বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, বরগুনা সদরে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলায় গ্রেফতার তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি এই হত্যায় জড়িত। তিনি হত্যা পরিকল্পনায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তিন নম্বর আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীকে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেনের নেতৃত্বে সকাল ১০টায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, এ পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া সব আসামি এবং মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কারণে সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মিন্নিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিন্নি এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতেন। শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে যা যা প্রয়োজন, তা সম্পাদনে খুনিদের সব ধরনের মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন মিন্নি। মিন্নি নিজেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে তাঁকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আগে ও পরে খুনিদের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনও হয়েছে। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দু-একটি গণমাধ্যম রিফাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, রিফাতের হত্যাকাণ্ডটি কোনো মাদকের কারণে ঘটেনি, ঘটেছে ব্যক্তিগত জিঘাংসার কারণে। মাদক বা অন্য কোনো ইস্যুর কথা উঠলে মামলাটির ফোকাস ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে পারে। এ মামলায় বাদী যাদের হত্যাকারী দাবি করেছেন, আমরা তাদের প্রায় সবাইকেই ধরেছি এবং কাউকেই ছাড় দিচ্ছি না। এ পর্যন্ত আমরা এজাহারভুক্ত আটজনকে গ্রেফতার করেছি। সর্বমোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতএব, এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।
এ মামলায় নয়ন বন্ডদের যারা ছত্রছায়া দিয়েছে, তাদের কী হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, যাদেরই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে মিন্নি যে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেটি বুধবার আদালতকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় মূল নায়ক নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে মিন্নি পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। বুধবার বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হয় মিন্নিকে। পুলিশ মিন্নির সাত দিনের রিমান্ড দাবি করেন। তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির জড়িত থাকার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত একজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মিন্নি এ হত্যা পরিকল্পনায় ছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ও নিহত ব্যক্তির স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। বুধবার তাকে গ্রেফতার করে বরগুনার পুলিশ।
বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। পরে দ্বিতীয় একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হত্যায় মিন্নির সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ গতকাল পর্যন্ত ১৪ জনকে (মিন্নিসহ ১৫ জন) গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, চার জন রিমান্ডে আছে।




Discussion about this post