রে সংযুক্ত করা যায়- ক। আইন শৃখলা রক্ষা ও জন নিরাপত্তা বজায় রাখা; খ। জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা করা ও তাকে আইনের মুখোমুখি করা; গ। আদালতে আসামীর বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণের জন্য সুষ্ঠুভাবে তদন্তকার্য সমাধা করা; ঘ। পাবলিক অনুষ্ঠাদি পালনে সহায়তা করা ও ভি আই পি প্রটেকশন।
পুলিশ জনগণের বন্ধুঃ ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’- এই শ্লোগানকে ধারণ করেই মূলত পুলিশ একটি সু-শৃংখল বাহিনী হিসাবে জনগণের পাশে রয়েছে যদিও পুলিশের বন্ধুত্বের পরিচয় নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের রয়েছে সংশয়। তারা পুলিশকে আতঙ্কের প্রতিমূর্তি হিসাবেই অধিকতর কল্পনা করেন। যাহোক, বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতিতে, দেশের মধ্যে চলমান অস্থিরতায় মানুষের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে, হরতাল-অবরোধে জনসম্পত্তি রক্ষায় বা দেশের মধ্যে মহামারী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগে পুলিশের সরব উপস্থিতি ও সহযোগিতার কথা মানুষ অস্বীকার করতে পারবে না। এছাড়া আইন শৃংখলা রক্ষা সহ, বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন, ভিআইপি ভ্রমণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে ও পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালে পুলিশের উপর বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক অতর্কিত হামলার পরেও জীবনের মায়া না করে হরতাল- অবরোধ সহ অন্যান্য পরিস্থিতিতে আমাদের জীবন মাল রক্ষার জন্য পুলিশ যে ভূমিকা পালন করে চলেছে তা এক কথায় অতুলনীয়।
প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুলিশের দুর্বল ইমেজের জন্য কে বা কি দায়ীঃ
একটি লেখায় দেখেছিলাম, মানুষ সেই বৃটিশ সাল থেকে পুলিশকে ঘৃণা করে, তারা পুলিশকে তাদের শত্রু ভাবে। মিডিয়া পুলিশকে কটাক্ষ করে, তাদের সমালোচনা করে, আইনজীবীরা পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ জানায় আবার জজ সাহেবরা ও পুলিশকে আপদস্ত করেন। আবার আমিও আমার লেখা শুরু করেছি পুলিশের দোষ ত্রুটি উল্লেখ পূর্বক। প্রশ্ন হল—এত প্রতিষ্ঠান থাকতে শুধু পুলিশ বাহিনী অপরাধে জড়াবে কেন? অস্ত্রতো সেনা বাহিনী বা বিজিবি’র কাছে ও আছে। তাহলে তাদের ইমেজ সংকটের জন্য কি দায়ী? এর উত্তরে দুটি বিষয়কে আমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে পারি—১। প্রতিষ্ঠান হিসাবে, এর আইন হিসাবে পুলিশ যুগোপোযোগী না; এবং ২। বিভিন্ন ব্যাক্তি ও ক্ষমতাবান কর্তৃক পুলিশকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যাবহার করার অভিলাস। এছাড়া,৩। পুলিশের জবাবদিহিতার জায়গা ও আমাদের কাছে স্পষ্ঠ নয়। এ লক্ষ্যে সামগ্রিক পুলিশ কাহামোতে ঘুন ধরেছে।
তারপরে নিন্ম বেতন, অসম বাসস্থান সুবিধা, পুলিশ অফিসিয়ালদের সুযোগের অভাব, নন- ফিজিবল কর্ম পরিবেশ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব কর্তৃক পুলিশের প্রতি অসাদাচরণ ও ক্ষমতা বহির্ভূত পন্থায় ব্যবহার ইত্যাদি কারণে পুলিশ তার কাজের ক্ষেত্রে চরমভাবে অসন্তুষ্ট যার প্রতিফলন পড়ে সাধারন জনগণের উপর দিয়ে।
ফৌজদারী প্রশাসন ব্যাবস্থায় পুলিশি কাঠামোতে কি কি সমস্যা রয়েছে??
