গত কয়েকদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা পঞ্চাশেরও উপরে । রাস্তায় গাড়িগুলো দুমড়ে মুচরে যাচ্ছেতাই অবস্থা । মাইক্রোবাসের ভাঙ্গা অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল রাস্তায় গাড়িগুলো চলার সময় কোন নিয়মই বোধহয় মানেনা । যদি মেনেই থাকবে তবে এমন দুর্ঘটনা কিভাবে হয় ! ট্রাক পিছন থেকে এসে ধাক্কা দিয়ে প্রায়ই জীবন কেড়ে নিচ্ছে মানুষের । এমনও ঘটনা রয়েছে ট্রাক ঢুকে গেছে দোকানের ভেতর এবং মারা গেছে ঘুমন্ত মানুষ । প্রতিনিয়ত কান্না বাড়ছে । শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে । একই পরিবারের সবগুলো মানুষই যখন নিহত হয়ে যায় তখনও কি আমরা শুধুই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসই বলবো ?
শুধু তাই নয় একটু খেয়াল করলে গত কয়েকদিনের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অবস্থা বিবেচনায় দেখা যায় বেশির ভাগই দেখা যাবে অসচেতনতা । মাত্রাতিরিক্ত গতি ও সামনে না দেখাও বড় কারণ । একটি যানবাহন ঠিকভাবে চললেও অন্য যানবাহনের ঝুকিপূর্ণ আচরণের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে ।
সেদিন আমার মটর বাইক ঠিক করাতে গিয়ে বসেছিলাম গ্যারেজে । পাশেই কাজ করতে দেখলাম একটি ভাঙ্গা দুমরে মুচরে যাওয়া সিএনজির । সেই সিএনজিটিও দুর্ঘটনার স্বীকার । আমি গ্যারেজে যে কাজ করছিলো তাকে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে সিএনজিটি দুর্ঘটনার স্বীকার হল । চালক সামনে থাকায় সে তেমন কিছু না বলে বিষয়টি এড়িয়ে গেল । চালক চলে যাওয়ার পর সে জানালো চালক “বাবা” (ইয়াবা) খায় । সেদিন একটু বেশি খায়াফেলছিলো, দ্যাহেন না নতুন গাড়িটার কি অবস্থা ! আমি জিজ্ঞেস করলাম কেউ বড় ধরনের আঘাত পায়নি ? সে বলল একজনের মাথা এবং কান দিয়ে রক্ত বের হেইছে তবে বাঁচছে না মরছে জানিনা !
আরও একটি ঘটনা বলি । কিছুদিন আগে পরিবহন শিশু শ্রমিকের স্বাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম । তাকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম চালকেরা কি আইন মানে ? সে বলছিলো বেশির ভাগই ফাকি দিতে চায় । তার সাথে সাথে সে আরেকটি কথা বলে তা হল বেশির ভাগ চালকই গাঁজা সেবন করে । মাঝে মাঝে কেউ কেউ নাকি বাবাও খায় । এই শিশু শ্রমিক ছেলেটিও এগুলো দেখে দেখে বড় হচ্ছে । আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমাদের মত শিশুরাও কি এমন মাদকের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে ? সে ভয়ানক উত্তর দিয়ে আমাকে বলেছিল অনেকেই এহনি বিড়ি খায়, মাঝে মাঝে আবার গন্ধও নেয় (আঠার গন্ধ নিয়ে নেশা করা)।
কতগুলো কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে তা যদি আপনি খতিয়ে দেখেন তবে এই কারণটিই একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে । বেশিরভাগ চালকের প্রতিই অভিযোগ রয়েছে তারা গাড়ি চালনার সময় নেশাগ্রস্থ্য থাকে । আর যদি সত্যিই নেশাগ্রস্থ্য হয়েই কেউ গাড়ি চালায় তবে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে বলে সম্ভাবনা খুব কম ।
চালকদের নেশা গ্রস্থ্যতার পেছনে শুধুমাত্র চালরাই দায়ী নয় । দায়ী নেশা বস্তুর সহজ লভ্যতা ও শিশু শ্রমিকদের নেশার মধ্যে জড়িযে পড়া ।
অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার পর সত্যিকারের দোষীর কোন হদিস পাওয়া যায়না । গাড়ির ফিটনেস, নিয়ম না মানা এবং গতির অপ্রতিরোধ্য হারের সাথে সাথে চালকের নেশাও দুর্ঘটনা বাড়তে যথেষ্ঠ ভূমিকা থাকতে পারে ।
ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সময় অবশ্যই ডাক্তারি পরীক্ষা বাধ্যতা মূলক করা উচিৎ । শুধু তাই নয় যে গাড়িগুলো দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে সেই গাড়িগুলোর চালকদেরও ডাক্তারি পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ তারা নেশা করে কি না । এর সাথে সাথে প্রতি বছর প্রত্যেকজন চালককে ডোপ টেস্ট করা বাধ্যতা মূলক করে আইন প্রনয়ন করতে হবে । যদি কেউ এই টেস্ট না করে তবে এর জন্য শাস্তির আওতাও বৃদ্ধি করতে হবে ।
যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে তা সত্যিই খুব উদ্বেগজনক । সকল আইন মানা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রনয়নের সময় সঠিক ব্যক্তি নির্বাচন করাই হতে পারে বড় সমাধান । ডাক্তারি পরীক্ষা বাধ্যমূলক করার ব্যপারে সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি ও প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে হলেও ডোপ টেস্ট প্রতি বছর একবার করিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে জমাদানের নিয়ম চালু করার ব্যপারে পদক্ষেপ আশা করছি । এই টেস্ট যাতে দুর্নীতি মুক্ত হয় এ জন্য এই টেস্ট করার জন্য সকল সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত সিএমএইচ হাসপাতালগুলো নির্ধারিত করে দেওয়ার ব্যপারেও মনোযোগ আকর্ষন করছি ।
নেশা একদিকে সরাসরি মৃত্যু ঘটায় অন্যদিকে নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির কারণে বিপদে পড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হাজারো মানুষ । তাই চালকদের নেশা থেকে বের হয়ে আসতে এই বিষয়গুলো সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভাবার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আকুল আবেদন করছি ।
সাঈদ চৌধুরী
রসায়নবিদ ও
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post