নিম্ন আদালতের বিচারক প্রতি বুলছে ২৮০০ মামলা। রয়েছে মাত্র ২৮ লাখ বিচারাধীন মামলা। নিম্ন আদালতে ১ হাজার ৬৫৫টি বিচারকের মধ্যে আবার ৬৮৫টি বিচারকের পদই শূন্য। প্রতি বিচারকের কাঁধে ২৮০০ মামলা বিচারের ভার। ৩ হাজার নতুন বিচারক নিয়োগ জরুরী ।<br /> আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে বিচারকের সংখ্যা বাড়িয়ে অন্তত ৫ হাজার করতে হবে। পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে। আদালতগুলোতে এজলাসের সংখ্যা খুবই কম। প্রচুর নতুন এজলাস স্থাপন করতে হবে। তা না হলে বিচারপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি কোনোভাবেই কমানো যাবে না।<br /> আইন কমিশন গত জুন মাসে সরকারের কাছে দেওয়া এক সুপারিশে বলেছে, বর্তমানে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৯টি ফৌজদারি মামলার বিপরীতে মাত্র ৪২০ জনের মতো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। এ ছাড়া সহকারী জজ থেকে শুরু করে জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা পর্যায়ের অন্যান্য আদালতে আরো প্রায় ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৬টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন। এই বিপুল পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে মাত্র এক হাজার ১০০ জন বিচারক আছেন। দেশের নিম্ন আদালতে বিচারাধীন প্রায় ২৬ লাখ (তখনকার হিসাব অনুযায়ী) মামলাসহ নতুন দায়ের হওয়া মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে কমপক্ষে আরো তিন হাজার নতুন বিচারক নিয়োগ করা অতি আবশ্যক।<br /> আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এখন আদালতে মামলা নিষ্পত্তির যে কসরত চলছে তা কোনোভাইে সফলতার মুখ দেখবে না বিচারক না বাড়ালে।<br /> আমরা সরকারকে বলেছি, মন্ত্রণালয়কে বলেছি এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে। আশা করি সরকার উদ্যোগ নেবে এবং সফল হবে।<br /> সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, নিম্ন আদালতে যে পরিমাণ বিচারাধীন মামলা, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়কে বলেছেন ও এখনো তাগাদা দিচ্ছেন।<br /> বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো ও নিয়োগ দেওয়ার দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ের। তাই এই উদ্যোগ মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন নিয়োগের ব্যবস্থা নেবে।</p> নিম্ন আদালতে মামলার পরিস্থিতি- নিম্ন আদালতগুলোতে ২০১৪ সালের শেষে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৮৬০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যা ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলা ছিল ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬০টি। ২০১২ সালের শেষে সব আদালত মিলিয়ে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল ২১ লাখ ৩২ হাজার ৪৬টি মামলা। অর্থাৎ এক বছরে মামলা বেড়েছে প্রায় তিন লাখ। এছাড়া বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং সব ধরনের ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৭টি এবং সব ধরনের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৯টি মামলা বিচারাধীন। যা ২০১৪ সালের শুরুতে ছিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৯০টি এবং সব ধরনের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ লাখ ৯ <span style="font-size: 14pt;">হাজার ৪৯১টি। এর মধ্যে এমনো অনেক মামলা রয়েছে যা ২০-২৫ বছরেরও অধিক পুরনো।</span></p> ">নতুন মামলা দায়ের ও ঝুলে থাকা মামলা- ২০১৪ সালের ৩১ ডিসম্বর পর্যন্ত দেশের সব জেলা ও দায়রা জজসহ সকল প্রকার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ছিল ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৭টি। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১১ লাখ ১২ হাজার ১৫৯টি ও ফৌজদারি পাঁচ লাখ ২৫ হাজার ৮০৮টি। একই সময় পর্যন্ত সব ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সিএমএম/সিজেএম) বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা ছিল নয় লাখ ৮৫ হাজার ৫০৯টি মামলা। অথচ একই সময়ে দেশের সব জেলা ও দায়রাজজসহ সব ধরণের ট্রাইব্যুনালে দায়ের হয় সাত লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৪টি এবং সব ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাত লাখ ৯২ হাজার ৪৩৩টি মামলা। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় সব জেলা ও দায়রা জজসহ সকল প্রকার ট্রাইব্যুনালে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৭টি এবং সব ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাত লাখ ৩৪ হাজার ৩৫৯টি মামলা।<br /> অর্থাৎ নিন্ম আদালতে যে সংখ্যক নতুন মামলা দায়ের হয়, তার তুলনায় নিষ্পত্তি ছিল কম। বিলম্ব বিচার বিচারপ্রার্থীর খরচ বাড়ায়। এই বাড়তি খরচের কারণে সংশ্লিষ্ট পরিবারের খাদ্য, শিক্ষা, জীবনযাপনসহ সবদিক প্রভাবিত হয়। বিলম্ব বিচার যেহেতু অবিচার করারই শামিল, সেহেতু অহেতুক বিলম্ব যেসব মামলায় ঘটে সেসব মামলায় অভিযুক্তদেরকে এই বিলম্বের ক্ষতিপূরণ কীভাবে দেওয়া যায় তা সক্রিয় বিবেচনায় রাখতে হবে। বিচার ব্যবস্থাকে গতিশীল করার বিষয়টি একটি দ্বিপাক্ষিক প্রশ্ন। বিচারক ও আদালত প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি আইনজীবীদেরকেও মামলাজট কমানোর ক্ষেত্রে ভিত্তিহীন মামলা দায়েরকেও নিরুৎসাহিত করে দায়িত্বশীলতায় পরিচয় দিতে হবে।<br /> নিম্ন আদালতে বিচারাধীন প্রায় ২৮ লাখ বিচারাধীন মামলাসহ নতুন দায়ের হওয়া মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে কমপক্ষে আরো তিন হাজার নতুন বিচারক নিয়োগ করা অতি আবশ্যক।</p>
Discussion about this post