সমস্যাঃ
১। পুলিশের সব সমস্যার অনেকাংশ লুকিয়ে আছে মান্ধান্তার আমলের বৃটিশদের রচিত পুলিশ আইন,১৮৬১ ও পি আর বি-এর মধ্যে। আমাদের মনে রাখতে হবে উল্লিখিত পুলিশ আইনটি করা হয়েছিল ১৮৫৭ সালের বৃটিশ বিদ্রোহের ফলশ্রুতিতে। যাতে করে সরকার বিরোধী সকল আন্দোলন সংগ্রামকে শক্ত হাতে দমন করা যায় এমন লক্ষ্য নিয়ে পুলিশ আইন হলেও আমরা আজো আমরা সেই দমন আইনের সাক্ষর বহন করে চলেছি।
২। প্রথম আলো আয়োজিত এক গোল টেবিলের আলোচনায় পুলিশের এক কর্তার সুত্র ধরেই যদি বলি, মামলা দায়ের, তদন্ত ও বিচার-প্রক্রিয়ার ভেতরে নানা ধরনের সমস্যা আছে। যেমন—মামলার বিবরণ তৈরি করা হয় মৌখিক সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে। তদন্তও হয় সেভাবেই। খুব কম ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়। সুতরাং মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা ও দক্ষতা নিয়ে প্রায়শঃই সচেতন মহল প্রশ্ন তোলেন।
৩। আইনের শাসনের অন্যতম মূল বক্তব্য হল দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মূল অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরে আর নিরীহ জনগণ আহেতুক মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে হয়রানীর শিকার হন। সরকারি কৌঁসুলিদের বক্তব্য, পুলিশ ইচ্ছা করে মামলা দুর্বল করে দেয়। আবার পুলিশ বলছে, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের সদিচ্ছার অভাব এবং সাক্ষী না পাওয়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার বড় কারণ।
৪। অনেকের অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলার তদন্ত নির্ভর করে রাজনৈতিক প্রভাবের ওপর(যে যখন ক্ষমতায় থাকে)। পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ এস এম শাহজাহান বলেন, রাজনৈতিক কারণে বিশেষ কিছু মামলা ছাড়া অন্য মামলার তদন্ত হয় গতানুগতিক ধারায়। এতে বেশির ভাগ লোক সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ ব্যস্ত থাকে নানা ধরনের কাজ নিয়ে। তারা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন যথাযথভাবে তৈরি করতে পারছে না।
৫। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় তদন্ত কর্মকর্তার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতের অধীন কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নন। ফলে তদন্তে কোনো গাফিলতি হলে আদালত সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
৬। পুলিশের জবাবদিহিতার অভাব তথা ঘুষ, দুর্ণিতির কথা সকল মানুষের জানা। পত্রিকার এক রিপোর্টের মাধ্যমে জানলাম, ‘ভাল’ থানায় বদলি হয়ে আসতে ৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এই ‘বিনিয়োগে’র টাকা অনেক ক্ষেত্রে নিরীহ মানুষের কাছ থেকেই তুলতে হয়। এমনকি কয়েদীরা পর্যন্ত বাদ যায় না।শীর্ষ কর্মকর্তারা নিয়মিত নির্ধারিত হারে ঘুষ না পেলে পদে পদে থানার কর্মকর্তাদের হয়রানি করে থাকেন। পত্রিকায় ওই তথ্যে ওসিদের বরাতে বলা হয়েছে, ৯৫ ভাগ এসপি, ডিআইজি পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঘুষখোর।জানা গেছে রাজধানীতে বদলি হতে ওসিকে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা এবং ‘ভাল থানা’ হলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত রেট ওঠে। কনস্টেবলদের বদলি হতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা উেকাচ দিতে হয়। অবশ্য, প্রধাণ কার্যালয় থেকে মনিটরিয়েংর কারণে ঘুষের বিষয়টি আগের চেয়ে কম বলে ওই তথ্যে জানা গেছে।
সমাধানঃ
