নাহরিন তানিয়া
অনেকে ভাবে আইন পেশা খুব সহজ। এ পেশায় নিয়োজিত বিজ্ঞ আইনজীবীগন অন্য পেশার মতো ফাঁকি দিতে পারে না। সকাল থেকে রাত অবধি আইনজীবীদের কাজ করতে হয়। অন্য পেশার মতো এরা কোন fixed salary পায় না। যানবাহনের নেই কোন ব্যবস্থা।
ঢাকা জজ কোর্টে বিজ্ঞ আইনজীবীগন যখন তাদের চেম্বার থেকে কোর্ট এ যান যাওয়ার রাস্তা এতই নোংরা সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই রাস্তা খুবই সংকীর্ন এর মধ্যে মানুষের সাথে সাথে এমন কোন যানবাহন নেই যে চলে না।রাস্তাটি কবে সংস্কার হয়েছে বলা মুশকিল। কোর্ট এ যেমন বিচার বঞ্চিত মানুষ যায় তেমনি যারা আইন অমান্য করে তারাও যায়, আইনজীবীদের এদের মধ্য দিয়ে কোর্ট এ প্রবেশ করতে রীতিমতো ঘাম ঝরে যায়। এরপর কোর্টে উপরের তলাগুলোতে উঠতে লিফটের দীর্ঘ লাইন। এই সকল লিফটের ধারনক্ষমতাও সদা নিন্মগামী। কোর্ট এর অবস্থান এমন জায়গা যে একজন আইনজীবী সময় মতো কোর্ট এ পৌছাতে পারবে কিনা এ চিন্তায় তার মামলা করার অর্ধেক এনার্জি শেষ করে ফেলে।
সদরঘাট ঢাকা ছাড়ার জন্য বরিশালসহ দক্ষিন বাংলার মানুষদের কাছে অতি পরিচিত কিন্ত সদরঘাট থেকে কোর্ট করে বাসায় ফেরা খুবই কস্টকর। অধিকাংশ আইনজীবী সদরঘাট থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। নেই কোন ভাল বাস সার্ভিস। গাড়ি নিয়ে যাবে নেই পর্যাপ্ত পার্কিং এর ব্যবস্থা। মনে হয় যেন জীবন থাকুক আর নাই থাকুক এ দূর্ভোগ মেনে নিতেই হবে।
আর মহিলা আইনজীবীদের কথা নাই বললাম, এদের কোর্টে পৌছাতে যে কি কস্ট হয় সেটা বলে বোঝানো যাবে না। আমাদের দেশে চতুর্থ শ্রেণি পেশার মানুষদের জন্য বাংলাদেশ সরকার বাসের ব্যবস্থা করেছে আমি কাউকে ছোট করে দেখছি না কিন্ত আইনজীবীদের জন্য এমন কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ সরকার এ খাত থেকে প্রতিবছর রাজস্ব আয় করছে অনেক।
গরমের সময় কোর্টে গিয়ে অনেক আইনজীবীই অসুস্থ্য হয়ে পড়ে; এমনেই কালো কোটসহ গাউন পড়তে হয় তাদের; তারমধ্যে এজলাসের সংকীর্নতা, মানুষের ভীড়, এরমধ্যে এসি তো নাই বরং যে সিলিং ফ্যান চলে মনে হয় বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে।
মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আইনজীবীরা টাকা পায় বা না পায় মামলা চলমান রাখতে কয়েক জায়গায় টাকা দেওয়া যেন চিরাচরিত নিয়মে পরিনত হয়েছে। এরপরও আইনজীবীরা তাদের পেশাকে ধরে রাখছে। কিন্তু অনেকেই আশা হারিয়ে ফেলছে। তাই আইনজীবীদের নূন্যতম পরিবেশ যেন বজায় থাকে সেজন্য আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। সকল দলমতের উর্ধে উঠে।
লেখক: আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মী।
Discussion about this post