কিছুদিন আগের ঘটনা । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিন মাস বয়সী একজন শিশুর ব্লাড কালচারের রিপোর্ট ছড়িয়ে পড়ে । অবাককর ঘটনা হল তার রক্তে সবগুলো এন্টিবায়োটিকই প্রতিরোধী হয়ে উঠেছিল । এই ঘটনাটি সবাই বোঝেনি কারণ সবাই মনে করে নিয়েছে এমন হতেই পারে ! কিন্তু যারা আগামী দিনের অবস্থাটা সামান্য হলেও চিন্তা করতে পারে তারা শংকিত হয়ে উঠেছে ভবিষ্যৎ অবস্থা নিয়ে । তিন মাস বয়সী একটি মিশুর দেহে সবগুলো এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠা মানে আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ সমস্যা !
সাধারণ স্বর্দি কাশিতেও এক সময় মারা যেতে পারে মানুষ কারণ এন্টিবায়োটিকের অসাবধান ব্যবহার, এন্টিবায়োটিকে সঠিক মাত্রার উপাদান না থাকা এবং ফার্মেসিতে যে কেউ গিয়ে ঔষধ চাইলেই তাকে যে কোন ঔষধ দিয়ে দেওয়া ।
অনেক দিন ধরে ঔষধ নিয়ে লিখে যাচ্ছি সামনের দিনগুলোর জন্য আমাদের সচেতন হওয়া খুব জরুরী বলেই । ঔষধ প্রশাসন ও সরকারের কাছে আবেদন ছিল কয়েকটি । তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ
যে যে ঔষধ ও ঔষধ কোম্পানি বাদ দেওয়া হয়েছে বা নিম্ন মানের ঔষধ উৎপাদন করে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তার একটি লিস্ট ও সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় এমন ঔষধগুলোর দাম প্রতিটি ফার্মেসিতে টানিয়ে দেওয়ার নিয়ম চালু করা ।
সঠিক ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোন ঔষধ বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক ঔষধগুলো যাতে বিক্রি না করা হয় সে ব্যবস্থা করা ।
প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারি ফার্মেসি স্থাপন ও একটি ঔষধ পরীক্ষাগাড় স্থাপন করা ।
ঔষধ আসল না নকল তা চিহ্নিত করার জন্য একটি কোড নম্বর দেওয়া যা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ভেরিফাইড করার ব্যবস্থা করা ।
আজ একটি পত্রিকায় প্রধান একটি খবর নজড় পড়ে সকালেই । ঔষধ আইন -২০১৭ আসছে । এবং বলা হচ্ছে এরই মধ্যে আইনটির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হয়েছে। বিশিষ্ট গবেষকদের মতামতও নেওয়া হবে । এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত নেয়ার পর আইনটি চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে ভ্যাটিংয়ের পর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। এ আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ওষুধ ভেজাল করলে অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ড এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড দেয়া যাবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির যে প্রস্তাব করেছিল, তা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বাতিল হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ফলে এ আইন পাস হলেও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ বেচা যাবে। (সূত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ)
এখানেই মূলত হতাশার কারণ সৃষ্টি হল । অন্তত পক্ষে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিকের বিক্রয় নিষিদ্ধ করতেই হবে । এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জনদের সুদৃষ্টি কামনা করছি ।
আইনের যে দিকটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল সহনীয় দামে ওষুধ উৎপাদনের জন্য সরকার দেশের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল পার্ক করবে। সরকার যেসব ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করবে, তার একটি তালিকা গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রকাশ এবং অনলাইনে প্রকাশের ব্যবস্থা করবে।এর সাথেই সরকারের কাছে অনুরোধ নিষিদ্ধ কৃত ঔষধের তালিকা প্রতিটি ফার্মেসিতে টানানোর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করনে আইনে উল্লেখ করে দেওয়া ।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাক্তার এক ঔষধ রোগীর জন্য ব্যবস্থাপত্রে লিখলে ফার্মেসির দায়িত্বরত যারা থাকেন তারা ঐ গ্রুপের অন্য নাম সর্বস্ব কোম্পানির ঔষধ দিয়ে দেন । এতে করে তারা বেশী লাভবান হয়ে যান আর ক্রেতা পড়ে যান বড় ধরনের স্বাস্থ ও অর্থনৈতিক ঝুকিতে ।
আইনের ফাঁক গলে যাতে আসল ব্যপারগুলোই ফসকে বের না হয়ে যায় তার জন্য জন বান্ধব ঔষধ আইন-২০১৭ কে অত্যাধুনিক ও আইন প্রনয়নের গতিশীলতাকে সহজ করার জন্য আমার প্রস্তাবনাগুলো ভাববার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক অনুরোধ করছি ।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্পে যে অবস্থান তৈরী করেছে তা বিশ্বে ঈর্ষনীয় । অনেক উন্নত দেশগুলোও আমাদের ঔষধ নিচ্ছে । বর্তমানে নকল ঔষধ বাজারে থাকার কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ খাত হুমকির মুখে পড়ছে অথচ আমাদের ঔষধই বিশ্বের বুকে সমাদৃত । নকল ঔষধ বন্ধে আইনের প্রোয়োগে গতিশীলতার জন্য একটি টিমসেল গঠন করার প্রস্তাবনাও রাখছি ।
এর সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হল অব্যবহৃত ঔষধের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা । আমরা ঔষধ খাওয়ার পর বেঁচে যাওয়া ঔষধ সরাসরি ফেলে দেই প্রকৃতিতে । রোগজীবানুর প্রতিরোধী হয়ে ওঠা পেছনে এটাও বড় কারণ বলে মনে করি । যে ঔষধগুলো বেঁচে যাবে তা কোম্পানিগুলো সংগ্রহ করে নষ্ট করলে সেটা হতে পারে পরিবেশ সম্মত উপায় । এই বিষয়ে আইনে অর্ন্তভূক্তি কামনা করছি ।
আমরা চাই আত্ন নির্ভরশীলতা এবং সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা । সরকারকে ধন্যবাদ ঔষধ আইনের মত একটি বিষয় নিয়ে ভাববার জন্য ।
লেখকঃ সাঈদ চৌধুরী
Discussion about this post