করোনা মহামারীর কারনে সারা পৃথিবী আজ স্তব্ধ। বাংলাদেশও তার বিন্দু মাত্র ব্যাতিক্রম ঘটেনি। এই দুর্যোগের সময়ে সরকারী চাকুরিজীবী ব্যাতীত যারা প্রাইভেট চাকুরি করে বা দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল তাদের জীবনের গতি আজ হুমকির মুখে তাদের মধ্যে অন্যতম হল বাংলাদেশের আইনজীবী সমাজ। আইন পেশা সারা পৃথিবীতে একটি সমাদৃত পেশা হিসাবে পরিচিতি থাকলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিত্র সম্পুর্ন ভিন্ন। বাংলাদেশের আইনজীবীদের আয় নির্ভর করে কোর্ট প্রাকটিসের ও তার রাজনৈতিক পরিচিতি বা সিনিয়রিটির উপর। যে যত ভাল প্রাকটিস করবে তার আয় তত বেশি হবে এটাই নিয়ম। কিন্ত এই সিনিয়রদের ভাল প্রাকটিস, ভাল আয়ের পিছনে যারা নিয়ামক হিসাবে কাজ করে তারা হলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী এক কথায় এই আইনের সোনালী অঙ্গনের ভবিষ্যৎ আইনজীবী। আজ সেই ভবিষ্যৎ আইনজীবীদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ হুমকির মুখে। কারন আইনজীবী হতে হলে বা এডভোকেট হয়ে কোর্টে প্রাকটিস করতে হলে আইনের উপর সর্বচ্চ ডিগ্রি নিয়েও পরীক্ষা নামক একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আর তাতেই এই ভবিষ্যৎ আইনজীবীদের জীবনে নেমে আসে এক মানবিক বিপর্যয় কারন এই পরীক্ষা নামক প্রক্রিয়ায় রয়েছে অনেকগুলো ধাপ। যেমন পাশ করার পরে কোর্টে সিনিয়রের সাথে শিক্ষানবিশ হিসাবে দৈনিক ১০০/২০০ টাকা। শুধুমাত্র দুপুরে ভাতের বিনিময়ে কাজ করার পাশাপাশি এমসিকিউ,রিটেন এবং ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়ার সবগুলো ধাপ অতিক্রম করার পরই একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী হয়ে যায় এডভোকেট। আর এই ধাপগুলি শেষ করতে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বার কাউন্সিলের অবহেলায় লেগে যায় বছরের পর বছর। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বনাম বার কাউন্সিল মামলায় ২০১৭ সালের সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের রায় অনুযায়ী প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে একটি পরীক্ষার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা থাকলেও আজ ৩ বছরেও একটি পরীক্ষার কার্যক্রম সম্পুর্ন শেষ করতে পারে নি। গত ৩ বছরে অর্থাৎ ২০১৭ সালের পর পরবর্তী এমসিকিউ অনুষ্ঠিত হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে যাহাতে ৫০০০০ হাজার পরীক্ষা দিলেও পাশ করে মাত্র ৮৭০০ জন। বাকীদের আবার পরীক্ষা কবে হবে সেটা সয়ং বার কাউন্সিল নিজেও জানে না। আর যারা এমসিকিউ পরীক্ষায় পাশ করেছে এই দুর্যোগের কারনে তাদের লিখিত পরীক্ষা কবে হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নাই। আর যদি লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ও তার রেজাল্ট পেতে লেগে যাবে কমপক্ষে এক বছর থেকে দের বছর, কারন আমরা ইতোপূর্বে দেখছি বিগত লিখত পরীক্ষা ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে হলেও তার রেজাল্ট দিয়েছে ২০১৮ সালের শেষের দিকে। তাই এমতাবস্থায় বৈশ্বিক মহামারীর কথা বিবেচনা করে, শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের দীর্ঘ জট লাগিয়ে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার দিকে ফেলে না দিয়ে এমসিকিউ পাশকারীদের শুধুমাত্র ভাইভা দিয়ে সনদের ব্যাবস্থা করে প্রাকটিস করার সুযোগ দেয়া উচিৎ।
Discussion about this post