[responsivevoice_button voice=”Bangla India Female” buttontext=”Listen to Post”]
আইনজীবীদের নিয়ে কিছু স্মৃতি কথা
লেখার প্রারম্ভেই আমার নিজের কিছু কথা উল্লেখ করছি। ১৯৭৪ সন, তখনো সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে আমার চাকরি হয়নি। আমি প্রয়াত বিচারপতি শ্রী বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী (বি.বি. রায় চৌধুরী) এর ওয়ারীর বাসায় থেকে তাঁর চেম্বারের দেখাশুনা করি এবং কোর্টের সময় ক্লার্কের সাথে ফাইল ও ব্রিফকেস নিয়ে কোর্টে আসা যাওয়া করি। সে সময় সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সমবায়ের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে তৈল, চিনি, ডাল ইত্যাদি বিক্রি করতো। আমি প্রয়াত বিচারপতি শ্রী বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী (বি.বি.রায় চৌধুরী) এর জন্য সেখান থেকে বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করে নিয়ে যেতাম। নিয়মিত কোর্টে আসা যাওয়ার সুবাদে আমান প্রচন্ড ইচ্ছা জাগে, আমি যদি সুপ্রীম কোর্টে চাকরি পেতাম।
আমি ঐ সময় বিচারপতি বি.বি. রায় চৌধুরী এর বাসায় থেকে টাইপ মেশিনে মামলা টাইপ করতাম। তখনকার বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর মামলাও আমি টাইপ করতাম। প্রথমে প্রয়াত শ্রী সুধাংশু সেখর হালদারের র্যাংকিং ষ্ট্রীটের বাসায় কাজ শুরু করি। তখন হাতেগুণা কয়েকজন টাইপিষ্ট ছিল। আমি প্রয়াত শ্রী বি.এন. চৌধুরী, গৌর গোপাল সাহা (পরবর্তীতে বিচারপতি), জনাব মাহমুদুল ইসলাম, জনাব শাহ মো: শরীফ এবং জনাব এ.ওয়াই সালেউজ্জামান স্যারের জন্য নিয়মিত টাইপ করতাম। এছাড়া অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জনাব খোন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এবং জনাব খন্দকার মাহবুব হোসেন স্যারের জন্য সুপ্রীম কোর্টের পেপার বুকগুলো আমাকে দিয়েই নিয়মিত টাইপ করাতেন। তখন মূল কপি ৪ আনা এবং কার্বন কপি ২ আনা রেট ছিল। ঐ সময় মাহমুদুল ইসলাম স্যার র্যাংকিন ষ্ট্রীটে থাকার কারণে তাঁর সঙ্গে গিয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ স্যারের ধানমন্ডির বাসায়ও অনেক কাজ করেছি।
১৯৭৬ সনের ঘটনা –
প্রয়াত শ্রী এস.আর.পাল বাবুর ক্লার্ক ভবরঞ্জন মজুমদার, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে একজন টাইপিষ্ট নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি বিষয়ে ওয়ারীর বাসায় গিয়ে আমাকে এবং বি.বি.রায় চৌধুরীকে অবগত করেন। আমি দুই দিন পর আবেদনপত্র জমা দিই। নিয়োগের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন সমিতির তৎকালীন সভাপতি জনাব আহমেদ সোবহন, সম্পাদক জনাব এইচ.কে. আবদুল হাই, সহ-সম্পদক মিসেস সিগমা হুদা এবং জনাব এ.ওয়াই.মাসিহুজ্জামান স্যার। নিয়োগ কমিটি পনের দিন আমার কাজ যাচাই করার শর্তে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
প্রয়াত বিচারপতি শ্রী বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী (বি.বি. রায় চৌধুরী) কে সমিতির তৎকালীন সভাপতি জনাব আহমেদ সোবহান বলেছিলেন, ‘বিমল ওকে আমরা একটু দেখব, পরে নিয়োগ দেব’। বি.বি. রায় চৌধুরী বলেছিলেন, ‘সে আমার বাসায় থাকে খায় কোন সমস্যা নেই’। প্রয়াত বিচারপতি শ্রী বিমলেন্দু বিকশ রায় চৌধুরী (বি.বি. রায় চৌধুরী) এবং জনাব মাহমুদুল ইসলাম স্যারেরা তখন এ.এ জি পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমি পনের দিন পর ক্লার্ক-কাম-টাইপিষ্ট হিসেবে নিয়োগপত্র পেয়েছিলাম। নিয়োগপত্র পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম, কারণ কোর্টে না হলেও সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে চাকরি হওয়ার আমার ইচ্ছা অনেকটাই পূরণ হয়েছিল। তাছাড়া চাকরিটা পওয়ায় আমার বাবা-মা, ভাইবোনদের খাওয়া পড়ার একটি ব্যবস্থা হয়।
