বিনোদন প্রতিবেদক: বাংলা সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ। তার রহস্যজনক মৃত্যুর ২৩ বছর পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘ এই সময়েও সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। কয়েক দফা তদন্তে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তা অদ্যাবধি মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার, সুহৃদ ও অগুনতি ভক্ত।
সালমান শাহ’র রহস্যজনক মৃত্যুর মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো তদন্তকারী সংস্থার প্রতিবেদন তার পরিবার গ্রহন করেনি। প্রথমে থানা পুলিশ পরে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে। সেটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর সালমান শাহ অপমৃত্যু নাকি হত্যার শিকার তা নিশ্চিত হতে আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেটাও প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর র্যাব এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট তদন্ত সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় পিবিআই সদর দফতরে সালমান শাহর হত্যার রহস্য নিয়ে কথা বলবে তদন্ত সংস্থা।সংবাদ সম্মেলনে সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে কথা বলবেন পিবিআইর প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
পিবিআইর ঢাকা মেট্রো উত্তর জোনের এসপি বশির এক খুদেবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এতদিন অনেক কথা হয়েছে, মামলার তদন্ত অনেকে করেছেন। অনেকবারই নারাজি দেয়া হয়েছে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে। তবে আদালত কর্তৃক পিবিআই দায়িত্ব পাওয়ার পর এ ব্যাপারে অনেক কাজ হয়েছে। যার যার সঙ্গে কথা বলা বা জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার, করা হয়েছে। এখন উপসংহারের পালা। সালমাহ শাহ অপমৃত্যু নাকি হত্যার শিকার সেটাই এখন জানানোর পালা। আজ সেটাই জানাবেন পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
এর আগে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর পিবিআই সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে আদালতে মামলার ‘তদন্ত অগ্রগতি’ প্রতিবেদন দাখিল করে। তবে সেই প্রতিবেদনেও ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’র কোনো তথ্য দেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন এ মামলার অনেক সাক্ষী ও আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে খোদ তদন্ত সংস্থাই হিমশিম খাচ্ছে। পরিপ্রেক্ষিতে আজ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে পিবিআই।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।
১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন।
২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।
মামলাটি এরপর র্যাব তদন্ত করে। তবে র্যাবের দ্বারা তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যাবকে মামলাটি আর না তদন্ত করার আদেশ দেন। তখন থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে আছে পিবিআই।
Discussion about this post