পৃথিবীর সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল পেশা হল আইন পেশা। মহান পেশাদের মধ্যে অন্যতম, কারন আইনজীবীদের প্রধান দায়িত্ব হল মানুষ হয়ে মানুষের ন্যায় বিচারে সহযোগিতা করা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে অর্থাৎ ২০১৩ইং সালের পর থেকে আইনপেশায় একধরনের বিষন্নতা সৃষ্টি হয়ে গেছে যা ভবিষ্যত আইন পেশার জন্য অসনি সংকেত। আমি শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের কথাই বলছি যারা এই আইন পেশার ভবিষ্যত। আইন পাস করে ৬ মাসের এই শিক্ষানবিশ কাল যখন ১০ বসর, ৭ বসর, ৫ বসরে গিয়ে ঠেকে তিন চার বসর অন্তে তিন ধাপের পরীক্ষার বেড়াজালে প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষানবিশ । আর এতে করে পরিপূর্ন আইনজীবী হওয়াতো দুরের কথা সামাজিক, মানসিক, পারিবারিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পাটাতনে পিষে ধ্বংস হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক একজন মেধাবী আইনপেশার ভবিষতের। আর যখন সর্বশেষ ২৮শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ ইং তারিখে, সুদীর্ঘ ১ বসর আন্দোলন করে অবশেষে সুপ্রীমকোর্টে আমরন অনশনের মাধ্যমে অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বার কাউন্সিলের মন জয় করে এম সি কিউ পরীক্ষা পেলাম তখন আবার বুকে আশা বেধে অতীতের সকল যাতনা ভুলে উদ্যমী হলাম তখন বাধ সাজল করোনা ভাইরাস মহামারি। আমরা পরীক্ষাভীতু নই, মেধাবীর এই অঙ্গনে বিচরণ করবে এটাই প্রত্যাশা তাইতো নজিরবিহীন পরীক্ষা পাবার জন্য আন্দোলন করেছি। মহামারি না থাকলে হয়তো আজ রিটেন পরীক্ষাটাও সম্পন্ন হয়ে যেত।কিন্তু বরর্তমান প্রেক্ষাপট দেখে এটাই বোঝা যায় এই মহামারী এই বছর অন্তেও চলে যাবেনা। মারাত্বক ছোঁয়াচে ভাইরাস হওয়ায় এক সাথে জড়ো হওয়া যায়না, যে কারনে অফিস খুললে তা ২৫% অফিসিয়াল দিয়ে চলছে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় আমাদের রিটেন পরীক্ষা ও অনির্দিষ্টকালের জন্য অনিশ্চিত হয়ে গেলো!!
অথচ কি নির্মম পরিস্থিতি আমাদের, একদিকে দীর্ঘ সময়ের হতাশা কাটিয়ে উঠতেই মহামারির প্রবাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে গেলাম। কি নিদারুন পরিস্থিতি সবাই অনুদান পেল, পেল ঋন কিন্তু আইনের হাত বাধায় আমরা কোন অনুদান ও পেলাম না। বরং, আরো কত বছরের সময়ের হাতছানি পড়ে গেলো, আর ততদিনে আমাদের পরিণতিটাই হয়তো হবে কেউ সম্মানের ক্ষুদায় মারা যাবে আর কেউ মরবে পেটের ক্ষুদায় আর মহামারি তো ইতিমধ্যে প্রাণ কেড়েই নিল। তাই বেচে থাকার আশায় আমরা আইন অঙ্গনের ভবিষ্যত আমাদের অতীতের চলে যাওয়া সময় বিবেচনায়, মহামারি বিবেচনায়, আইনপেশার মর্যাদা বিবেচনায় নিরুপায় হয়ে আমাদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বারকাউন্সিলের কাছেই হাত পেতেছি। মহামারি বিবেচনায় অনেক কিছু শিথিল হয় যা হচ্ছেও। এই মহামারীর কড়াল গ্রাস থেকে রক্ষা করে আমাদের বাকি দুটা ধাপ (রিটেন ও ভাইভা)অব্যাহতি দিয়ে এনরোলমেন্ট প্রদান করে আমাদের জীবনের আশার আলো ফিরিয়ে দিয়ে মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করুন।আইন প্রয়োজনে পরিবর্তন হয়,শিথিল হয়।যার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন আমাদের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২৭২ সালে, সবাইকে অটো প্রমোশন প্রদান করে। মহামারিতে কোন কঠোরতা থাকেনা বলেই আমরা পৃথিবীতে আজো টিকে আছি। আমাদের প্রিয় বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ এই বছর টাই রয়েছে কিন্তু এই মেয়াদে একটা ও এনরোলমেন্ট সম্পন্ন হয়নি যা কমিটির দিকে আংগুলি ও নিক্ষেপ করে। আর আইন পেশার উন্ননের জন্য ২০১৭ সালের মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের অনেকগুলো নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে প্রতি বছর একটা পরীক্ষা সম্পন্ন করা যা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে পরে। বারকাউন্সিল ২০২০ পরীক্ষার পূর্বে রেজিষ্টেশন বিষয়ে রায়ের একটা নির্দেশনা পালন করেছেন আশা করি ২০২০ সালের মধ্যেই একটি এনরোলমেন্ট সম্পন্ন করে আরেকটি নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে। বেচে যাবে মর্যাদা, ফিরবে সম্মান, বাচবে মানবিকতা, শিক্ষানবিশ হবে না আর কোন অভিশাপের নাম।
বিনিত অনুরোধ করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন সহ বারকাউন্সিলের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট, এই বিশ্বব্যাপি শত বছরের ভয়াবহ করোনাভাইরাস মহামারী বিবেচনায় মানবিক দিকটি সামনে নিয়ে আমাদের দীর্ঘ নষ্ট হয়ে যাওয়া সময় বিবেচনায় রিটেন ও ভাইভা অব্যাহতি দিয়ে ২০২০ ও ২০১৭ ইং সালের এম সি কিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ দের এনরোলমেন্ট প্রদান করে মানবতার জয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
Discussion about this post