ঢাকা: একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থানরত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ মনোকষ্টে আছেন।
সদাহাস্যোজ্জ্বল, পরিপাটি ও রুচিসম্মত পোশাকে অভ্যস্ত, বাগ্মী, সুদর্শন, দলের প্রতি অনুগত, প্রতিশ্রুতিশীল ও সম্ভাবনাময় তরুণ এই রাজনীতিক নিজ দল বিএনপির আচরণে যারপরনাই হতাশ।
সূত্রমতে, ‘নাশকতা নির্ভর আন্দোলন’-এর মধ্যে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে অজ্ঞাতস্থান থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দলের ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’ সংবাদ মাধ্যমে পৌঁছুতে গিয়ে নিজের জন্য ‘বিপদ’ ডেকে আনা সালাহউদ্দিনের খোঁজ নিচ্ছে না কেউ।
বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে গত ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে নিখোঁজ হওয়ার ২ মাস ২ দিন পর গত ১২ মে শিলংয়ে সন্ধান মেলে সালাহউদ্দিনের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শিলং পুলিশের হাতে আটক হয়ে মিমহ্যানস্ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওভার টেলিফোনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে একবার মাত্র কথা বলার সুযোগ পান সালাহউদ্দিন।
এর পর সাড়ে ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও খালেদা জিয়া বা দলের শীর্ষ কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি বিপদাপন্ন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
নিখোঁজ থাকা অবস্থায় ‘মাসপূর্তির’ দিনগুলোতে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে একজন করে শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে পরিবারকে ‘রুটিন সান্ত্বনা’ জানিয়ে এলেও এখন আর ওদিকে যান না কেউ।
সালাহউদ্দিন আহমেদের নিকটজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ব্যারিস্টার ও অ্যাডভোকেটে ঠাসা বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আইনজীবী টিম শিলংয়ের দিকে পা বাড়ায়নি।
সালাহউদ্দিনের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য স্ত্রী হাসিনা আহমেদের নিয়োগ করা শিলংয়ের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসপি মাহান্ত’র সঙ্গেও কথা বলেননি বিএনপির কোনো আইনজীবী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান বলেন, আমি ওভার টেলিফোনে কাউকে কোনো কমেন্টস দেই না। তাছাড়া, দল বা দলীয় কোনো নেতার ব্যাপারে কথা বলার জন্য মুখপাত্র নিয়োগ দেওয়া আছে।
সূত্রমতে, সাড়ে ৩ মাস আগে সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ার পর ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিলংয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি। এরপর দুই দফায় শিলংয়ে যান তাবিথ আউয়াল।
জানা গেছে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে আব্দুল লতিফ জনি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত পরাজিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল দুই দফায় শিলং গেলেও এখন পর্যন্ত বিএনপির শীর্ষ কোনো নেতা সেখানে না যাওয়ায় মনে দারুণ কষ্ট পেয়েছেন সালাহউদ্দিন।
এ কারণেই শিলংয়ের মিমহ্যানস্, সিভিল ও নেগ্রিমস হাসপাতাল এবং হাসপাতাল থেকে থানা ও আদালতে আনা-নেওয়ার সময় দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা-বার্তা হলেও নিজের ভাড়া করা কটেজে আব্দুল লতিফ জনিকে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি সালাহউদ্দিন আহমেদ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুল লতিফ জনি বলেন, একজন বিপদাপন্ন লোক হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমেদ শিলংয়ের কত নম্বর রোডের কত নম্বর কটেজে আছেন, সে ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা সমীচীন মনে করিনি। তিনিও এ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি। তাই তার কটেজে যাওয়া হয়নি। দেখা সাক্ষাৎ যা হয়েছে, তা কেবল হাসপাতাল, থানা এবং আদালত চত্বরে।
সূত্রমতে, স্ত্রী হাসিনা আহমেদ এবং কক্সবাজার থেকে যাওয়া নিকট আত্মীয়-স্বজনই সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে পালাক্রমে থাকছেন। একজনের ভিসার মেয়াদ শেষ হলে আরেকজন গিয়ে উঠছেন সালাহউদ্দিনের কটেজে। তবে আত্মীয়-স্বজন ছাড়া ঢাকা থেকে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী সালাহউদ্দিনের কটেজে গেছেন-এমন খবর পাওয়া যায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শিলংয়ের বাইরে না যাওয়ার শর্তে জামিন পাওয়া সালাহউদ্দিনের দিন কাটছে অনলাইনে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা, স্থানীয় পত্র-পত্রিকা, বিভিন্ন দেশের জার্নাল ও বই পড়ে।
এছাড়া তিনি যে শিলংয়েই আছেন, তা জানান দিতে সপ্তাহে একদিন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে সালাহ উদ্দিনকে।
Discussion about this post