৩৮ দিন ধরে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থেকেও লাভ হলো না। অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন ভারতে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমের পালিতকন্যা হানিপ্রীত ইনসান। চণ্ডীগড়ের কাছে জিরাকপুর-পাটিয়ালা জাতীয় সড়কের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে হরিয়ানা পুলিশ।
আজ হানিপ্রীতকে পাঁচকুলা আদালতে তোলা হবে। মঙ্গলবার প্রথমে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ তারপর অন্য চ্যানেলে তাকে দেখানো হয়। একাধিক সাক্ষাৎকারে নিজেকে এবং বাবাকে রাম রহিমকে নির্দোষ সাব্যস্ত করার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন হানিপ্রীত। তার খোঁজে পাঞ্জাব, হরিয়ানা চষে বেরিয়েছে পুলিশ। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নেপালেও তার খোঁজ করা হয়েছে। পাঁচকুলার পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, হানিপ্রীতের সঙ্গে আরো এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারের জন্য হানিপ্রীতের সঙ্গে কথা বলে ইন্ডিয়া টুডে। সেখানে তিনি জানান, সংবাদ মাধ্যম যে হানিপ্রীতকে দেখাচ্ছে, চেনাচ্ছে তা তিনি নন। তাকে ভীতু,পলাতক, বিশ্বাসঘাতক বলা হচ্ছে। এটা একেবারেই ঠিক নয়।
২৫ আগস্ট ডেরা সাচ্চা সওদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচকুলার সিবিআই আদালত। তার পরেই দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধে হরিয়ানা, পাঞ্জাবে। ৩৮ জনের প্রাণহানি হয়। কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়। এর পেছনে দায়ীদের মধ্যে হানিপ্রীতের নাম ছিল। তার নামে মামলাও হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে হানিপ্রীতের পাল্টা প্রশ্ন, এটা কিভাবে সম্ভব? একজন নারী কিভাবে এতো কড়া নিরাপত্তা এড়িয়ে দাঙ্গায় প্ররোচনা দিতে পারে? তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে কোন প্রমাণের ভিত্তিতে? কেউ কি তাকে উসকানি দিতে দেখেছে? ওইদিন তিনি আদৌ ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।
হানিপ্রীতের বক্তব্য, তিনি মেয়ের কর্তব্য পালন করেছেন মাত্র। বাবার পাশে থাকাটা কি অন্যায়? রায়ের দিন আদালতে গিয়েছিলেন এই বিশ্বাসে যে সব ঠিক হয়ে যাবে। বিকালে ডেরায় ফিরবেন বাবা-মেয়ে মিলে। রায় শুনে মাথা ঘুরে গিয়েছিল। এই অবস্থায় কী করে ষড়যন্ত্র করা যায়।
তবে রাম রহিম আর হানিপ্রীতের সম্পর্ক আদৌ বাবা-মেয়ের সম্পর্কের মতো নয়। এমন গুঞ্জন বেশ কিছু দিন ধরেই সংবাদমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এর তীব্র নিন্দা করেছেন ‘পাপা কি অ্যাঞ্জেল’ খ্যাত হানিপ্রীত। তিনি বলেন, ‘কিভাবে কেউ বাবা-মেয়ের পবিত্র সম্পর্কে কাদা ছোঁড়ে? একজন বাবা কি ভালবেসে তার মেয়েকে স্পর্শ করতে পারেন না? মেয়ে কি তার বাবাকে ভালবাসতে পারে না?’
নিজেকে নির্দোষ মনে করলে কেন পুলিশে ধরা দিচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে হানিপ্রীত বলেন, এই ক’দিনে এত কিছু ঘটে যাওয়ায় তিনি দিশেহারা, অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বাবা ধর্ষক সাব্যস্ত হয়েছেন। এরপর মাথা ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। একটু স্বাভাবিক হলেই হরিয়ানা হাইকোর্টে যাবেন।
তবে তিনি হাইকোর্টে যাওয়ার আর সুযোগ পেলেন না। তার আগেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
Discussion about this post