আরো একটি ৭ নভেম্বর সমাগত। দিনটি স্মরণীয় হয়ে আছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রার ঐতিহাসিক দিন হিসেবে। স্বাধীনতার চার বছর যেতে না যেতেই স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছিল। ১৯৭১ সালের পর এদেশের ছাত্র-জনতা ও সশস্ত্র বাহিনী সেদিন আরো একবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং দেশ-বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। প্রথমে সে ইতিহাস স্মরণ করা যাক।
সবকিছু ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর রাত থেকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে। সে বছরের ১৫ আগস্ট এক অভ্যুত্থানে একদলীয় বাকশাল সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি পদটিতে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন শেখ মুজিবেরই সহকর্মী ও মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ। শেখ মুজিবের মন্ত্রীদের নিয়েই মোশতাক সরকার গঠন করেছিলেন। ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করে সেনাপ্রধানের পদ দখল করেছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। মোশতাককে বঙ্গভবনে বন্দি করা হয়েছিল। খালেদ মোশাররফের এই অভ্যুত্থান বাকশালী শাসনে ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ভারতপন্থী পদপে হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। ওদিকে সেনাবাহিনীর মধ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বি। ফলে জনগণের পাশাপাশি সেনাবাহিনীতেও খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে চরম বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। ৬ নভেম্বর রাত থেকে শুরু হয়েছিল সিপাহী-জনতার বিপ্লব। এই বিপ্লবে কয়েকজন সহযোগীসহ খালেদ মোশাররফ নিহত হয়েছিলেন। অন্যদিকে জিয়াউর রহমান মুক্তি পেলেও একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী বাংলাদেশকে ভারতের অধীনস্থ করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে হানাহানি সৃষ্টি করার ভয়ংকর পদক্ষেপ নিয়েছিল। যে চেইন অব কমান্ড সশস্ত্র বাহিনীর অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য, ষড়যন্ত্রকারীরা তা ভেঙে ফেলতে শুরু করেছিল। সিপাহীরা গরিবের সন্তান বলে ধনীর সন্তান অফিসাররা তাদের ওপর নির্যাতন চালান এবং সিপাহী ও অফিসারের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকা অন্যায় এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক স্লোগান তুলেছিল তারা। এর ফলে সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল। শুধু তা-ই নয়, একযোগে অফিসার মাত্রকেই হত্যা করার নিষ্ঠুর অভিযানও শুরু হয়েছিল।
সকল বিষয়ে নির্দেশনা আসছিল একটি বিশেষ কেন্দ্র থেকে। সেখানে নেতৃত্বের আসনে ছিলেন বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের তাত্ত্বিক নেতা। তার সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনী থেকে বিদায় নেয়া পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা অফিসার লে. কর্নেল (অব.) আবু তাহের বীর উত্তম। শেখ মুজিবের আমলে সেনাবাহিনী থেকে বিদায় নেয়া কর্নেল তাহের নিজেকে বঞ্চিত মনে করতেন। তার এ মানসিক বৈকল্যেরই সুযোগ নিয়েছিল ওই দলটিসহ ষড়যন্ত্রকারীরা। কর্নেল তাহেরকে সামনে রেখে তারা এমনভাবেই অফিসার হত্যার অভিযান চালাতে চেয়েছিল যার পরিণতিতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে একমাত্র তাহের ছাড়া অন্য কোনো অফিসার থাকতে পারতেন না। আর তাহের নিজে যেহেতু ওই দলটির মাধ্যমে ভারতীয় ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন, সেহেতু ধরে নেয়া যায়, স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের সশস্ত্র বাহিনী অফিসারবিহীন হয়ে পড়তো। পরিণতিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়া ভারতের জন্য কোনো ব্যাপারই হতো না। এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগের ভূমিকা সম্পর্কে কথা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন অফিসার শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও আওয়ামী লীগ গোটা সেনা বাহিনীকেই শত্রু“ মনে করতো।