দেশ বিভাগের পর ১৯৫২ সনে তদানিন্তন ঢাকা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ছিল ৯১ জন, ১৯৫৭ সনে ছিল ১৩১ জন, ১৯৬৩ সনে ছিল ২২২ জন, ১৯৬৬ সনে ছিল ২৮০ জন এবং ১৯৭৪ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৬৫ জন। মহিল আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন মিসেস কামরুন নাহার লাইলী, মিসেস মেহেরুন নেছা খাতুন, গুলফাম শাহানা বানু, ব্যারিস্টা রাবেয়া ভূঁইয়া প্রমুখ। কোর্টে আসা যাওয়ার মধ্যে একদিন সকালে অর্থাৎ ১৯৭৬ সনের ৩০শে জানুয়ারী সকালে এসে দেখি নবনির্মিত সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের পূর্ব পাশ্বে অর্থাৎ কাজী গোলাম মাহবুব চত্বওে (তখন খালি যায়গা) ছোট একটি স্টেজ। সমিতি ভবন উদ্বোধন হবে। সমিতি ভবন উদ্ধোধন করেন সমিতির সভাপতি জনাব টি. আলী।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সমিতির সম্পাদক জনাব এ.কে.এম, শফিকুর রহমান –
তার পূর্বে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অফিস বা বসার স্থান ছিল বর্তমানে পুরাতন ১০ এবং ১১ নং কোর্টের স্থানে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অফিস ছিল পুরাতন হাইকোর্টের নিচ তলায় মাজার সংলগ্ন রুমটিতে। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ঐতিহ্যবাহী পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটি (বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল) অব্যবহৃত থাকা অবস্থায় এটিকে হাজী ক্যাম্পের হেড অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং বর্তমান টিন সেড স্টাফ কোয়ার্টার এলাকাটি ছিল হাজী ক্যাম্প। পরবর্তীতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্থানান্তর করা হয় পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে। তবে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দাবীর মুখে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
১৯৭২ সনের সংবিধানের অধীনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট গঠিত হয় আপীল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে। তখন সুপ্রীম কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি জনাব আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। সপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ বর্তমান ১নং কোর্টেই বসতো। ১৯৭৬ সনে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৯১ জন এবং সুপ্রীম কোর্টের উভয় বিভাগের মাননীয় বিচারপতির সংখ্যা ছিল ২৪ জন, তাঁদের মধ্যে হাইকোর্টের বিচারপতির সংখ্যা ছিল ১৯ জন এবং আপীল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা ছিল ৫ জন।
দ্বৈত এবং একক বেঞ্চ মিলে বেঞ্চ সংখ্যা ছিল ১০ টি। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে কোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ঐ সময় কোর্ট বসতো শুধুমাত্র পুরাতন ভবনের ২য় তলায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং হাইকোর্ট আলাদা হলো। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন জনবা সৈয়দ এ.বি.মাহমুদ হোসেন (৫ জনের বেঞ্চ) এবং হাইকোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন জনাব রুহুল ইসলাম। পরবর্তীতে কিছুদিনের জন্য পুনরায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টকে পূর্ববস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। যা আজও বিদ্যমান। তখন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি জনাব কামাল উদ্দিন হোসেন।
বাংলাদেশে প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব এম.এইচ.খন্দকার এবং পরবর্তীতে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জনাব ফকির শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ স্যারকে দেখেছি। সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ.বি.মাহমুদ হোসেন স্যারের শাহ সাহেব লেনের বাড়ীতে করিম ভাই এর সঙ্গে অনেকবার গিয়েছি।
আমার চাকুরী জীবনের স্বার্থকতার কিছু চিত্র তুলে ধরছি –
