অতিষ্ঠ যাত্রী শেষ পর্যন্ত বললেন ‘নেভার এগেইন উইথ গ্রিনলাইন’। বিলাসবহুল বলে দিগুন দামে টিকিট কেটে যখন দশগুন ভোগান্তি আর অস্বস্তি নিয়ে ফেরেন তখন এমনতো বলবেনই। গন্তব্যে পৌঁছে যাত্রীদের মনে হলো যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
গ্রিনলাইনে এখন প্রতিটি যাত্রার, প্রতিটি যাত্রীর অভিজ্ঞতা এমনই।
চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরেছেন ফয়সাল কবির। তিনি বললেন, ‘ঢাকার পথে সারারাত মাথায় এসির পানি পড়েছে। সুপারভাইজারকে ডেকে বার বার বলা সত্ত্বেও কোন লাভ হয়নি। রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি এখন থেকে গ্রিনলাইন সম্পূর্ণ বর্জন করেছি।’
এসির পানি পড়া তো সেই পুরনো অভিযোগ। এর চেয়েও অসস্তিকর, ভীতির ঘটনা ঘটিয়ে দিব্যি যাত্রী পারাপার করে চলেছে এই গ্রিনলাইন বাস। রাস্তায় চলন্ত অবস্থায় চাকা খুলে যাওয়ার একাধিক ঘটনার সাক্ষী একাধিক নিরীহ যাত্রী।
এছাড়াও রয়েছে, ইঞ্জিনে তেল ফুরিয়ে যাওয়ার কাহিনী। মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে গাড়ি অচল হয়ে পড়ে-এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন অনেক যাত্রী।
অথচ অপেক্ষাকৃত নিরাপদে আর বিলাসিতায় গন্তব্যে যাওয়া আসার জন্য বেশি দামের গ্রিনলাইনের টিকিট কাটেন তারা।
কথা হচ্ছিলো তৌসিফ জালাল তানিম নামের একজন যাত্রীর সঙ্গে। তার অভিজ্ঞতা একটু বেশিই তিক্ত। বললেন,‘ গ্রিন লাইনের সাথে আমার ৪ টা জার্নি এক্সপিরিয়েন্স রয়েছে। যার দুইটা ছিলো দুর্ঘটনার আর দুই ছিলো গাড়ি বিকল হওয়া। উপরন্তু এদের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। তানিমেরও ঘোষণা, যাইহোক আমার শিক্ষা হয়ে গেছে আর কখনো গ্রিনলাইন নয়।’
মুসতাসিন বিল্লাহ নামের আরেক যাত্রী জানান, একসময় আমি এই সার্ভিস ছাড়া পারতপক্ষে জার্নি করতামনা। এখন চেষ্টা করবো পারতপক্ষে এই সার্ভিসে আর উঠবো না।
তাকিউর রশিদ নামের আরেক যাত্রীর অভিযোগ, মাকে নিয়ে ভ্রমণ করছিলেন। সারা রাত দুজনের গায়ে পানি পড়ছে।
‘জানেন আম্মুকে বাসে উঠার আগে বলেছিলাম এটা বাংলাদেশের সেরা বাস সার্ভিস। কিন্তু বাস থেকে নামার পর মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, বলেন কতটা অসস্তিকর হতে পারে এই পরিস্থিতি।
কাজী আদনান নামের একজন জানান, ঢাকা সিলেট রুটে অনেক বাসের যাত্রী হয়েছেন তিনি কিন্তু গ্রিনলাইনের মত বাজে ড্রাইভিং আর দেখেননি।
একই রুটে গত ফেব্রুয়ারিতে ১২ জন বিদেশি নিয়ে এই বাসে উঠে বিপাকে পড়েছিলেন নায়েমুল হাসান। সিলেট যাওয়ার পথে হবিগঞ্জের একটা জায়গায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, প্রায় আড়াই ঘন্টা বসিয়ে রেখে এরপরে সিলেট থেকে আরেকটা বাস এসে তাদের নিয়ে যায়, জানান তিনি।
কক্সবাজার থেকে ট্যুর অপারেটর মিজানুর রহামন মিল্কি জানান, আমার এক পরিচিতজন বেশ কয়েকবার গ্রিনলাইনের নষ্ট গাড়ির কবলে পড়ে যাত্রা পথে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। সমস্যা হচ্ছে যাত্রী সেবার মান দেখার কিছু নেই আর কোনভাবে গাডি রাস্তায় নামাতে পারলেই হল, মরণের আগ পর্যন্ত চলবেই।
মারুফ আল্লাম নামের আরেকজন বলেন, এটা ফালতু সার্ভিস। আমি কক্সবাজার যাতায়াতে এই বাস ব্যবহার করে প্রচণ্ড বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি। ভালে সিটের আশায় এক সপ্তাহ আগে বুকিং দিয়েছি, অথচ ভ্রমণের দিন আমার সিট পাল্টে দেয়া হয়েছে। আবার ফেরার সময় বাস নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে পরের বাসে আমাদের একদম পেছনের সিটে বসতে বাধ্য করা হয়েছে।
সরাসির বাংলানিউজের পোর্টালে গ্রিনলাইনের একটি নিউজের নিচে এসে মাহফুজুর সায়েক নামে একজন মন্তব্য করেন, সোহাগ পরিবহনের পরে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে বিলাসবহুল হিসেবে গ্রিনলাইনে ভ্রমণ করি। কারণ এ রুটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস বলতে এরাই। তবে এখন থেকে আমি চিন্তা করছি অন্য নন এসি পরিবহণে ভ্রমণ করবো তাও ভালো।
আমাকে ভেবে দেখতে হবে গ্রিনলাইনে আমি কি দিচ্ছি, কি পাচ্ছি । ১২০০ টাকার বিনিময়ে যা পাচ্ছি তা স্রেফ ভোগান্তি ছাড়া কিছু নয়।
সবশেষ গত ৩০ মে চট্রগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া গ্রিনলাইন বাসের যাত্রী হয়েছিলেন মামুন রশীদ। তার বাসের নাম্বার ছিলো ১৪-০৬৮০। সিলেট থেকে চট্রগ্রাম যাবার সময় ট্রেনে সাড়ে ৮ ঘন্টা লেগেছিলো। কিন্তু ফিরার সময় ট্রেন না পেয়ে একটু আরামে আসার জন্য গ্রিনলাইনের টিকিট কাটলেন। রাত সোয়া ৯টায় ছেড়ে এসে সিলেটে পরের দিন সকাল সাড়ে ৯ টায় পৌঁছলো। রাস্তায় সব ভোগান্তি ছিলো বর্তমান।
যাত্রীদের অভিযোগ নিয়ে গ্রিনলাইন বাসের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তিনি কোন অভিযোগ অস্বীকার করেননি তবে এ নিয়ে কোন কথা না বলে লাইন কেটে দেন।
এরপর চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
* এ নিয়ে পরের প্রতিবেদন: গ্রিনলাইনের নকল স্ক্যানিয়া! সুত্র বাংলানিউজ