মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ২০১৫ সালে ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে জানাচ্ছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ২০১৫ সালে ১৯৭টি মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়ে সর্বোচ্চ এ সাজা দেওয়া দেশের তালিকায় বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে একই সময়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিক দিয়ে ১৪তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন, ইরান, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক অ্যামনেস্টি বুধবার ‘মৃত্যুদণ্ডের রায় ও কার্যকর-২০১৫’ শীর্ষক ৭০ পৃষ্ঠার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এ সময়ে কমপক্ষে এক হাজার ৬৩৪ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে, যা ২০১৪ সালের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি। মোট দণ্ড কার্যকরের ৮৯ শতাংশই হয় ইরান, পাকিস্তান ও সৌদি আরবে।
অ্যামনেস্টির মহাসচিব সলিল শেঠি বলেন, ‘ইরান, পাকিস্তান ও সৌদি আরব প্রায়ই অন্যায্য বিচারের মাধ্যমে তার নাগরিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত।’
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বৃদ্ধিকে গভীর উদ্বেগজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অ্যামনেস্টির তালিকা অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। তার আগের বছর কোনো প্রাণদণ্ড কার্যকর করেনি বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে চীন ১ হাজারের বেশি দণ্ড কার্যকর করে।
তার পরই রয়েছে ইরান (৯৭৭টি), পাকিস্তান (৩২৬), সৌদি আরব (১৫৮টি) এবং যুক্তরাষ্ট্র (২৮)। সিঙ্গাপুর চার, জাপান তিন ও ভারত একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
অনেক দেশই তুলনামূলক কম অপরাধেও সর্বোচ্চ দণ্ড দেয়। সৌদিতে ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, ব্যভিচার ও ধর্মত্যাগের মতো অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হয়। চীন, উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েতনামে দুর্নীতির দায়ে এবং পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ধর্ষণেও প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়।
গত বছর ৬১টি দেশে এক হাজার ৯৯৮ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৯৭ জনেরও বেশি অপরাধীকে এ দণ্ড দিয়েছে।
শীর্ষ দুটি দেশ হচ্ছে চীন (১ হাজারের বেশি) ও মিসর (৫৩৮-এর বেশি)। এ ছাড়া ভারত কমপক্ষে ৭৫ এবং যুক্তরাষ্ট্র ৫২-এর বেশি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
২০১৪ সালে বিশ্বজুড়ে ২ হাজার ৪৬৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। চীন সরকার দণ্ডদান বা কার্যকরের তথ্য গোপন রাখায় ধারণামূলক সংখ্যা উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি।
সৌদি আরব ২০১৪ সালের তুলনায় গত বছর ৭৬ শতাংশ বেশি দণ্ড (শিরশ্ছেদ, ফাঁসি ও গুলির মাধ্যমে) কার্যকর করেছে। পাকিস্তান ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ এ দণ্ড কার্যকরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। এর পর এক বছরেই দেশটি ৩২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে।
শুধু দণ্ড কার্যকরই নয়, গত বছর সর্বোচ্চ এ সাজা দেওয়া দেশের সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৪ সালে ২২ দেশ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। গত বছর আরও তিন দেশ এতে যুক্ত হয়। অবশ্য ওই বছরই ফিজি, মাদাগাস্কার, কঙ্গো ও সুরিনাম মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করে।
Discussion about this post