সম্পত্তি হস্তান্তরের বিভিন্ন প্রকার দলিল এর সংজ্ঞা:-
সাফকবালাঃ কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন তাকে সাফাকবালা বা বিক্রয় কবলা বা খরিদা কবালা বলা হয়। এই কবালা নির্ধারিত দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর দলিল দাতা অর্থাৎ বিক্রেতা সাবরেজিষ্টারী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল সহি সম্পাদন করে গ্রহিতা অর্থাৎ খরিদ্দারের বরাবরে রেজিষ্টারী করে দিবেন। এই দলিল রেজিষ্টারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফছিলে লিখিত অর্থাৎ বিক্রিত ভূমির যাবতীয় স্বত্ব দলিল দাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহিতাতে অর্থাৎ খরিদ্দারের উপর অর্পিত হলো। দলিলদাতা ময় ওয়ারিশানক্রমে উক্ত জমি হতে নিঃস্বত্ববান হবেন।
দানপত্র দলিলঃ যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের দান করতে হবে। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।
হেবা দলিলঃ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল, এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা শর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। এই দান বা হেবা অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য। এরূপ দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।
হেবা বিল এওয়াজঃ এই হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় বটে। কিন্তু ইহা কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে, যেমন- পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ, তছবিহ, মোহরানার টাকা, এমন কি যে কোন জিনিষের বিনিময়েও হতে পারে, যেমন আংটি ইত্যাদি। এই হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহিতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহিতাতে অর্পিত হবে। দাতার স্বার্থে কোনপ্রকার স্বত্ব দাতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না। এই হেবা বিল এওয়াজ অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এই হেবা বিল এওয়াজ যদি টাকা বিনিময়ে হয় এবং ক্রমিক ওয়ারিশী সূত্রে আগে পরে তিন ধাপের পরের ব্যক্তিকে বা তৃতীয় ব্যক্তিকে হেবা বিল এওয়াজ মুলে দান করে থাকে তা হলে শরীক কর্তৃক জানার তারিখ হতে ৪ মাসের মধ্যে প্রিয়েমশান করতে পারে।
এওয়াজ দলিল: যে কোন সম্প্রদায়ের বা একই সম্প্রদায়ের বা একই বংশের বা কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সহিত তাহাদের লপ্ত ও সুবিধা মত একের ভূমি অপরকে দিতে পারেন অর্থাৎ পরস্পর এওয়াজ পরিবর্তন সরতে পারেন। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এওয়াজ পরিবর্তন দলিলের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হলো: ক এর জমি খ এর বাড়ীর নিকট এবং খ এর জমি ক এর বাড়ীর নিকট। উভয়ের জমিই উভয়ের বেলপ্ত। কাজেই ক তার জমি খ কে এবং তার জমি ক কে দিয়ে উভয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে রেজিষ্টারী করে নিল। একেই এওয়াজ বা পরিবর্তন দলিল বলে। এই দলিলের কেহ প্রিয়েমশান করতে পারে না।
বন্টনমানা দলিল: শরিকগণ মধ্যে সম্পত্তি ক্রমে নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের বাবদ যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে। একই সম্পত্তিতে মালিক একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়।শরিক দুই প্রকারের, যথা-
উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে খরিদ সূত্রে শরিক। ইংরেজীতে বলা হয় কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এন্ড কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বন্টননামা দলিল করবার সময় সকল শরিকগণ দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে ও দস্তখত করে বন্টননামা দলিল করতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা। বন্টননামা দলিল রেজিষ্টারী করতে হবে কিন্তু ঘরোয়াভাবে বন্টন করে সকল পক্ষগণ যদি বন্টননামা দলিলে দস্তখত করে থাকেন তা হলেও বন্টননামা কার্যকরী হতে পারে। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বন্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন।
অছিয়তনামা দলিল: কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অছিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মদ্যে সকলকে না দিয়ে যদি একজনকে বা কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ দাবী উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সকলেই হবেন।
