পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার অফিস থেকে আইন মন্ত্রণালয়কে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাতে সমস্ত জাতি উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জনগণ যা চায়, সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে প্রধান বিচারপতির কাছে যাবেন বলেও জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতকদের বিচার করা আমাদের নির্বাচনী ম্যান্ডেট ছিল। আমরা একাত্তরের ঘাতকদের বিচার করছি। আজকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার আমাদের এই যুদ্ধাপরাধীর ট্রাইব্যুনাল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটা নোটিশ আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন।’
ট্রাইব্যুনাল এখানে স্থাপনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের সময় ২০১০ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাহেব মন্ত্রী ছিলেন। তখন আমরা অনেক জায়গা খোঁজ করেছি। আমরা জনতা টাওয়ার, ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ টাওয়ার, রেলওয়ে ভবনসহ অনেক জায়গা খোঁজ করেছি। কোথাও সুবিধাজনক জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা পুরাতন হাইকোর্ট ভবনকেই অত্যন্ত সুবিধাজনক ও নিরাপদ জায়গা মনে করেছি। এরপর সুপ্রিম কোর্টের পারমিশন নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেছিলাম।’
এই ট্রাইব্যুনাল সরানোর চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল এখান থেকে সরিয়ে নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার থেকে চিঠি আইন মন্ত্রণালয়ে দিয়েছেন। আমি মাননীয় আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, এই চিঠির প্রেক্ষিতে আপনি কী করবেন? কী করণীয়? সমস্ত জাতি কিন্তু উদ্বিগ্ন। বিচার যখন হচ্ছে আজকে এই জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় যদি নেন, কোথায় নেবেন? কী করবেন আপনি? আমরা কিন্তু উদ্বেগের সাথে সেটা লক্ষ করছি। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন আমাদের উদ্বেগের প্রশ্নের জবাব আপনি দেবেন। ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করা চলবে না।’
কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের জায়গার দরকার থাকতেই পারে। যে পত্র তারা দিয়েছেন সেই পত্রের যৌক্তিকতা থাকতেই পারে, সে প্রশ্নে আমি কিছু বলব না। আমি শুধু আপনার কাছে আমাদের উদ্বেগের কথা জানালাম। আপনি চিঠি পেয়েছেন, আপনি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন সেটা উদ্বিগ্ন জাতিকে আপনি জানাবেন।’
একই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আশ্বস্ত করে বলেন, ‘কামরুল ভাই একটা কথা ওঠিয়েছেন, আমি শুধু একটা কথা বলব যে, জনগণের অভিপ্রায় এর বাইরে কিছু হবে না। প্রয়োজন যদি হয়, জনগণ যা চায় সেটাকে সফল করার জন্য আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করব। নিশ্চয়ই মাননীয় প্রধান বিচারপতি তিনি সেটা শুনবেন, এই বিশ্বাস আমার আছে।’
আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকে সাহারা খাতুনের সভাপতিত্বে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আবদুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সেক্রেটারি ও ঢাকা মহানগর আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নজিবুল্লাহ হিরুসহ আওয়ামীপন্থি সিনিয়র আইনজীবীরা বক্তব্য রাখেন।
Discussion about this post