কিন্তু জাতির ভাগ্য ভালো, সিপাহী এবং নন-কমিশন্ড অফিসারদের সমন্বয়ে সেনাবাহিনীরই একটি অংশ সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন (এ ব্যাপারেও কর্নেল তাহেরকে যুক্ত করে একটি বানানো গল্প রয়েছে, তথ্যনিষ্ঠ ইতিহাস যাকে সমর্থন করে না)। জেনারেল জিয়াও বলিষ্ঠতার সঙ্গেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিলেন। প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টে ঝটিকা সফরে গেছেন তিনি। বলেছেন, তার এবং সিপাহী ও নন-কমিশন্ড অফিসারদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই একই মাতৃভূমির জন্য কাজ করছেন তারা। জিয়াউর রহমানর মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রিয় জেনারেলের এ ধরনের তৎপরতা ও বক্তব্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অনতিবিলম্বে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ঘটিয়েছিল। ষড়যন্ত্র বুঝতেও তাদের দেরি হয়নি। ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অনেকের আবার প্রত্য অভিজ্ঞতাও ছিল। যেমন একজন সুবেদার মেজর জানিয়েছিলেন, লালমাটিয়ার একটি বাড়িতে কর্নেল তাহেরের উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় তিনি ভারতীয় হাই কমিশনের একজন সেনা অফিসারকে উপস্থিত থাকতে দেখেছিলেন। এ থেকেই তার মনোভাব পাল্টে গিয়েছিল। তার মতো অভিজ্ঞতা হয়েছিল আরো অনেকেরই। ফলে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যেও দ্রুত প্রচারিত হয়েছিল যে, অফিসার হত্যার অভিযানের পেছনে ভারতের ভূমিকা রয়েছে। মূলত এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনা ও কারণে জেনারেল জিয়াউর রহমান সশস্ত্র বাহিনীতে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে এবং সশস্ত্র বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে পেরেছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই সকল ক্যান্টনমেন্টে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছিল। পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চেইন অব কমান্ড। সবচেয়ে বড় কথা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সশস্ত্র বাহিনীকে নির্মূল করে ফেলা সম্ভব হয়নি। কর্নেল তাহেরকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্রকারীরা যদি সফল হতো তাহলে জিয়াউর রহমানসহ শত শত অফিসারকে প্রাণ হারাতে হতো। দেশের সশস্ত্র বাহিনীও নির্মূল হয়ে যেতো।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছিল জিয়াউর রহমানের প্রধান অবদান। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন সরকার ‘বাকশাল’ নামে একটি মাত্র দল রেখে অন্য সকল দলকে নিষিদ্ধ করেছিল। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একদলীয় শাসনব্যবস্থা। সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক ও ব্যবসায়ী থেকে সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার পর্যন্ত প্রত্যেকের জন্য বাকশালের সদস্য হওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। এ ব্যবস্থায় সর্বময় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছিল শেখ মুজিবের হাতে। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রাতারাতি তিনি রাষ্ট্রপতি হয়ে বসেছিলেন। বাকশালেরও চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। বাকশালের গঠনতন্ত্রে সকল ক্ষমতা এই চেয়ারম্যানের হাতে দেয়া হয়েছিল কিন্তু চেয়ারম্যান কিভাবে নির্বাচিত হবেন তার কোনো উল্লেখ পর্যন্ত ছিল না। অর্থাৎ শেখ মুজিবকে একই সঙ্গে স্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং বাকশালের আজীবন চেয়ারম্যান বানানো হয়েছিল। তাকে সরানোর বা সরকার পরিবর্তন করার কোনো ব্যবস্থাই বাকশালের গঠনতন্ত্রে রাখা হয়নি। ফলে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভয়ঙ্কর ধরনের অসামরিক স্বৈরশাসন। শেখ মুজিবের তো প্রশ্নই ওঠে না, বাকশাল বা সরকারের বিরুদ্ধেও তখন টু শব্দটি করার উপায় ছিল না। এই সুযোগে আওয়ামী-বাকশালীরা দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সম্ভাব্য বিরোধিতাকারীদের উচ্ছেদের জন্যও একযোগে নিষ্ঠুর অভিযান শুরু হয়েছিল। কোনো হত্যা বা নির্যাতনের বিরুদ্ধেই তখন প্রতিবাদ জানানোর উপায় ছিল না। সমগ্র জাতি বন্দি হয়ে পড়েছিল।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশ ও দেশের মানুষকে ওই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আগত জেনারেল জিয়াউর রহমান বাকশালের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন। তিনি সেই সঙ্গে খুলে দিয়েছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের দরজা। এই পথ ধরেই বাতিল হয়ে যাওয়া দলগুলো আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসার এবং তৎপরতা চালানোর সুযোগ পেয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের নামে শেখ মুজিব ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল মাত্রকেই নিষিদ্ধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমান সে দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে আওয়ামী লীগকে ফিরে আসার সুযোগ দেয়াও ছিল জিয়াউর রহমানের অবদান। শেখ হাসিনাও জিয়ার কারনে দেশে ফিরে আসতে পেরেছিলেন (শেখ হাসিনা দেশে এসেছিলেন ১৯৮১ সালের ১৭ মে)।