উইল দলিল: হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাদের আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। যিনি উইল করলেন তিনি জীবমানে একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করলেন কেবল ঐটাই কার্যকরী হবে।
নাদাবী দলিল: কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্ত্বাধিকার নাই মর্মে অথবা স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। এরূপ দলিলকে নাদাবী দলিল বলা হয়।
বয়নামা দলিল: প্রজাদের ভূমি রাজস্ব বাকী পড়লে উপরস্থ মালিকগণ আদালতে খাজনার নালিশ করে ডিক্রি করতেন। প্রজা উক্ত ডিক্রিকৃত টাকা জমিদারকে প্রদান না করলে উক্ত খাজনার ডিক্রিজারী দিয়ে উক্ত ভূমি নিলাম করাতেন। উক্ত নিলাম উপরস্থ মালিকসহ সর্ব সাধারণের খরিদ করবার অধিকার ছিল। যে ব্যক্তি অধিক টাকায় নিলামের ডাক উঠাতেন তিনি উক্ত নিলাম খরিদ্দার বলে গণ্য হতেন। খাজনার ডিক্রি ছাড়া আরও কয়েক প্রকারের নিলাম হয়ে তাকে যেমন সরকার কর্তৃক বাকী ভূমি রাজস্বের নিমিত্ত মানী মোকদ্দমার দাবীর ও দেওয়ানী মোকদ্দমার খরচের টাকার নিমিত্ত ও রেহানী ঋণের দরুন। যিনি নিলাম খরিদ করতেন তাকে একটি নিদর্শন পত্র বা সার্টিফিকেট দেওয়া হতো, তাকে বয়নামা বলা হয়।
দখলনামা দলিল: বন্টনের মোকদ্দমা, স্বত্ব সাব্যস্ত পূর্বক খাস দখল, উৎপাত ও প্রিয়েমশান ইত্যাদি মোকদ্দমায় ডিক্রির পর আদালত হতে বন্টনের মোকদ্দমায় কমিশনার ও অন্যান্য মোকদ্দমায় আদালতের পদাতিক বা নায়েব, নাজির যোগে ডিক্রির মর্মমতে দখলী পরওয়ানের ভিত্তিতে দখল গ্রহণ করিতে হয় এবং দখল দেওয়ার পর কমিশনার ও আদালতের পদাতিক বা নায়েব নাজির রিপোর্টসহ উক্ত দখলী পরওয়ানা আদালতে দাখিল করেন। তাকে দখলনামা দলিল বলা হয়।
রায় দলিল: কোন সম্পত্তি টাকা পয়সা কিংবা অন্যান্য যে কোন কারণে আদালতে নালিশ হলে বাদীর আরজি, বিবাদীর জবাব দৃষ্টে সাক্ষী প্রমাণ গ্রহণ করে একতরফা বা দোতরফা শুনানীর পর হাকিম বিচার করে উক্ত বিচার লিখিতভাবে জানিয়ে দেন তাকে রায় বলা হয়।
ডিক্রি দলিল: রায়ের মর্মমতে রায়ের আদেশাংশ সংযোজন করে বাদী ও বিবাদী পক্ষের নাম ঠিকানাসহ সম্পত্তি সংক্রান্ত হলে সম্পত্তির তফসিল পরিচয়সহ একখানা দলিল আদালত কর্তৃক জারী করা হয় তাকে ডিক্রি বলে।
আরজি দলিল: বাদী বিরোধীয় ভূমির জন্য বিবাদীগণের বিরুদ্ধে আদালতে যে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন তাকে আরজি বলা হয়। এই আরজিতে বাদী তার স্বত্ব সম্বন্ধে যাবতীয় বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন এবং প্রতিকার প্রার্থনা করেন। কোন কোন দরখাস্ত আরজি গণ্যে বিচার হয় যেমন প্রিয়েমশান অভিভাবক নিযুক্তির দরখাস্ত উত্তরাধিকার নিদর্শনপত্র, প্রবেট ইত্যাদি।
আদালত যোগে সাফকবলা দলিল: কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি বিক্রয় করবোর জন্য কারোও নিকট হতে বায়না বাবদ টাকা গ্রহণ করে বায়নাপত্র সম্পাদন করে দিয়ে যদি দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে না দেয় তাহলে যে ব্যক্তি বায়না দিয়েছেন তিনি আদালতযোগে নালিশ করে আদালত কর্তৃক দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করিয়ে নিতে পারেন। আদালতের বিচারে দলিল সম্পাদনের মোকদ্দমা ডিক্রি হলে উক্ত ডিক্রি ঐ আদালতে জারী দিয়ে দলিলের মুসাবিদা ও ষ্ট্যাম্প আদালতে দাখিল করলে তম্মর্মে দলিললিপি করে আদালত দাতার পক্ষে দস্তখত করে দলিল রেজিষ্টারী করে দিবেন।
বায়নাপত্র দলিল: সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয় তাকে বায়নাপত্র বলে। বর্তমানে বায়না দলিল রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। বায়না পত্রের মাদ্যমেও স্বত্ব হস্তান্তরিত হতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি বায়নাপত্র মারফত জমির দখল বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন এবং মূল্যের টাকা গ্রহণ করে থাকেন এবং বিশেষ কারণে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন নাই বা দিতে পারেন নাই। যেহেতু দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং গ্রহীতা দখল বুঝিয়ে নিয়ে ভোগ দখল করছেন সেহেতু সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩ ধারা মতে আংশিক বিক্রয় কার্যকরী হয়েছে। অতএব জমিতে খরিদ্দারের স্বত্ব হয়েছে বলে গণ্য হবে।
