গেজেট আন্দোলনের সফলতার ভিতর দিয়েই শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের দীর্ঘ ১ যুগের ভয়াবহ জট নিরসন করা সম্ভব এবং বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষা পদ্ধতিতে আমূল-পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব—
গেজেট আন্দোলন না বলে আমরা এই আন্দোলনকে ‘আইন বিপ্লব’ বলতে পারি।
শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা প্রায় দীর্ঘ ১ যুগ যে পরিমান বঞ্চনার শিকার হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা দুরূহ। আইন বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাশ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে শুধু মাত্র পরীক্ষার জটের কারণে বেকারের পর বেকার তৈরি হচ্ছে। পরীক্ষার গুনগত মান উন্নত না করে পরীক্ষার প্রকিয়া বাড়ানোর কারণেই এই দীর্ঘ জটের মূল কারণ।
যারা শিক্ষানবিশ আইনজীবী তারা সবাই নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে এল এল বি সার্টিফিকেট নিয়েছেন এবং এইটাই চরম সত্য। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের যদি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতি অভিযোগ থাকে, যেমন সার্টিফিকেট বিক্রি ইত্যাদি তাহলে বার কাউন্সিল কর্তৃক সেই সব প্রতিষ্ঠান যথাযথ প্রমান সহ রেড মার্ক করে দিলেই হয়! কিন্তু স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা প্রমানের জন্য ইন্টিমেশন জমা নেয়ার পর ৩ ধাপের পরীক্ষার জন্য বছরের পর বছর বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জট তৈরি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে চরম অন্তরায়।
আজকে এই বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের ভিতরেও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা প্রায় দুই সপ্তাহ টানা আন্দোলন করে যাচ্ছে।
কেনো এই আন্দোলন?
এই আন্দোলনের মূল কারণ হলো ২০১৭ সালের দারুল ইহসান বনাম বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আপীল বিভাগের পূর্নাঙ্গ রায়ের ১২ নাম্বার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করা অথচ ২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটি তালিকাভুক্ত প্রকিয়া সম্পন্ন করতে পারেণি বার কাউন্সিল যা সর্বোচ্চ আদালতের রায় অবমাননার সামিল।
২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এম সি কিউ পরীক্ষার তারিখের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে অনশন করতে হয় শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত!
কোনঠাসা হয়ে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখনই তৈরি হয় বিপ্লবের। বিপ্লব তার নিজের তাগিদে আসে এবং নিজের স্বার্থেই হাল ধরার জন্য নেতা বানিয়ে দেয়। আজ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের এই জাগরণের নেতা সকল শিক্ষানবিশ আইনজীবী। সবাই আজকে সোচ্চার। সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের কাজ নিজে করে খাবে কোন ভেতন নাই, ভাতা নাই শুধু একটু পরিচয়ের জন্য তারা আজ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে অহিংস আন্দোলন করে যাচ্ছে।
কোন বিপ্লব ই ব্যর্থ হয়নি এই আইন বিল্পব ও ব্যর্থ হবেনা ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের দাবী আদায়ের মাধ্যমেই এই অহিংস আন্দোলন শেষ করে দিবে তা চিন্তা করা ভুল।শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বর্তমান দাবী ‘২০১৭ এবং ২০২০ সালের এম সি কিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের গেজেট প্রকাশ করে সনদের দাবী’ মেনে নিলেই আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে তা একদম সঠিক না!
এই আন্দোলনের কারণে পরবর্তী জেনারেশন কিভাবে দাবী আদায় করতে হয় তারা শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং নিজেদের যৌক্তিক দাবীতে ঝাপিয়ে পড়বে এইটাই প্রকৃতির নিয়ম।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত —
১. এনরোলমেন্ট প্রসেস থেকে লিখিত পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়া উচিত। সময় নষ্ট ছাড়া এই পরীক্ষা প্রিলি উত্তীর্ণদের কোন মেধা যাচাই করার ভূমিকা রাখেনা।
২.প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করা এবং বার কাউন্সিলের নির্বাচনের মতো পরীক্ষার জন্যও নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা।
৩.এম সি কিউ অথবা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের এনরোলমেন্ট পরীক্ষা পদ্ধতি অনুযায়ী ওপেন বুক এক্সাম এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রতি বছর সনদ প্রদান করা।
৪. শিক্ষানবিশ থাকাকালীন ৫০০ টাকা ভাতা এবং ৬ মাস যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
উপর্যুক্ত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের দীর্ঘ জট নিরসন সহ বিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে তৈরি হয়ে আইনাঙ্গনে প্রবেশ করা সম্ভব যা দেশের আইনাঙ্গনের উন্নয়নের জন্য সময়ের দাবী।
Discussion about this post