রীনা পারভীন মিমি
যৌতুকের দাবি আর বহু বিবাহের মতো ঘটনায় নির্যাতন নেমে আসে নারীর ওপর; অত্যাচার সহ্য করতে হয় স্বামী মাদকাসক্ত হলে। আবার সন্তান মাদকাসক্ত হলেও ভুক্তভোগী হতে হয় নারীকেই। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে নারীর অবস্থান অনেক ওপরে উঠে এলেও ঘরে-বাইরে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। বরং আধুনিক জটিল সমাজে এ নির্যাতন-নিপীড়ন হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক। এসব ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার দাবি বা চাওয়ার মতো অবস্থানে নেই তারা। আবার যারা বিচার চাইতে যাচ্ছেন, তারাও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নারী নির্যাতনের মতোই দিন দিন বাড়ছে শিশু নির্যাতন। গৃহকর্মীদের ওপরেও থামেনি অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকেই পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। কিন্তু বাবা-মা বা গ্রামের বাড়ির ঠিকানা না জানা এসব অল্পবয়সী গৃহকর্মী শিশুদের অসহায় অবস্থায় ঠাঁই নিতে হয় ফুটপাতে। নির্যাতিত, অসহায় এবং ঠিকানাবিহীন এমন নারী ও শিশুর জন্যই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ পরিচালিত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। অভিযোগ পাওয়ামাত্র অসহায় নারী ও শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়ে তারা আলোর পথ দেখাচ্ছে। সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে গ্রহণ করছে কার্যকর পদক্ষেপ। ঠিকানাবিহীন শিশুকে পৌঁছে দিচ্ছে বাবা-মায়ের কোলে।
রাজধানীর তেজগাঁও থানা চত্বরে অবস্থিত এ আশ্রয়কেন্দ্রটিই হচ্ছে ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার’। নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের আশ্রয় বা থাকার জন্য পুলিশ সংস্কার কর্মসূচির সহায়তায় পুলিশ এ ব্যবস্থা চালু করেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এর আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন। মূলত পুলিশ রিফর্মস প্রজেক্টের আওতায় এ কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে।
আর এর অর্থায়ন করেছে ইউএনডিপি, ডিএফআইডি, ইউরোপীয় কমিশন ও বাংলাদেশ সরকার।যেকোনো প্রকার নির্যাতনের শিকার বিভিন্ন বয়সী নারী ও শিশুদের আইনি সহায়তা ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্যে ২০০৯ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। ভিকটিমকে সুরক্ষা ও আইনগত অধিকার রক্ষা, বারবার নির্যাতনের হাত থেকে সুরক্ষা, পেশাগত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে। শুধু নির্যাতনের শিকার হলেই নয় কোনো নারী বা শিশু যদি হারিয়ে যায় কিংবা হারিয়ে যাওয়া কাউকে এ সেন্টারে এসে সহায়তা চাওয়া যেতে পারে।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পুলিশের পাশাপাশি ১০টি এনজিও আইনি সহায়তাসহ অন্যান্য কাজ করছে। এগুলো হচ্ছেঃ আইন ও সালিশ কেদ্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন ফর কারেকশন অ্যান্ড সোশ্যাল রেক্লেমেশন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, এসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ঢাকা আহছানিয়া মিশন ও মেরী স্টোপস্।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মুখ্য উদ্দেশ্য হলোঃ
১. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা দূর করে নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধ প্রতিবেদনের সুযোগ নিশ্চিত করা।
২. ভিকটিমকে সময়োপযোগী ও পেশাগত সেবা প্রদান করা।
৩. ভিকটিমের সুরক্ষা ও আইনগত অধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করা।
৪. সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ভিকটিমের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করা।
৫. ভিকটিমকে বারবার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা।
৬. নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধের তথ্য সংরক্ষণ করা এবং অপরাধ নিবারণের জন্য কার্যকর নীতি তৈরি করা।
নির্যাতিত নারী ও শিশুদের জন্য এ কেন্দ্রটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। যখন কোনো ভিকটিম অভিযোগ নিয়ে আসে, তখন খাতায় তার অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর শুরু হয় ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা যাচাই পর্ব। যাচাই শেষে দেখা হয় যে এটা আমলযোগ্য, না আমল অযোগ্য অপরাধ। এরপর ভিকটিমকে জানানো হয় যে আপনার সামনে এই আইনগত পথ বা দিক রয়েছে। তখন ভিকটিমের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অধিকাংশ ভিকটিমই সংসার টিকিয়ে রাখতে মীমাংসার পথে যেতে চায়। তখন উভয় পক্ষকে ডেকে তাদের কথা মনোযোগসহকারে শুনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ সময় আইনজীবী, চিকিৎসক, কাউন্সিলর, ডিউটি অফিসার উপস্থিত থাকে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অর্থাৎ মারাত্মক ঘটনার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
যোগাযোগের ঠিকানা: ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার (তেজগাঁও থানা সংলগ্ন), তেজগাঁও, ঢাকা;
মোবাইল: 01745774487, 02-9110885 01755556644, 01755556645, 01733219005, 01733219030
Email : vsc_dmp@yahoo.com
লেখক: আইনজীবী
Discussion about this post