জামালপুর প্রতিনিধি: রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তির পরও গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১০ বছর কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেলেন একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জামালপুরের আজমত আলী। এর আগে যাবজ্জীবন সাজার রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে তার পক্ষে সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির করা আবেদনের নিষ্পত্তি করে ২৭ জুন আপিল বিভাগ রায় দেন।
ওই আদেশের ভিত্তিতে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দিতে সোমবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু তাহের নির্দেশনা পাঠান।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জামালপুর জেলা কারাগার থেকে তাকে কাগজপত্র যাচাই করে মুক্তি দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন জেল সুপার মোখলেছুর রহমান।
২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তরে ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও ৯ বছর কারাগারে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন স্কুলশিক্ষক আজমত আলী। উচ্চ আদালতের রায়েও খালাস পান। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার ১৩ বছর পর আবার ওই মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সেই থেকে ৯ বছর ধরে কারাগারে আছেন এই বৃদ্ধ।
সাজা মওকুফ হওয়া আসামি একই মামলায় আবার কেন গ্রেফতার হলেন, এ দায় কার- এর জবাবে জামালপুর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নির্মল কান্তি ভদ্র বলেন, এর জন্য দায়ী আসামিপক্ষ। তাদের অবহেলাতেই এ ঘটনা ঘটেছে। মুক্তির বিষয়টি আগেই অবহিত করার দরকার ছিল।
কিন্তু তারা সেটা করেনি। জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দি এলাকার পাখিমারা গ্রামের ইজ্জত উল্ল্যা সর্দারের ছেলে আজমত আলী। টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ঘোড়ামারা এলাকার ভেঙ্গুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধে এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন।
এ ঘটনায় করা মামলায় জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ আজমত আলীকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আজমত আলী। একই সময় রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার জন্যও আবেদন করেন। ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
আর ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টের রায়েও তিনি খালাস পান। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আজমত আলীকে নিু আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন।
২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর আজমতকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সেই থেকে কারাগারে আছেন তিনি। ২০১০ সালের ১১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে আসা রায়ে হাইকোর্টের খালাসের রায় ও আদেশ রদ করে নিম্ন আদালতের রায় (যাবজ্জীবন) বহাল রাখা হয়।
আজমতের আইনজীবী জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, আজমত আলী মুক্তির পর ওই লিভ টু আপিলের বিষয়ে আর খোঁজখবর রাখেননি। রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি তিনি বা বাদীপক্ষ কেউই আদালতকে অবহিত করেননি।
সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের সমন্বয়ক রিপন পৌল স্কু বলেন, আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুনের আবেদনের পর বিষয়টি পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করা হয়। ২৭ জুন আপিল বিভাগ রিভিউ নিষ্পত্তি করে রায় দেন।




Discussion about this post