১৯৮৩ সনে বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, ১৯৭৮ সনে বাংলাদেশের সাবেক মাননীয় প্রধান বিচারপতি শ্রী সুরেন্দ কুমার সিনহা এবং১৯৭৬-৭৭ সনে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জনাব মো: আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা মহোদয়গণের সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণের প্রয়োজনীয় ফি গ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কাজে সহযোহিতা করার সুযোগ আমার হয়েছে। আমি অনেক মাননীয় বিচারপতি এবং আইনজীবীগণকে সহায়তা করে তাঁদের অকৃত্রিম স্হে, আর্শিবাদ ও ভালোবাসা পেয়েছি। সে সময় সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে কর্মচারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩ জন।
সমিতির বার কিপার প্রয়াত করিম ভাইয়ের নিকট শুনেছি, দেশ বিভাগের পর কলকাতা হাইকোর্ট থেকে এদেশে ফিরে এসে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, শ্রী সবিতা রঞ্জন পাল (এস.আর.পাল), শ্রী দিনেশ চন্দ্র রায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব বি.এ. সিদ্দিকী, শ্রী পাকড়াশী, জনাব সৈয়দ মোদারেছ আলী, জনাব নূরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার আসরারুল হোসেন, জনাব এম.এইচ.খোন্দকার সহ নাম না জানা আরও কয়েকজনের উদ্যোগে তদানিন্তন হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে সভাপতি ছিলেন জনাব এ.কে.ফজলুল হক এবং সম্পাদক ছিলেন শ্রী দিনেশ চন্দ্র রায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নাম হয় সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন।
সে সময়কার একজন সিনিয়র আইনজীবী শ্রী এস.আর.পাল (সবিতা রঞ্জন পাল) কে নিয়ে সামান্য স্মৃতিচারণ করতে চাই। শ্রী এস. আর.পাল ছিলেন অতুলনীয়। তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন আইনজীবী ছিলেন। আইনঙ্গনের জীবন্ত ইতিহাস ছিলেন তিনি। স্যারের বাসা ছিল ধানমন্ডির শংকরে। স্যারের ক্লার্ক ভবরঞ্জন ছিল আমার গ্রামের ছেলে, আমার চলার সাথী। ভবদার সঙ্গে মাঝে মাঝে আমি স্যারের বাসায় যেতাম। এতবড় একজন আইনজীবী শত ব্যস্ততার মাঝেও আমার খোঁজ নিতে ভুলতেন না। দেখলেই বলে উঠতেন ভবেশ নিমেশকে চা দাও। তখন দেখেছি ওনি মামলার ফি নিতেন প্রথম দিকে ৩,৬০০/- (তিন হাজার ছয়শত) টাকা, থেকে ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা, পরবর্তীতে ১৩,০০০/- তের হাজার টাকা এবং সর্বশেষ ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা। একদিন এক মক্কেল চেম্বারে এসে ভবরঞ্জনকে বললো, ‘‘ ভাই আমার মামলা শেষ করার কথা এক মাস আগে। এখনোও মামলই হয়নি। আমার মামলা ফেরত দেন, আমি অন্যকে দিয়ে মামলা করাব’’। স্যার কথাটা শুনে ভবদাকে ডেকে মামলা টাইপ এবং ফাইল করতে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলেন। ভবদা উত্তরে বললেন, ৭২৫/- (সাতশত পঁচিশ) টাকা। তখন স্যার বললেন, তোমার খরচ ২৭৫/- (দুইশ পঁচাত্তর) টাকা রেখে ১২,০০০/- টাকা এবং ফাইল ফেরৎ দিয়ে দাও। পরবর্তীতে মক্কেল অনেক অনুরোধ করার পরেও সেই মামলা তিনি আর করেননি।
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রয়াত শ্রী এস.আর.পাল একজন নমস্য ব্যক্তি ছিলেন। ঐ সময় একজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে অনেক জুনিয়র কাজ করতেন। তাঁরও অনেক জুনিয়র ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি শ্রী সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি জনাব ইসমাইল উদ্দিন সরকার, বিচারপতি জনাব সুলতান হোসেন খান, বিচারপতি শ্রী বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এস.এম. আমিন আজাহার, শ্রী সুধাংশু সেখর হালদার, জনাব মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া, বিচারপতি জনাব জাকির আহমেদ, ব্যারিস্টার সুধীব চন্দ্র দাস, বিচারপতি জনাব মো: বজলুর রহমান ছানা, জনাব কে.এম. সাইফুদ্দিন আহমেদ, বিচারপতি শ্রী জে.এন.দেব চৌধুরী, শ্রী সুব্রত চৌধরী প্রমুখ।
পাকিস্তান আমলে প্রয়াত শ্রী এস.আর.পাল বহু বিখ্যাত মামলা পরিচালনা করেন –
