অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের এক টকশোতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাকে ‘রাজাকার’ বলায় আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের প্রতি ইতিমধ্যে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। নোটিশে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান বিচারপতিকে ‘রাজাকার’ বলার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে নতুবা ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আপনার বক্তব্য অনুযায়ী একটি সাংবিধানিক পদে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি যদি রাজাকার হয়ে থাকেন তাহলে এ স্বাধীনতার মাসে ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে বিবেচিত হয়। একজন রাজাকারের অধীন দেশের সমস্ত বিচার বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। বার এবং বেঞ্চের মধ্যে যে সুসম্পর্ক সেটাও বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি আইনজীবী হিসেবে এ আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করাও বিব্রতকর, যা আমার মানহানি হয়েছে।’
মানহানির মূল কথা হচেছ অন্যের সুনাম নষ্ট করা। মানহানি সম্পর্কে সাধারণভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, এটা একজন মানুষের চরিত্র বা মানসম্মান (reputation) এর উপর একটা মারাত্বক আক্রমন বা আঘাত সৃষ্টি করা। এটা একজন ব্যক্তির সুনামের উপর মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করা। আরো বলা যায় যে, মানহানি একজন ব্যক্তির মানসম্মান (reputation) এর বিরুদ্ধে একটি অযৌক্তিক, বেআইনী ও মিথ্যা আঘাত সৃষ্টি করা। পত্রিকা বা মিডিয়া প্রকাশনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ দেশের সকল মানুষের কাছে প্রকাশ করা হয়। ফলশ্রুতিতে ঐ ব্যক্তি সমাজে একজন ঘৃণিত, অপমানিত এবং মর্যাদাহানিকর (disgraceful) ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এর ফলে ঐ ব্যক্তি তার চাকুরি পর্যন্ত হারাতে পারে অথবা কোন অফিসে চাকুরি প্রাপ্তির বা চাকুরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বা ব্যবসা বা পেশা পরিচালনার ক্ষেত্রে, এমনকি বিবাহের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এবং এভাবে একজন মানুষের জীবনের sense of satisfaction চিরদিনের মত বিনষ্ট হয়।
প্রচলিত আছে যে, একজন ব্যক্তির টাকা পয়সা বা সম্পদ নষ্ট বা চুরি হলে বিশেষ ক্ষতি হয় না, কিন্তু তার সুনাম, চরিত্র ও reputation নষ্ট হলে জীবনের সবকিছুই হারিয়ে যায়। কাজেই প্রত্যেকটা মানুষের তার সুনাম বা reputation ধারণ ও রক্ষণ করার অধিকার আইনগতভাবে তাকে প্রদান করা আছে। জেনেশুনে বা বিশ্বাস করার সংগত কারণ থাকা সত্ত্বেও বা কোন কোন ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে পত্রিকায় মুদ্রণ, প্রকাশন ও বিক্রয় করার মাধ্যমে যে কোন একজন নাগরিকের সুনাম, মানমর্যাদা (reputation) জনসমক্ষে ক্ষুন্ন করা একটা গুরুতর অপরাধ হিসেবে শুধু আমাদের দেশে নয়, প্রত্যেক দেশেই পরিগণিত হয় এবং এটা একটা ফৌজদারী ক্ষমাহীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই শাস্তির বিকল্প হিসেবে অন্য কোন বিধান প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বা পাকিস্তানেও বিদ্যমান নেই।
Freedom of Press বা চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং প্রত্যেক নাগরিকের ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে এই সকল স্বাধীনতার অধিকারটা একই অনুচ্ছেদের আওতায় বিভিন্নভাবে যথা জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে ভোগ করার কথা বলা হয়েছে। এটা একটা বিশ্বজনীন নীতি (universal principle) যে কোন অধিকারই absolute বা লাগামহীন নয়; কাজেই চিন্তা, বিবেক, ভাব প্রকাশ বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও absolute বা লাগামহীন নয়। লাগামহীন বাক্ বা ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা একটা লাইসেন্স হয়ে যাবে এবং সেজন্যই আমাদের সংবিধানের অধিকাংশ মৌলিক অধিকারকেই যুক্তিসংগত আইনের দ্বারা সীমাবদ্ধ (restricted) করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এটা বলা একান্ত প্রয়োজন যে, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কখনোই একজন ব্যক্তি বা কোন ব্যক্তি গোষ্ঠীর সুনাম, মর্যাদা বা (reputation) রক্ষা করার স্বাধীনতা বিনষ্ট করতে পারবে না। বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে দন্ডবিধি আইনের ৫০১ ও ৫০২ ধারা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী, এই মর্মে কোন রায় প্রদান করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।
