নিজস্ব প্রতিবেদক: সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাফির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তার মৃত্যুর সংবাদে ফেনীসহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তার লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের হিমঘর থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর তার লাশ ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হবে। বাদ আসর সোনাগাজী সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে এসে দুর্বৃত্তরা তাকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। পাঁচ দিন ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন রাফি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার নির্দেশ দিলেও শারীরিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
গত ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে যৌন হয়রানি করে। এ অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় তার এ করুণ পরিণতি বলে জানা যায়। এ দিকে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদদৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলো- পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের। ইতোমধ্যে ওই মামলার তিন আসামিসহ অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ সাতজনকে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তাকে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: মোয়াজ্জেম হোসেনকেও প্রত্যাহার করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রাফিকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা: অগ্নিদগ্ধ মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নুসরাত জাহান রাফির চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা: আবুল কালাম। তিনি বলেন, বুধবার সকাল থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একাধিকবার তার হার্ট অ্যাটাক করেছিল, তার পরও সে সার্ভাইভ করছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টায় সে মারা যায়।
নুসরাতের চাচাতো ভাই ওমর ফারুক বলেন, দুপুরে রক্তের দরকার পড়েছিল, তখন আমরা রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু চিকিৎসকরা সকাল থেকে বারবার আমাদের নুসরাতের অবস্থার অবনতির কথা বলছিলেন। চিকিৎসকদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। মৃত্যুর খবর শুনে বার্ন ইউনিটের আইসিইউর সামনে নুসরাতের বাবা, বড় ভাই ও মামা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নুসরাতের চাচাতো ভাই ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা নুসরাত হত্যার বিচার চাই, আর কিছু বলার নাই। যারা এমন একটা কাজ করল, তারা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমরা তাদের শাস্তি চাই।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘নুসরাতকে যে বাঁচানো গেল না, কারণ হলো ৮৫ ভাগ মেজর বার্ন। এর মধ্যে ৬০ ভাগ গভীর পোড়া। তার শ্বাসতন্ত্র পুড়ে গেছে। কেরোসিন নিজেই টক্সিক। এটা ফুসফুস এবং ব্রেনের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। এই চারটিই তার মৃত্যুর প্রধান কারণ বলা যায়।




Discussion about this post