ঐ সময় সরকার বিরোধী মামলা পরিচালনার দায়ে তিনি সরকারের বিরাগভাজন হন। পাক ভারত যুদ্ধেও সময় তিনি ভারতে চলে যান এবং সেখানেই আইন পেশা পরিচালনা করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রী এস.আর.পাল এবং বিচারপতি শ্রী দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। সরকার শ্রী এস.আর.পালকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের চীফ স্পেশাল প্রসিকিউটর এবং শ্রী দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যকে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ প্রদান করেন। আইনের গভীর জ্ঞান ও আইন পেশায় অভূতপূর্ব সুনাম অর্জন করায় শ্রী এস.আর.পাল সম্পর্কে আইন পেশায় জড়িত প্রায় সকলেই জানেন।
ডিএলআর সহ বিভিন্ন আইন পুস্তকে তাঁর করা অনেক মামলা উল্লেখিত হয়েছে। প্রয়াত বিচারপতি শ্রী জে.এন. দেব চৌধুরী ছিলেন শ্রী এস.আর.পাল বাবুর মামাতো ভাই। পাল বাবু জনাব কে.এম. সাইফুদ্দিন আহমেদকে পুত্রের ন্যায় সমাদর করতেন। শেষের দিকে তিনি জনাব কে.এম.সাইফুদ্দিন আহমেদ এবং ভবেশদা ছাড়া যেন কিছুই বুঝতেন না।
অপরজন জনাব শামসুল হক চৌধুরী, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এক টার্মের সম্পাদক এবং ৬ বছরের একটানা সভাপতি। দেশে সামরিক শাসন জারি হয় ১৯৮২ সনে। তখন সমিতির সভাপতি ছিলেন প্রয়াত সিরাজুল হক (বর্তমান মাননীয় আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক স্যারের পিতা)। সমরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তাঁর সভাপতিত্বে সমিতির সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধন্ত অনুযায়ী জনাব শামসুল হক চৌধুরীকে সারা বাংলাদেশের আইনজীবীদের নিয়ে একটি মহা-সমাবেশ করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। পরের বছর তিনি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তিনি সারা দেশের আইনজীবীদের একত্রিত করার জন্য সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে ১৯৮৩ সনে একটি সমাবেশ আহবান করেন। সেই সমাবেশে দেশের ৪৩টি বার সমিতি অংশগ্রহণ করে। ঐ সমাবেশ থেকে সমরিক আইন প্রত্যাহার সহ ১৭টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। আইনজীবী সমিতি সমূহের সমন্বয় পরিষদ গঠন করে জনাব শামসুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সমরিক আইন বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে সমিতির সভাপতি জনাব শামসুল হক চৌধুরী সমিতি ভবনের দক্ষিণের ১নং হলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কে একই মঞ্চে উপবিষ্ট করে তাদের বক্তব্য শোনেন।
তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করায় তাঁর বিরুদ্ধে Mob Trial করার জন্য ১৯৮৪-৮৫ সনে সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পরই জনাব শামসুল হক চৌধুরী সহ ১৩ জন বিশিষ্ট আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়। তার দুই দিন পর এ সম্পর্কিত সকল Resolution এবং কাগজপত্র জব্দ করার জন্য পুলিশের লোকজন সমিতি ভবনে উপস্থিত হয়। তখন অফিসের চাবি থাকতো করিম ভাই এবং আমার কাছে। করিম ভাই টের পেয়ে অফিস ত্যাগ করেন। আমি সকালে অফিসে আসার পথে যেন না আসি মাজারের গেটে সংবাদ পাঠান ড. আলীম আল রাজী স্যার এবং জনাব এ.বি.এম.রফিক উল্লাহ স্যার। আমি তখন আত্বগোপনে চলে যাই। ঐ দিন পুলিশের লোকজন রাতে শ্রী বি.বি.রায় চৌধুরীর ওয়ারীর বাসায় আমাকে ধরার জন্য অভিযান চালায়। কিন্তু অনেক তল্লাশি করেও আমাকে না পেয়ে ফিরে যায়। পরদিন একজন ম্যাজিস্ট্রেট সহ পুলিশের লোকজন পুনরায় সমিতি ভবনে এসে অফিসের তালা ভেঙ্গে অফিসে ঢুকে আলমারীতে রাখা সমস্ত বই, Resolution খাতা ইত্যাদি নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ড. কামাল হোসেন, ড. আলীম আল রাজী এবং জনাব মাহমুদুল ইসলাম স্যারদের মধ্যস্থতায় গ্রেফতারকৃতরা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জব্দ করা Resolution খাতা ফেরৎ পাওয়া যায়। আরও অনেক ঘটনার কথাই আমার মনে আছে। ভবিষ্যতে কখনো সুযোগ পেলে আবারও লিখবো আশা করি। যা লিখেছি একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এবং আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই লিখেছি, তার পরেও কিছু ভুল ত্রুটি থেকে যেতে পারে। ভুল ত্রুটি জন্য সকলের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
লেখকঃ নিমেশ চন্দ্র দাশ, সুপারিনটেনডেন্ট, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
Discussion about this post