শুধু বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার আমলেই প্রথমবারের মতো দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে (১৯৭৮), তার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এসবই সম্ভব হয়েছিল ৭ নভেম্বরের কারণে। ছাত্র-জনতা ও সশস্ত্র বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সফল বিপ্লবই পরিবর্তনের ভিত্তি ও পথ নির্মাণ করেছিল।
সব মিলিয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য দিক-নির্দেশনা হয়ে রয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন জিয়াউর রহমান।
কিন্তু আপত্তি ও দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ইতিহাস শেখানোর বিচিত্র অভিযান চালাতে গিয়ে বিশেষ একটি মহল সম্প্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিন্দিত করার চেষ্টা শুরু করেছেন। তারা এমনকি স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গেও জিয়াকে একাকার করে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের অভিমত, ‘মোশতাক-জিয়া চক্র’ নাকি সংবিধানকে ‘নিম্ন মর্যাদায়’ ঠেলে দিয়ে এরশাদের মতো রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন! বিশেষ মহলটি আরো বলেছেন, জিয়ার পথ অনুসরণ করে এরশাদ সংবিধানের ‘ভঙ্গস্তম্ভ’ নিয়ে দেশ চালিয়ে গেছেন। এ ধরনের পর্যবেণ ও অভিমত তাৎপর্যপূর্ণ সন্দেহ নেই, কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মূলত বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্য থেকে আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই এরশাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে। এতদিন পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলসহ এরশাদের যেসব কর্মকাণ্ডকে ‘ষড়যন্ত্র’ ও ‘রাষ্ট্রদোহিতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে অবৈধ সেসব কর্মকাণ্ডকেও আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিল। সামরিক শাসনের নয় বছরে (১৯৮২-৯০) নানা কৌশলে এরশাদকে টিকিয়েও রেখেছিল আওয়ামী লীগ। ১৯৯০-এর ডিসেম্বরে গণঅভ্যুত্থানের চাপে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্তও শেখ হাসিনা এবং এরশাদ একযোগে কাজ করে চলেছেন। এরশাদের জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী মহাজোটের দ্বিতীয় প্রধান শরিক দল। ইতিহাস যারা শেখাতে চাচ্ছেন তারা কিন্তু এসব কথার ধারে-কাছেও যাচ্ছেন না।
অন্যদিকে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস জিয়ার সঙ্গে এরশাদকে একাকার করে ফেলার চেষ্টাকে সমর্থন করে না। তাছাড়া জিয়ার বিরুদ্ধে যারা বলছেন তারা আবার এ কথাও স্বীকার করছেন যে, ‘প্রথম সামরিক শাসন’ জারি করেছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। মোশতাক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং বাকশাল মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য। অর্থাৎ সামরিক শাসন জারি এবং মুজিব-উত্তর ক্ষমতার রদবদলে জিয়াউর রহমানের কোনো রকম প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল না। বাস্তবে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সংঘটিত সিপাহী-জনতার যে বিপ্লব দেশের মানুষকে বাকশালসৃষ্ট শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছিল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন সে বিপ্লব কেন্দ্রিক ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে। জিয়া অবশ্যই সে বিপ্লবের স্রষ্টা ছিলেন না। প্রসঙ্গক্রমে শুরুতে ওই দিনগুলোর সংক্ষেপে বর্ণিত ইতিহাস বিচেনায় রাখা দরকার।
ইতিহাসের বিশ্লেষণে এ সত্যই প্রতিষ্ঠিত হবে যে, জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা-সার্বভুমত্বই শুধু রক্ষা করেননি, সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য দরজা খুলে দেয়ার পাশাপাশি সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্যও গড়ে তুলেছিলেন। সুতরাং এমন মন্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় যে, জিয়া ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ’ করেছিলেন। একই কারণে জিয়ার সঙ্গে এরশাদেরও কোনো তুলনা চলতে পারে না। কারণ, জিয়া ক্ষমতায় এসেছিলেন ঘটনাক্রমে, অন্যদিকে এরশাদ ছিলেন ষড়যন্ত্রের পথে ক্ষমতা দখলকারী।লিখক:রাজনীতিবিদ/কলামিস্ট
Discussion about this post