আইনের মূল নীতি হল দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্রুটি জনক তদন্ত ও মামলা পরিচালনার জন্য আইনের এই মহান নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। বর্তমানে যে নীতিটি আমাদের কাছে অভিজ্ঞতালব্ধ সেটি হল অপরাধীর নিস্কৃতি ও নিরপরাধীদের হয়রানী। ক্ষেত্রেবিশেষ নিরপরাধ ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন জেল হাজতে আটক থাকতে দেখাও বোধ করি আপনাদের নিকট অবাক কারী কোন ঘটনা নয়। পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের নিম্ন আদালতে ২০১০ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ফৌজদারি মামলার ৭৬ শতাংশই সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে টেকেনি। তাই অনেক আসামি খালাস পেয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।অপরাধ নিয়ে পুলিশের বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ২০১০ সালে আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া ফৌজদারি মামলার মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে আসামির সাজা হয়েছে। ২০০৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৩ শতাংশ। ৭৭ শতাংশ আসামির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। থানায় দায়ের মামলার মধ্যে তদন্ত করে ৬৬ শতাংশের অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
তদন্ত এবং দক্ষভাবে মামলা পরিচালনা- এই দুয়ের উপর একটি ফৌজদারি মামলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। মামলার তদন্ত যদি দুর্বল হয় তাহলে মামলা পরাজয়ের এক ধাপ এগিয়ে থাকলো। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, টাকার বিনিময়ে পুলিশ কর্তৃক মামলা দুর্বল করা বা সরকারী কৌসুলীদের টাকার বিনিময়ে অনেক ক্ষেত্রে ম্যানেজ করে অপরাধীরা প্রায়শঃই পার পেয়ে যায় যা আইনের শাসনের পথে প্রতিবন্ধক।
যাইহোক, আইনের শাসনের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখা পূর্বক পুরো পুলিশ প্রশাসনের কালিমা লেপনের জন্য কিছু সুপারিশ আপনাদের খেদমতে পেশ করতে চাই—
১। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পুলিশের শৃংখলা শাখা থেকে তদন্ত শাখাকে জরুরী ভিত্তিতে পৃথক করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। যদিও এ লক্ষ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ (পিবিআই) নামে একটি পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন বলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে।পুলিশের প্রস্তাব অনুযায়ী পিবিআইয়ের পরিধি হবে দেশব্যাপী। একজন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এর প্রধান হবেন। গোটা দেশকে বৃহত্তর ১৯ জেলা ও আট মহানগরে (মোট ২৭টি অঞ্চল) ভাগ করা হবে। তিনি বলেন, পিবিআইয়ের প্রতিটি অঞ্চলে একজন করে পুলিশ সুপার এবং প্রতি জেলায় একজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা জেলা পুলিশ সুপারের অধীনে থাকবেন না, সংস্থা তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করবে। এ সংস্থা থানায় দায়ের করা সব নিয়মিত মামলার তদন্ত, তল্লাশি, গ্রেপ্তার ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করবে। আর থানাগুলো এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, মামলা দায়েরসহ অন্যান্য কাজ করবে। তিনি বলেন, এ তদন্ত ইউনিট গঠন করা গেলে মামলার সাজার হার অনেক বেড়ে যাবে। এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল উদ্যোগ। তবে এর আশু বাস্তবায়ন আমরা প্রত্যাশা করি।
৩। অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি)’র দায়িত্ব হবে তাদের তফসিলভুক্ত অপরাধ তদন্ত করা। বর্তমানে বেশির ভাগ মামলা নির্ভর করে মৌখিক সাক্ষ্যের ওপর। শুধু আসামির স্বীকারোক্তি ও মানুষের মুখের বক্তব্যকে ভিত্তি করার কারণে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। উন্নত দেশে বস্তুগত সাক্ষ্য, যেমন—ডিএনএ প্রতিবেদন, অডিও, ভিডিও, হাতের ছাপ, পায়ের ছাপ, জাল নোট, ব্যবহূত অস্ত্রের গায়ের ছাপ পরীক্ষা, রক্তের ছাপ ও রাসায়নিক পরীক্ষা খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। এসব প্রমাণ কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
