নিজস্ব প্রতিবেদক: পাঁচ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা গেলেন ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুসরাতকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন।
এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে শারীরিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি। লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয় তাকে। তবে লাইফ সাপোর্টও তেমন কাজ করছিল না। এরপর চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় মাদ্রারাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই ভবনের চার তলায় যান। এসময় বোরকা পড়া চার জন মামলা তুলে নিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
আগুনে হত্যাচেষ্টার পর নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আগুনে তার শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠণ করা হয়। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগুনে ঝলসে যাওয়ার পর জবানবন্দিতে নুসরাত বলেছিলেন, বোরকায় মুখ ঢাকা থাকায় ওই চারজনের কাউকে তিনি চিনতে পারেননি। তবে এক পর্যায়ে তাদের একজন আরেকজনকে শম্পা নামে ডেকেছে, সেটা তার মনে আছে।
আগুনে নুসরাতের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টা অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার শেষে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম জানান, সফল অপারেশন হয়েছে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে।
নুসরাতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শ্লীলতাহানির অভিযোগে ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ-দৌলা বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে নুসরাতকে ডেকে নেন। এরপর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ।
পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এদিকে মঙ্গলবার রাতে সিরাজ-উদ-দৌলার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন, তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। বাকি সাতজন হলেন- পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, সাবেক ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের। এছাড়া ঘটনার সময় ‘হাতমোজা, চশমা ও বোরকা’ পরিহিত আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।




Discussion about this post