দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন-কে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করিয়াছেন।’প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এই আদেশ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে, শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতির নিয়োগ আদেশে স্বাক্ষর করেন। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে তিনি শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদিন।
জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এখন এ অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।’
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেন, ‘আজই (শুক্রবার) রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপরই আইন মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, বিএসসি ডিগ্রি পাওয়ার পর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এলএলবি সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৮১ সালে জেলা জজ আদালতে ও ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগে অ্যাডভোকেট হিসেবে তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। পরে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দু’বার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
আপিল বিভাগের পাঁচ জন বিচারপতির মধ্যে মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ। জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পরেই ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আর এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এরপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় বেশকিছু উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। সম্প্রতি বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে তার নাম। এ কারণে পদত্যাগ করেন তিনি।
গত বছরের ১১ নভেম্বর এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র পৌঁছায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা এটাই প্রথম। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে, একমাসের ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় যান এসকে সিনহা। এই ছুটি শেষ হয় গত ১০ নভেম্বর। তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তিনি ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল আছেন।
বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post