৬। পূর্বে ফৌজদারী কার্যবিধিতে মামলা গ্রহণ করা হবে কি না, তা বিবেচনার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৬ থেকে ২২০ পর্যন্ত ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে এসব ধারা বাতিল করা হয়। এখন বিচারকদের মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং ম্যাজিস্ট্রেটকে এ বিষয়ে পুনরায় ক্ষমতায়িত করা যায় কিনা এ বিষয়ে পুনঃ বিবেচনা করা যেতে পারে। (8/1/2011-prothom alo)
৭। যেহেতু ফৌজদারী অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে ফৌজদারী কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন ইত্যাদি আইন সহ পুলিশের নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে পি,আর,বি, পুলিশ এ্যাক্ট ইত্যাদি ত্রুটি পূর্ণ আইন বিদ্যমান সুতরাং এগুলো সং শোধনের মাধ্যমে আইন যুগোপোযোগী করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে আইন কমিশনকে কাজে লাগানো যেতে পারে। ভারতে এরুপ অনেকগুলো কমিটি হয়েছে যার মধ্যে বিচারপতি ভার্মা কমিটি, বিচারপতি মালিমাত কমিটি উল্লেখ যোগ্য।
৮। পুলিশ জবাব দিহিতার জন্য ‘পুলিশ একাউণ্টিবিলিটি কমিশন’ গঠন করা যেতে পারে। এ কমিশনের কয়কটি কমিটি থাকতে পারে। যেমন- জেলা পর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজকে প্রধাণ করে কমিটি থাকতে পারে যে কমিটি কিনা সিনিয়র এ এস পি পর্যন্ত অফিসারদের অপরাধ মূলক কাজের আমল গ্রহণে ক্ষমতাবান থাকবেন। এছাড়া, বিভাগীয় বা জাতীয় পর্যায়ের কমিটিতে প্রধাণ থাকতে পারবেন সুপ্রীম কোর্টের অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি পদমর্যাদার কেউ। কমিটিতে পুলিশের ব্যক্তিদের উচ্চ পদস্থ অবসরপ্রাপ্ত কর্তাকে সহ মানবাধিকার বিষয়ে দিক্ষিত ও নাগরিক সমাজ থেকে দায়িত্বশীল সদস্যদেরও রাখা যেতে পারে। উল্লেখ্য, এ কমিশনের কোন থানা হাজতে বা অন্য কোন ব্যক্তিকে যাতে অন্যায় ভাবে আটক রাখা বা নির্যাতন যাতে না করতে পারে সে জন্য তল্লাশী সহ অন্য ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে। তবে কমিশনের কাজের বাস্তবায়নের ব্যাপারে দিশদ চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
৯। পুলিশকে রাজনৈতিক বলয় থেকে মুক্ত থেকে স্বাধীন থেকে দেশের জন্য কাজ করতে সামর্থ্যবান করার জন্য পৃথক পুলিশ কমিশন গঠন করা যেতে পারে যাদের কাজ হবে পুলিশের পোষ্টিং, প্রোমোশন ইত্যাদি দেখভাল করা। একজন অতিরিক্ত আই,জি,পি এ কমিশনের দায়িত্বে থাকতে পারেন।
১০। অর্থনৈতিভাবে পুলিশকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, বাসস্থান, ঝুকি ভাতা ইত্যাদি বাড়ানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে যেসব পুলিশ সদস্য দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত হবেন প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ সহ তাদের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে।
লিখলে আরো অনেক কিছু লেখা যায়— কিন্তু শুধু কাগজ কলমে থাকলে তো আর কিছু লাভ হবে না প্রয়োজন বাস্তবায়নের।তবে, শুধু পুলিশকে, পুলিশের আইন সংশোধন করলেই হবে না ন্যায় বিচারের জন্য প্রয়োজন সরকারী ভাবে প্রতিযোগীতা মূলক পরীক্ষার মাধ্যমে পৃথক তদন্ত ক্যাডারের পাশাপাশি পৃথক প্রসিকিউশন ক্যাডার নিয়োগ।এ কাজটি বি,জে,এস করতে পারে। উল্লেখ্য, ভারতে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ আইন সংশোধন ও এ লক্ষ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে আদালতে পি,আই,এল-এ মামলা হয়েছে। আদালত আদেশ দিয়েছেন, কমিশন ও গঠিত হয়েছে। খসড়া আইন ধরে বিভিন্ন রাজ্যে বাস্তবায়ন মূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরাও এমনটি চাই। চাই পুলিশকে বন্ধু হিসাবে পেতে।
Discussion about this post