বিচারকরা যে সমালোচনার ঊর্ধ্বে তা কখনও নয় তবে তার দায়বদ্ধতা বা সে সব সমালোচনার ধরন ও প্রকৃতিতে রয়েছে ভিন্নতা। বিচারকের রায়ে যদি কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হয় এবং সে যদি মনে করে তবে সে ন্যায়বিচারের প্রাপ্তির জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবে। কাজেই আমাদের উচিত আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ভুলে গেলে চলবে না একজন বিচারক যদি তার বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে নির্ভীক না হতে পারেন ও প্রদত্ত রায় সম্পর্কে যদি উদ্বিগ্ন থাকেন বা প্রচারিত কোনো সংবাদ সম্পর্কে ভীত হয়ে যান তাহলে তিনি ন্যায়বিচার কিংবা স্বাধীনভাবে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কুণ্ঠাবোধ করতে পারেন। যদি সে রকমটা হতে থাকে তবে পরিশেষে বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে দেশবাসী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিচারপতিদের সাহস থাকতে হবে, তবেই আমাদের দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পাবে। পাশাপাশি ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
আঠারো শতকের প্রথম ভাগে মহামান্য বিচারপতি Lord Robertson বলেছিলেন in the absence of immunity, no man but a beggar or a fool would be a judge. কাজেই প্রচলিত আইন ও আদালতকে সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের দায়িত্ব।
বিচারকদের দায়িত্ব কোনো মামুলি দায়িত্ব নয় বরং গুরু দায়িত্ব। বিচারকের কাজের সঙ্গে চিকিৎসকের কাজের তুলনা করলে ভুল হবে না। ২০০৭ সালে মহামান্য হাইকোর্ট আদালত অবমাননা আইনের মামলায় রায় প্রদানকালে মন্তব্য প্রদানকালে বলেন, প্রতিটি চিকিৎসক জীবন্ত মানুষের হৃদয়ে, মস্তকে বা শরীরের অন্যান্য বিশেষ অপরিহার্য ও সংবেদনশীল অঙ্গে অপারেশন করার সময় তার সম্পূর্ণ মনোযোগ শুধু অপারেশনে নিয়োজিত করে থাকেন। কেননা তিনি জানেন তার মনোযোগের সমান্যতম বিঘ্ন ঘটলে রোগীর প্রাণহানি ঘটতে পারে। যদি কোনো কারণে সে চিকিৎসক সমালোচনার সম্মুখীন হন কিংবা ভীত হয়ে যান তবে তার পক্ষে যেমন অপারেশন করা দুরূহ হয়ে পড়বে ঠিক তেমনি বিজ্ঞ বিচারকরা যদি সমালোচনার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন তবে তা হলে বিচারকার্য অবিচারে পর্যবসিত হতে পারে। ফলাফল হিসেবে বিচারক সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সুদূর প্রসারিভাবে রাষ্ট্রের আপামর জনসাধারণ অপরিসীম ক্ষতির স্বীকার হতে পারেন। সে দিক বিবেচনায় কোনো বিচারক সম্পর্কে কোনো প্রকারের অভিযোগ সৃষ্টি হলে প্রথমে তাকে সে অভিযোগ সম্পর্কে জ্ঞাত করা অপরিহার্য। পরবর্তী সময়ে তার ঊর্ধ্বতন নিয়ন্ত্রণকারী মহামান্য বিচারক মহোদয়কে বিষয়টি জ্ঞাত করা দরকার। যদি প্রয়োজন হয় তবে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতির গোচরীভূত করা যেতে পারে। কারণ, কোনো অসৎ বিচারককে কোনো পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগে নিয়োজিত রাখা উচিত নয়।
