রাষ্ট্রদ্রোহীতা কি ?
যুক্তরাষ্ট্র দুবার এই আইন করে আবার সেগুলো বাতিল করেছিল।অসত্য খবর প্রকাশকে দণ্ডনীয় করে ইংল্যান্ডে ১২৭৫ সালে সেডিশাস লাইবেল বা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক মানহানি আইন পাস হয়েছিল।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের কর্তৃত্ববাদী ফেডারেলিস্ট সরকার ১৭৯৮ সালে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন করেছিল।
আদালত বলেছেন, ১২৪ক ধারায় যদি প্রমাণ না করা যায় যে, কোনো রিপোর্ট বা বক্তব্য সরকারের বিরুদ্ধে নৈরাজ্যকর হয়েছে, তাহলে তা রাষ্ট্রদ্রোহ বলে গণ্য হবে না। বিচারপতি হর্ষ দেবানি বলেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ‘সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার’ উপাদান থাকতেই হবে।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করা সত্ত্বেও খবর বেরিয়েছিল যে, রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে মামলা করতে চট্টগ্রামের পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চেয়েছে।
মহাত্মা গান্ধী ১৯২২ সালে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায় স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এই আদালতের কাছে আমার এটা লুকানোর কিছু নেই যে বিদ্যমান সরকারব্যবস্থার প্রতি আমার বিরাগ প্রকাশ করাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানির সংজ্ঞা এবং ৫০০ ধারায় অনধিক দুই বছরের দণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং উভয়বিধ দণ্ড প্রদানের বিধান আছে। এটা সবার জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু ৫০১ ও ৫০২ ধারা নির্দিষ্টভাবে সাংবাদিক ও প্রকাশকদের জন্য প্রযোজ্য।
এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচারপতি মোস্তাফা কামালের কাছে জানতে চেয়েছিল, এই দুটো বিধান রহিত করা যায় কি না। সাংবাদিকেরা এমন কিছু বহুকাল ধরে দাবি করে চলছিলেন।
কিন্তু বিচারপতি মোস্তাফা কামাল তাঁর লিখিত প্রতিবেদনে বললেন, সাংবাদিকের জন্য এক আইন আর নাগরিকের জন্য আরেক আইন, এটা হতে পারে না। কারণ, তাতে ২৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আইনের সমতার নীতির লঙ্ঘন ঘটে। তবে তিনি এটা লিখেছিলেন যে, ‘সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত’ ব্যক্তিকেই মানহানির প্রতিকার চাইতে হবে।
তখন তাকে ভিন্নমতের প্রতি সরকারের ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়া অসহিষ্ণুতার নজির হিসেবে দেখা হলো। রাষ্ট্রদ্রোহের আইনের আধুনিক ব্যবহারের নীতি হলো, কোনো সরকারের টিকে থাকার জন্য কোনো প্রকাশনা বা মন্তব্য যদি কোনো ‘স্পষ্ট এবং আসন্ন বিপদ’ সৃষ্টি করে, তাহলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলা যাবে।
বাংলাদেশ দন্ড বিধি ১৮৬০ সালের আইন এর ধারা ১২৪(ক) মতে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হলো কোনো ব্যক্তি যদি লিখিত বা উচ্চারিত কথা বা উক্তি দ্বারা অথবা চিন্হ দ্বারা অথবা দৃশ্যমান কোনো প্রতীক দ্বারা অথবা অপর কোনো ভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকার এর প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা করার চেস্টা করে অথবা বৈরিতা উদ্বেক করে বা করার চেষ্টা করে সে রাষ্ট্রদ্রোহীতা করেছে বলে বিবেচিত হবে।
সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ বলেছে, ‘রাষ্ট্র বলতে সংসদ, সরকার ও সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ অন্তর্ভুক্ত।
রাষ্ঠদ্রোহিতার শাস্তির বিধান সমূহঃ-
রাষ্ট্রদ্রোহিতার শাস্তি হলো জাবজ্জীবন কারাদন্ড ।কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সাথে অর্থ দন্ডেও দণ্ডিত করা হবে।
দণ্ডবিধির ১২১ ধারায় বলা হয়েছে বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্যোগ বা যুদ্ধ ঘোষণায় সহায়তা করলে সে ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং অর্থ দন্ডেও দণ্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধি ১২২ ধারায় বলা হয়েছে বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করলে সেই ব্যাক্তিকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
দণ্ডবিধি ১২৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, এ ধরণের অপরাধ সুগম করার অভিপ্রায়ে ষড়যন্ত্র গোপন করলে দশ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করবে।
দণ্ডবিধি ১২৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র সৃষ্টির নিন্দা করা বা উহার সার্বভৌমত্ব বিলোপ সাধন করলে বা সেই মর্মে প্রতারণা চালালে দশ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
তবে ঘৃণা , বিদ্বেষ বা বৈরিতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা ছাড়া সরকারের শাসন পরিচালনা বিষয়ক কাজ সম্পর্কে অসমর্থন মূলক অভিমত প্রকাশ করলে সেটাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য হবে না।
Discussion about this post