কোন কোন প্রশ্নের উত্তর নেই যেন এ সমাজে । গরুর দুধ নিয়ে বসে আছে কতক বিক্রেতা । নিম্নবিত্ত এক মাকে দেখলাম দুধ কেনার জন্য খুব দর কষাকষি করছে । মাত্র পাঁচ টাকার জন্য দুধ ওয়ালা দুধ দিতে চাইছেনা । নজর পড়লো তখনই আমার । এক পর্যায়ে দুধওয়ালা রাগ করেই বললেন আমি পারবোনা দিতে । আমি তখন ভালো করে দৃষ্টি দিয়েছি । দেখলাম মা যে দুধ নিতে এসেছে তার একটি হাত নেই । প্রতিবন্ধি ! বাচ্চাটিও বেশী বড় নয় । হয়ত এক বছরের কিছু উপরে হবে বয়স । জোড়াজোড়ি করার পর দুধওয়ালা দুধ যখন দিলোনা তখন অপারগ মায়ের চোখে জল দেখছিলাম । চোখে জল নিয়েই রাস্তার এক পাশে বসে সন্তানকে স্তন্য দানে মনোযোগী হলেন মা । বুঝতে পারলাম সন্তান দুধ পাচ্ছেনা । কান্নাকাটির পর মা অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন সামান্য ক্ষুধা নিবারণের জন্য স্তন্য দান করার । বাচ্চাটির কান্না আমাকে খুব বেশী প্রভাবিত করছিল । ভাবলাম প্রায় সম বয়সী আমার বাচ্চাটির কথা । সে ও দুধ খাওয়ার সময় হলে এমনই শব্দ করে কাঁদে আর দুধ চায় !এগিয়ে গেলাম । যেয়ে দেখলাম বাচ্চাটি কান্না করছে । মাকে গিয়ে কিছু টাকা দিয়ে বললাম দুধ কিনে খাওয়ান । তার চোখের ভাষা বলে দিচ্ছিল সে আনন্দিত হয়েছে ! কিন্তু আমিতো আনন্দিত হতে পারিনি । আজকের ঐ মুহূর্তে হয়ত আমি দুধ কেনার জন্য টাকা দেওয়ায় তাদের আনন্দের কারণ হতে পেরেছি কিন্তু আদৌ কি তা স্থায়ী সমাধান ? সরকার প্রতিবন্ধিদের জন্য কত কিছু করছে কিন্তু রাস্তায় এই ভ্রাম্যমান প্রতিবন্ধিরা কি সেই সুযোগ পাচ্ছে ? কারা এগুলো দেখভাল করে প্রশ্ন জাগতেই পারে মনে!
উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং সামাজিক সচেতনতার ক্ষেত্রে যখন আমরা মডেল তখনই আমরা সবচেয়ে অচেতন বলে বিবেচিত হওয়ার জন্য কতগুলো ঘটনা দরকার হয় বলে মনে করেন ? আরেকটি ঘটনায় যাই । এই ঘটনাটি যশোর রোডের গাছগুলোর ব্যপারে । আগে শুনতাম বেশী বয়সী গাছের বেশী গুণের কথা আর এখন দেখি দ্রুত গাছকাটার পরিকল্পনা করে দ্রুত নিজেদের উন্নত ভাবার মিথ্যে প্রয়াস নেওয়ার কথা ।
সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যশোর রোডের গাছ বাঁচানো নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে । পত্রিকায়ও অনেক লেখা আসছে দেখিছি । কিন্তু আদৌ কি কোন লাভ হচ্ছে ?
প্রতিবন্ধি বাচ্চাটি রাস্তায় দুধের জন্য যখন কাঁদছিল অনেক মানুষ আমার সামনে দিয়ে দুধ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিল । একজনতো দুধের পিঠা বানানোর সেই রকম গপ্পো জুড়ে দিল । তখন সেই মা কেবল চেয়ে চেয়ে কাঁদছিল !বঞ্চনার কষ্ট কেমন হয় তা কেবল বঞ্চিতরাই উপলব্ধি করে !মা যেমন সেই শিশুর একমাত্র অন্ন দাতা গাছও এ পৃথিবীর জন্য এখন একমাত্র সুরক্ষা প্রাচীর ।সেক্ষেত্রে প্রতিবন্ধি মায়ের কান্নার আওয়াজ যেমন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মানুষগুলো পর্যন্ত পৌছানো সম্ভব হয়নি তেমনি আমাদের কান্নাও প্রায় প্রতিবন্ধি মায়ের সেই শিশুটির মতই পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে !আমরা কাঁদছি কিন্তু পিপাসা মেটানোর মত এখনও কোন নিশ্চয়তা পেলাম না । তবে কি আমাদের কান্না অর্থহীন নাকি কান্নার বিষয়টি সঠিক নয় ।
পরিকল্পনা পরিবর্তন করেও কি এই গাছগুলো রক্ষা করা যায় না, প্রতিবন্ধি মায়ের শিশুটি কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসার উচিৎ নয় ? নাকি দুটি চাওয়াই বড় বেশী অপরিপক্কতার ?
প্রতিবন্ধি মানুষগুলোর সুরক্ষার জন্য সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তার সুফল পেতে হলে ভ্রাম্যমান এসব প্রতিবন্ধি মানুষদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং যশোর রোডের গাছগুলো রক্ষায় আমাদের মত সাধারণ মানুষের আকুতির বিষয়টি খুব বেশী ক্ষতিয়ে দেখতে হবে । আমরা চাই প্রতিটি শিশু হাসুক আর সেই হাসি নিশ্চিত করতে পারে সবুজ পৃথিবী ও সুন্দর মনের মানুষ । সবুজ বাঁচানোর জন্য হলেও যশোর রোডের গাছগুলোকে বাঁচানো হোক নইলে আমাদের অস্তিত্বই টেকানো কষ্ট হয়ে পড়বে এক সময় ।
Discussion about this post