প্রবাদে আছে ‘বাতির নিচেই অন্ধকার’। যিনি আলো জ্বালাবেন তিনি আজ নিজেই অন্ধকারে। কালো-সাদার মধ্যেই এ আইনজীবীরা বিচরণ করে সত্যকে উম্মচন করে আলোর দিকে ধাবিত করবে এটাই হল মূল লক্ষ। যাঁরা ভবিষ্যত সমাজের অন্ধকারকে দূর করে আলোর দিশার পথ দেখাবে জনসাধারণকে আজ তাঁরাই অন্ধকারের ধোঁয়াশায় নিমজ্জিত হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে! এতক্ষণ যাঁদের কথা বলছি তারা হল বর্তমানের শিক্ষানবিশ আইনজীবী।
আজকের শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা আগামী দিনের খ্যাতনামা আইনজীবী,কোর্ট অফিসার,এ্যাটর্নি জেনারেল কিংবা বিচারপতি। হয়তবা হতে পারে দেশের খ্যাতনামা কোন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। এমন উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে তারা।
এমন পজিটিভ ভবিষ্যত থাকলেও বর্তমানে নেই তাঁদের সামাজিক মর্যাদা কিংবা বেঁচে থাকার সঠিক অবলম্বন। এমন বেহাল দশার কারণ আইনজীবী তালিকাভূক্তির নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের দীর্ঘসূত্রিতা,অনিয়ম,দায়িত্বে গাভিলতি আর সম্মানিত সদস্যরা ক্ষমতাশীন দলের আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব হওয়ায় নিয়ম-নীতির যেন তোয়াক্কাই করছে না। এটা অত্যান্ত দুঃখজনক। অথচ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া সোনার বাংলাকে এখন সোনার খনিতে রুপান্তরিত করার জন্য নিয়েছে নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ।
আইনে ডিগ্রী সম্পন্ন করে আইনজীবী হয়ে আইনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে পরিচয় বহনের প্রত্যাশা এই শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের। সমাজের সাধারণ মানুষের আইনী সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশকে গড়ে তুলবে এক সুখী সমৃদ্ধ সমাজ। সমাজের কালো বাজার,দূর্নীতি,আর আপরাধের সকল দুয়ার বন্ধ করে বেড়িয়ে আনবে এক আলোক বর্তিকা সাদা সকাল। কিন্তু এসব চিন্তাধারায় যেন এক গুড়ে বালিতে বাঁধ সেধেছে অবিভাবক বার কাউন্সিল।
বার কাউন্সিলের প্রধান কাজ হচ্ছে আইনজীবী তালিকাভূক্তি করণ কিন্তু প্রধান কাজটা যেন তাদের কাছে অপশনাল কাজে পরিনত হয়েছে। বার কাউন্সিল বিধি অনুযায়ী সঠিক সময়ে পরীক্ষা নিচ্ছে না। ফলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আজ সঠিক সময়ে পরীক্ষা সহ বার কাউন্সিলের সনাতন তিন ধাপের দীর্ঘ মেয়াদী পরিক্ষা পদ্ধতির সংস্কারের দাবীতে রাজপথে শিক্ষানবিশরা আন্দলনরত। এ আন্দোলন প্রায় দেড় মাস ধরেই চলছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা মনে হয় বিড়ল যে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য আন্দোলন করতে হয় রাজপথে। এমনটা সত্যিই জাতীর জন্য লজ্জাকর।
কিভাবে দেশ আজ সামনের দিকে উন্নয়নে অগ্রসর হবে? কাদের অসহযোগীতায় এমন এনালগ সিস্টেমে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস উপলব্ধি করছে?এমন প্রশ্নের উত্তর হয়তবা ভুক্তভোগীরাই জানে। কে শোনে কার কান্না! এ যেন এক দীর্ঘশ্বাস!
যাঁদের দ্বারাই আগামীর দেশ নেতৃত্ব হবে তাঁদের সাথেই চলছে অবিচার! কোথায় গেলে ন্যায় বিচার পাবে তারা? অন্ধকার হয়তবা দীর্ঘক্ষণ থাকবে না পূর্ব আকাশে ভোরের নতুন সূর্য্য উদিত হবেই একদিন।
ইতিমধ্যে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা হয়ে গেছে রোহিঙ্গার চেয়েও অবহেলীত! রোহিঙ্গারা তো নিয়মিত সরকারী অনুদান ও সেবার সুযোগ ভোগ করছে কিন্তু এ ভূক্তভোগী শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের নেই কোন ভাতা কিংবা বেঁচে থাকার মত সম্মানী। সিনিয়রদের সাথে সারাদিন হার ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর হয়তবা পায় টি,এ-ডি,এ সহ ১/২’শ টাকা। কারো কাছে এই ইনকামের কথা বলতেও পারছে না কিংবা ছাড়তেও পারছে না। সমাজ তথা পরিবারের এক অকর্মার ঢেকি হয়ে মাথা নিচু করে সমাজে বসবাস করছে হচ্ছে। এই মাথা নিচু করে থাকা ব্যক্তিটা দিয়েই হয়তবা একদিন সমাজের সেবা হবে কিন্তু কতদূর?
বার কাউন্সিলের এমন দূর্বিষহ অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে করতে আইনজীবী হিসেবে নিজের নাম লিখবে এমন আশা নিয়েই আজ আমাদের মধ্য থেকে অনেকে পরপাড়ে চলে গেছেন। তাঁদের আশা চিরদিনের জন্য পূরণ হলনা। পরপাড়ে চলে যাওয়ারা কেউ আন্দোলনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ দূশ্চিন্তা করতে করতে স্ট্রোক করে পর পারে পাড়ি জমিয়েছে। তাহলে এদের মৃত্যুর জন্য দায়ী কারা? এদের পরিবার কাদের দোষ দিবে?
এমনও জীবন্ত লাশ এখন আরোও প্রায় ১৩ হাজার প্রিলিপাশকৃত শিক্ষানবিশ আইনজীবী। এরা আজ সমাজের আলো জ্বালানোর প্রতিক হয়েও নিজেই বার কাউন্সিলের অবহেলায় অন্ধকারে নিমজ্জিত। ডুঁকড়ে কাঁদে এদের হৃদয়! কি করলাম আইন নিয়ে লেখাপড়া করে! এমন কান্নার অবসান যে কবে হবে বিধাতা ছাড়া কেউ জানেনা।
Discussion about this post