ডেস্ক রিপোর্ট
ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহক পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে হিসাব খুলে ব্যাংকে জমানো টাকার অতিরিক্ত উত্তোলন করার অপরাধে রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের খাতুনগঞ্জ আমির মার্কেট শাখার সাবেক দুই কর্মকর্তা ও এক গ্রাহককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানার আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের এক আদালত।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সী আবদুল মজিদ এ রায় দেন।
দণ্ডিতরা হলেন, ব্যাংকের গ্রাহক চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার রূপকানিয়া গ্রামের হাজী আব্দুল সোবহানের ছেলে মো. সিরাজ মিয়া, রূপালী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ আমির মার্কেট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক এ কে এম লুৎফুল করিম এবং একই শাখার সাবেক কর্মকর্তা (ক্যাশ) আবু কায়সার চৌধুরী।
রায় ঘোষণার সময় তিন আসামিই পলাতক ছিলেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আদালতে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু। তিনি আরো বলেন ব্যাংকের গ্রাহক, আসামি মো. সিরাজ মিয়ার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইভাবে ব্যাংকের ম্যানেজার এ কে এম লুৎফুল করিমের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
একই সাথে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আরেক আসামি আবু কায়সার চৌধুরীকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ৮ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় তাকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আইনজীবী বলেন, দণ্ডিত তিন আসামি উভয় ধারায় দণ্ডিত হলেও কারাদণ্ড দুটি একত্রে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি রূপালী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ আমির মার্কেট শাখায় মেসার্স মো. সিরাজ মিয়া নামে চলতি হিসাব খুলেন সিরাজ মিয়া। কিন্তু হিসাবটি কয়েক মাস পরিচালনা করে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করেন। ১৯৯২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুদসহ ১ কোটি ৩১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৯ টাকা তার হিসাবে জমার অতিরিক্ত স্থিতি ছিল।
ব্যাংক হিসাবে টাকা না থাকলেও এত বড় পরিমাণ জমার অতিরিক্ত উত্তোলনের চেক পাস করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে ব্যাংক ম্যানেজার একেএম লুৎফুল করিম কোনো অনুমোদন নেননি। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, আমির মার্কেটের ঠিকানায় মেসার্স সিরাজ মিয়া নামে বাস্তবে কোনো প্রতিষ্ঠানও ছিল না।
এ ঘটনা অনুসন্ধান করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সহকারী পরিদর্শক মোল্লা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৯৯৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রাহক মো. সিরাজ মিয়া ও ব্যাংক ম্যানেজার একেএম লুৎফুল করিমকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০০০ সালের ৩১ মে মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা মোল্লা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তবে বিচার চলাকালে মৃত্যু হয় তিন আসামির।
২০০২ সালের ২১ এপ্রিল আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন ৭ জন।
Discussion about this post