রাজধানী ঢাকা ও এর বাইরের বিভিন্ন জেলায় পুলিশের নামে ইস্যু করা সরকারি অস্ত্র চুরি, ছিনতাই ও হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পুলিশের নামে সরকারিভাবে ইস্যু করা ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপদে রাখার জন্য সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক আদেশ জারি করেছেন। ‘সরকারিভাবে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের নিরাপত্তা বিধান’ শীর্ষক ওই আদেশে গত ২০ মার্চ ডিএমপির সব থানার ইনচার্জ থেকে অতিরিক্ত কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্র রাখা, বহন এবং চলাচলের ক্ষেত্রে সবসময় আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আমরা যাতে আরও বেশি সতর্ক হই, সেজন্যই এই আদেশ জারি করা হয়েছে। সরকারি অস্ত্র যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসীরা চুরি করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি রুটিনমাফিক কাজ। নিরাপত্তার খাতিরে মাঝেমধ্যেই এমন আদেশ-নির্দেশ জারি করা হয়।’
ডিএমপির কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার, জননিরাপত্তা বিধান এবং নিজ ও অপরের জানমাল রক্ষার নিমিত্তে ইউনিফর্মের অংশ হিসেবে পুলিশ সদস্যগণ সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর (এএসআই) থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাগণের নামে সরকারি ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র ইস্যু করা হয়ে থাকে, যা তিনি ২৪ ঘণ্টা নিজ হেফাজতে রাখেন। একদিকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সদস্যগণ কর্তব্য পালন করেন, অপরদিকে এ আগ্নেয়াস্ত্রের নিরাপত্তা বিধানেও তাকে সদা সতর্ক থাকতে হয়।’
আদেশে আরও বলা হয়, ‘কতিপয় ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ছিনতাই, হারিয়ে যাওয়া এবং চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ১১ জানুয়ারি ডিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের দারুসসালাম ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মুহাম্মদ সোহেল রানা এবং সার্জেন্ট মামুনুর রশিদের মিরপুর মধ্য পীরেরবাগস্থ ভাড়া বাসা থেকে দুইটি পিস্তল, ৮ রাউন্ড করে গুলি সম্বলিত দুইটি ম্যাগাজিন চুরির ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, বর্ণিত ভবনে অস্ত্র এবং ম্যাগাজিন ট্রাঙ্কে তালা লাগানোসহ রুম তালাবদ্ধ করে উক্ত সার্জেন্টদ্বয় বাসার বাইরে গেলে জানালার গ্রিল ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে দরজা ও ট্রাংকের তালা ভেঙে অস্ত্র ও ম্যাগাজিন চুরি হয়। পরবর্তীতে ওই হারানো অস্ত্র উদ্ধারের জন্য ১৯ মার্চ রাতে অভিযান চালানোর সময় ডিবি-পশ্চিম বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক জালাল উদ্দিন দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন এবং স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সরকারি দায়িত্ব পালনকালে এরূপ মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এমতবস্থায় ইউনিট ইনচার্জগণ (থানার ক্ষেত্রে অফিসার ইনচার্জ) তার অধীন যেসব কর্মকর্তার নামে সরকারি ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র ইস্যু আছে, অথচ সরকারি বাসায় বসবাস করেন না, তাদের বাসস্থান যথেষ্ট নিরাপদ কিনা এবং আগ্নেয়াস্ত্র রাখার জন্য আলাদা নিরাপদ সিন্দুক বা সেইফ লক আছে কিনা তা যাচাই বাছাই করবেন। আগ্নেয়াস্ত্র রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বাসাটি নিরাপদ প্রতীয়মান না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বাসস্থান পরিবর্তন করতে পরামর্শ দেবেন এবং থানা কিংবা ইউনিটের অস্ত্রাগারে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তব্য পালন শুরুর প্রাক্কালে অস্ত্র গ্রহণ করবেন এবং কর্তব্য পালন শেষে অস্ত্রাগারে জমা দেবেন। সরকারি অস্ত্র ইস্যুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ব্যক্তি নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। নেহাত প্রয়োজন না হলে বেসরকারি ও যথাযথভাবে সুরক্ষিত নয়–এমন বাসায় বসবাসরত কর্মকর্তাদের অনুকূলে সরকারি অস্ত্র ইস্যুকরণ নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে।’
এ বিষয়ে ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি ইস্যু করা অস্ত্র নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়। দায়িত্ব পালনের বাইরেও অনেকে সরকারি অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করেন। পারিবারিক বা অন্যান্য সামাজিক কাজ বা উৎসবে অনেক সময় সরকারি অস্ত্র খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য সরকারি অস্ত্র যাতে যথাযথভাবে থাকে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক করার জন্য এই আদেশ জারি করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রত্যেক থানাতেই অস্ত্রাগার রয়েছে। যাদের বাসায় নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে, তারা থানার অস্ত্রাগারে অস্ত্র জমা রাখতে পারেন।
Discussion about this post