১৯৮৫ সালে হাইকোর্ট অব কেরেলা বনাম প্রিতিশ নন্দি (ক্রিলজা-১০৬৩) মামলায় মহামান্য বিচারপতি বলেন, বিচারকের বদান্যতা এতখানি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে না যে, সে কথা ও কার্যকে উৎসাহিত করবে যা জনসাধারণের বিচার প্রণালীর প্রতি আস্থা নষ্ট করবে, কোনো রকমের অনুগ্রহ বা ভীতি ছাড়া তাদের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে। মুক্ত সমালোচনায় সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও অর্পিত ভূমিকা রাষ্ট্রের স্বীকার করে নিতে হবে। মন্তব্য, সমালোচনা, তদন্ত ও গ্রহণের যুগে বিচার বিভাগ যৌক্তিক ও অনিষ্টবিহীন সমালোচনার হাত থেকে নিরঙ্কুশভাবে অব্যাহতি দাবি করতে পারে না। কিন্তু সমালোচনাটি শোভন ভাষায় নিরপেক্ষ, অনুভূতিপূর্ণ, সঠিক ও যথাযথ হতে হবে। সম্পূর্ণভাবে যেখানে সমালোচনার ভিত্তি হচ্ছে সত্যবিকৃতি ও পুরো বানোয়াট এবং বিচারকের ন্যায়পরায়ণতার ওপর কটাক্ষপূর্ণ ও বিচার বিভাগের সম্মান খাটো করা ও জনগণের আস্থা ধ্বংস করে দেয়া এটা উপেক্ষা করা যায় না। যেহেতু আইনের মহার্ঘতা অবমাননাকারীদের দ্বারা কালিমা লিপ্ত করার অনুমতি দেয়া যায় না।
রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে আদালতের রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা করার। রায়ের সমালোচনা হতে কোনো দোষ নেই কিন্তু যে বিচারক সে রায় প্রদান করেছেন তাকে তার রায়ের জন্য ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনা বা কোনো প্রকারের আক্রমণ করা যাবে না। যদি কোনো রাষ্ট্রে সে রকমটা হতে থাকে তবে সে রাষ্ট্রের বিচার প্রতিষ্ঠান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ও গণতান্ত্রিক ধারা হুমকির মুখে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কতৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষনা পত্র গৃহীত হয়। সে ঘোষনার ধারা-১৯ এ বলা হয়েছে, প্রত্যেকেরই মতামত পোষন করা ও প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া মতামত পোষন করা এবং যে কোনো সংবাদ মাধ্যমের ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত চাওয়া, গ্রহণ করা ও জানাবার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভূক্ত।
বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর ভাষায়, অবাধ স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। সুস্থ দায়বদ্ধতা থেকেই ব্যক্তিস্বাধীনতা, সামাজিক স্বাধীনতা, এমনকি সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও পূর্ণতা পায়।
লন্ডনে টেমস নদীর পাড়ে বার্নার্ড শ এক দিন মর্নিং ওয়ার্কে বেরিয়েছেন। উল্টো দিক থেকে এইচ পি ওয়েলসও আসছিলেন। তাঁর হাতে একটা ছড়ি। সেটা তিনি ঘোরাচ্ছিলেন। বার্নার্ড শর কাছে এসেও তিনি ছড়িটি ঘোরানো বন্ধ করলেন না। বার্নার্ড শ বললেন, ‘ছড়ি ঘোরানো থামাও। ওটা তো আমার নাকে আঘাত করতে যাচ্ছে।’ ওয়েলস বললেন, ‘আমি এ দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। যেখানে খুশি সেখানে ছড়ি ঘোরানোর নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকার আমার আছে।’ বার্নার্ড শ বললেন, ‘অবশ্যই সে অধিকার তোমার আছে। কিন্তু আমার নাকের ডগা যেখানে শেষ, সেখান থেকে তোমার নাগরিক অধিকারের শুরু।’
বার্নার্ড শর এই মন্তব্য থেকেও বোঝা যায়, একজন নাগরিকের স্বাধীনতারও একটা সীমা ও দায়বদ্ধতা আছে। সেটা অন্য নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা সম্পর্কে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে যখন বাকস্বাধীনতা, নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করে নানা ধরনের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়, তখন কয়েকজন সম্পাদক বার্ট্রান্ড রাসেলকে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। রাসেল বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও অস্তিত্ব আমার কাছে এখন বেশি বিবেচ্য। নাগরিক স্বাধীনতা বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এই মুহূর্তে আমার কাছে বেশি বিবেচ্য নয়।’
প্রিয় পাঠক! আসুন আমরা একটি ইতিবাচক সংবাদের অপেক্ষায় থাকি। যেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার পাতায় দেখতে পাবো ‘একজন বিচারক আরেকজন বিচারকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করতে পারবে না-একটি বিশেষ আইন করে নিষেধ করা হয়েছে।’ সেদিন আমাদের সংবিধানের শ্বাসত বাণী চিরন্তন রুপ পাবে। শুরু হবে বিচারব্যবস্থায় নতুন এক যুগের।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা ও গবেষক।
Discussion about this post