স্বাধীনতা অর্জন ও একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতি হিসেবে আমাদের একটি ঐতিহাসিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের সংবিধান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর কয়েক লাখ নির্যাতিত নারীর তপ্ত দীর্ঘশ্বাস। তাই জাতি হিসেবে সংবিধান রক্ষা করা এবং তার সার্বভৌমত্ব বজায় রাখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ। নির্বাহী, বিচার ও আইন—যে কোনো আদর্শ রাষ্ট্রের জন্য এ তিনটি বিভাগেরই গুরুত্ব সমান। আইন বিভাগ যেমন আইন প্রণয়ন করে, তেমনি নির্বাহী বিভাগ প্রণীত আইনের সঠিক প্রয়োগ করে আর বিচার বিভাগ এই আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেন অসাংবিধানিক কিছু না ঘটে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং আইনের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করে। তাই আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি বিভাগের কোনোটিই কারো উপরস্থ বা অধীন নয়। তিনটি বিভাগের কোনোটিই কম গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং সব বিভাগই সমান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আমাদের স্মরণ রাখতে হবে তাহলো আমাদের সংবিধানের মূল চেতনা হচ্ছে সুপ্রিমেসি অব কনস্টিটিউশন বা সাংবিধানিক প্রাধান্য। বিশেষ কোনো একটি বিভাগের প্রাধান্য নয়।
আমাদের সংবিধান আমাদেরকে সংবিধান মোতাবেক বাধ্যতামূলক করে বলেছেঃ
Article 7. (1) All powers in the Republic belong to the people, and their exercise on behalf of the people shall be effected only under, and by the authority of, this Constitution.
(2) This Constitution is, as the solemn expression of the will of the people, the supreme law of the Republic, and if any other law is inconsistent with this Constitution that other law shall, to the extent of the inconsistency, be void.
আমরা জানি আমাদের সংবিধানের মূল চেতনা হলো, সুপ্রিমেসি অব কনস্টিটিউশন বা সাংবিধানিক প্রাধান্য। সুপ্রিমেসি অব কনস্টিটিউশন বা সাংবিধানিক প্রাধান্য রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করা উচিত তাহলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সহায়তা করা। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ যথা সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে স্বাধীনভাবে সাংবিধানিক সীমারেখার মধ্যে কাজ করতে দেওয়া। মনে রাখতে হবে, কেউ কারো উপরস্থ বা অধীন নয়। তিনটি বিভাগের কোনোটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং তিনটি সমান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তাহলো স্বাধীনতা এবং দায়বদ্ধতা এক নয়। প্রত্যেকটি বিভাগকে কোথাও না কোথাও কারো না কারো কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। আসলে সংবিধান অনুযায়ী কেউই দায়বদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয়। সর্বোপরি জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা যদি খেয়াল করি আজকে সুপ্রীম কোর্ট দিনের পর দিন বন্ধ হয়ে থাকায় পুরো বিচার বিভাগের দায়িত্ব পালনে স্থবিরতা বিরাজ করছে। শুধু মাত্র বিচার বিভাগ কাজ করছে না অথচ রাষ্ট্র চলার অন্যতম অংশ এই বিচার বিভাগ। নিম্ন আদালতে কিছু কিছু ব্যবস্থা চলমান তাও আইন মন্ত্রনালয় অর্থ্যাত নির্বাহী বিভাগই কার্যকর।
দেশে এখনও সংবিধান মোতাবেক ১৪১এ অনুচ্ছেদ বর্নিত কোন জরুরী অবস্থা নেই। তবুও বিচার প্রার্থীগন বিচার পাওয়া হতে বিরত থাকার কোন সাংবিধানিক সুযোগ নাই।
যেহেতু বিচার বিভাগের সতন্ত্রতা আছে যেহেতু বিচার বিভাগেরই দায়িত্ব সেটা কার্যকর করা।
সাধারণ ছুটির মতো বিচার বিভাগ টানা বন্ধ রাখলে রাষ্ট্রের একটি অংশ স্থাগিতের মতো কার্যত বিরাজমান, তাতে রাষ্ট্র অকার্যকর হিসেবে দৃশ্যমান হবে। বিশ্বের প্রায় রাষ্ট্র ই জুডিসিয়ারী চালু রেখেছে। আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অল্পপরিসরে হলেও তা চালুর ব্যবস্থা করা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মোঃ ইমরান হোসাইন রুমেল
এডভোকেট
সুপ্রীম কোর্ট, বাংলাদেশ
01716621270
Discussion about this post