প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অকার্যকর আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘সিআরপিসি ও প্যানেল কোড উপনিবেশিক মানসিকতায় থেকে করা হয়েছিল। ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোডের ৪০ ভাগই এখন অকার্যকর। এসবই উঠিয়ে দেয়া উচিত। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এসব আটকে আছে।’
দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জুডিশিয়াল বিচারকদের মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তারাও আমলায় পরিনত হন। তবে সংশোধিত আকারে আইন আসবে শিগগিরই।’
সোমবার (১২ অক্টোবর) সকালে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে সমিতি মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচারক ও আইনজীবীদের অভিন্ন প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য বার ও বিচারকদের সুসম্পর্ক রাখা দরকার। কোনো আচরনের কারণে যেন বিচারকরা বিব্রত না হন- সে বিষয়ে আইনজীবীদের সহযোগিতা কামনা করছি। যে কোনো মূল্যে আদালতের পরিবেশ ও মর্যাদা রক্ষায় আইনজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কখনও সরকারের দ্বারা জনগণের অধিকার খর্ব হলে আপনারাই সোচ্চার হয়েছেন। আপনাদের আন্দোলনের ফসলই হচ্ছে স্বাধীন বিচার বিভাগ। বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট লাঘবের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা আপনাদের উদ্দেশ্য। আর দায়িত্ব নেয়ার প্রথমদিন থেকে আমিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো মহলের চাপ বা প্রভাবমুক্ত না হয়ে বিচারকরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিচার করছেন।’
ঢাকার বাইরে পুনরায় সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের যৌক্তিকতা বর্তমানে মূল্যায়ন করে দেখা হচ্ছে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অতীতে এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল বলে তুলে দেয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। তবে এজন্য আদালত ভবন, এটর্নি জেনারেল অফিস সম্প্রসারণ ও বিচারক নিয়োগ দরকার।’ চট্টগ্রাম সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বক্তব্যটি সঠিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দেশের কোথাও হলে যশোরেও সার্কিট বেঞ্চ অবশ্যই হবে। তবে সার্কিট বেঞ্চ হবে কিনা সেটি এখনও চুড়ান্ত হয়নি।’
আদালত ভবন দ্রুত নির্মাণ করে বিচার কাজে গতিশীলতা সৃষ্টি, আদালত কার্যক্রম ডিজিটাইলেশন করা, সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ বক্স স্থাপনের মাধ্যমে বিচারাদালতের সবধরনের অভিযোগের নিষ্পত্তির পদক্ষেপের কথা তিনি তুলে ধরেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট দেবাশীষ দাসের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল হক, কাজী আব্দুস শহীদ লাল, নজরুল ইসলাম ও মো. ইসহক এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা। অনুষ্ঠানে যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসরাইল হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের রেজিস্টার আবু সৈয়দ দিলদার হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বেগম হোসনে আরা, অতিরিক্ত রেজিস্টার সাব্বির ফয়েজ, প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) মো. আনিসুর নহমাস, হাইকোর্টের ডেপুটি রেজিস্টার মো. কামাল হোসেন ও ফারজানা ইয়াসমীনসহ যশোর জেলার বিচারকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দুদিনের সফরে রবিবার সন্ধ্যায় যশোর এসে পৌঁছান। সোমবার দুপুর পর্যন্ত তিনি যশোরের বিভিন্ন আদালতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। বিকালে তিনি সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সন্ধ্যায় সেখানে জেলা জাজশীপের উদ্যোগে আয়োজিত বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।
Discussion about this post