টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলার ডেথ রেফারেন্সসহ নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছেছে।রোববার টাঙ্গাইলের আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান রোববার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে হাইকোর্টের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি বিচারিক আদালতের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল দায়ের করে থাকেন। এখন সরকার যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করতে চান তাহলে রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। যেমনটি নেয়া হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলা, সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ এস আলী হত্যা মামলা ও ব্লগার রাজিব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের ক্ষেত্রে।
রূপাকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি চার আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাসটির হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫)। এছাড়া সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) সাত বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জব্দ হওয়া ছোঁয়া পরিবহনের ওই বাসটি রূপার পরিবারকে সাতদিনের মধ্যে হস্তান্তরের নির্দেশও দেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার পথে রূপাকে চলন্ত বাসে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্ষণ করে। পরে তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। পুলিশ ওই রাতেই তার মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন।
রূপার ভাই ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় এসে মরদেহের ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর, সুপারভাইজার সফর আলী এবং সহকারী শামীম , আকরাম ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করে। পুলিশের কাছে তারা রূপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেন।
২৯ আগস্ট বাসের তিন সহকারী শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর এবং ৩০ আগস্ট চালক হাবিবুর এবং সুপারভাইজার সফর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা সবাই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে আছেন।
৩১ আগস্ট রূপার মরদেহ উত্তোলন করে তার ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সিরাজগঞ্জের তাঁরাশ উপজেলার নিজ গ্রাম আসানবাড়িতে রূপাকে দাফন করা হয়।
Discussion about this post