বেনামী দলিল: কোন ব্যক্তি বিশেষ কোন কারণে তার নিজের নামে সম্পত্তি খরিদ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া বিবেচিত হলে ঐ ব্যক্তি নিজ অর্থে ও স্বার্থে সম্পত্তি খরিদ করে তার দলিল নিজের নামে না করে তার যে কোন আত্মীয়ের বা বিশ্বাসী বন্ধু বান্ধবের নামে বেনামী দলিল করতে পারেন বা নিজের সম্পত্তি ঋণের দায়ে বা অন্য কোন কারণে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ঐ ব্যক্তি তার নিজের সম্পত্তি কোন আত্মীয় স্বজনেবা বন্ধু বান্ধবের নামে দলিল করে দিতে পারেন। সেই দলিল অবশ্যই সাফকবালা ক্ষেত্র বিশেষে দানপত্র দলিল হবে।
ওয়াকফ দলিল: ইসলামি আইন অনুযায়ী ওয়াকফের অর্থ কোনো মুসলমান কর্তৃক চিরস্থায়ীভাবে কোন সম্পত্তি ধর্মীয়, দাতব্য, পূর্ণের কাজে বা পবিত্র উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে নিজের স্বত্ত্ব বিলোপ করে এবং উক্ত স্বত্ত্ব আল্লাহর সমীপে সমর্পণ করে তবে ইসলামী আইন অনুযায়ী ওয়াকফ হিসাবে গণ্য হবে। কোম্পানির শেয়ার, প্রমিসরি নোট কিংবা নগদ অর্থ ওয়াকফ করা যায়। সাবালক ও সুস্থতা সম্পন্ন ব্যক্তি ওয়াকফ করতে পারে।
ওয়াকফ দুই প্রকার
ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ: পরকালে শান্তির আশায় পূর্ণ অর্জনের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সম্পূর্ণ স্বত্ত্ব দান করা আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলে তাকে ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ বলে। ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ এর সম্পত্তির আয়ের অর্ধাংশের বেশি সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়। ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত সম্পত্তি।
ওয়াকফ-আল-আওলাদ: কোন সম্পত্তির মালিক তার সম্পত্তি নির্দিষ্ট অংশ ধর্মীয়, সৎকাজ বা জনহিতকর কাজের জন্য ব্যয় করার উদ্দেশ্যে দলিলের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি দান করলে তাকে ওয়াকফ-আল-আওলাদ বলে। ওয়াকফ-আল-আওলাদে সম্পত্তিরে আয়ের অর্ধাংশের কম ধর্মীয় কাজে ব্যয় হয়। বাকি অংশ উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে ব্যয় হয়। মোতাওয়াল্লী ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপক।যিনি ওয়াকফ করেন তাকে ওয়াকিফ বলে। ওয়াকফ লিখিত দলিল বা মৌখিকেভাবে করা যায়। তবে ওয়াকফের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট হতে হবে।ওয়াকফ লিখিত ও রেজিস্ট্রকৃত দলিল, মৌখিক দলিল ও দীর্ঘকাল ব্যবহারের ভিত্তিতে কোন সম্পত্তি ওয়াকফে পরিণত হয়।
রেজিস্ট্রেশন ফি:
বায়নাপত্র: সম্পত্তির মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি ৫০০ টাকা। পাঁচ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম হলে ফি এক হাজার টাকা। মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে দুই হাজার টাকা।
বন্ধক দলিল: বন্ধকি অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি বন্ধকি অর্থের ১ শতাংশ এবং ২০০ টাকার নিচে ও ৫০০ টাকার বেশি নয়। অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কিন্তু ২০ লাখ টাকার নিচে হলে বন্ধকি অর্থের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে তা এক হাজার ৫০০ টাকার কম নয় এবং দুই হাজার টাকার বেশি নয়।
বন্ধকি অর্থের পরিমাণ ২০ লাখ টাকার ওপরে হলে রেজিস্ট্রেশন ফি লাগবে বন্ধকি অর্থের শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। তবে তা তিন হাজার টাকার কম নয় এবং পাঁচ হাজার টাকার বেশি হবে না।
হেবা ও দানপত্র: মুসলিম ধর্মের ক্ষেত্রে হেবানামা এবং অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে দানপত্র যদি স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নাতি-নাতনি ও সহোদর ভাইবোনের মধ্যে হয়, তাহলে রেজিস্ট্রি ফি ১০০ টাকা।
বণ্টননামা দলিল: সম্পত্তির মূল্য তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হলে ৫০০ টাকা, তিন লাখ টাকার বেশি এবং ১০ লাখ টাকার কম হলে ৭০০ টাকা। সম্পত্তির মূল্য ১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৩০ লাখ টাকার কম হলে এক হাজার ২০০ টাকা। সম্পত্তির মূল্য ৩০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম হলে এক হাজার ৮০০ টাকা এবং সম্পত্তির মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে দুই হাজার টাকা ফি দিতে হবে।
ভূমি বিষয়ক বিদ্যমান আইনে সর্বশেষ সংশোধন
রেজিষ্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪
(১) কোন সম্পত্তির মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন (সংশোধন) আইনের ১৭(১) ধারার বিধান অনুসারে বাটোয়ারা বা আপোস-বন্টননামা রেজিস্ট্রি করতে হবে।
(২) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় দলিল রেজিস্ট্রেশন (সংশোধণ) আইনের ১৭এ (১) ধারার বিধান অনুসারে অবশ্যই লিখিত এবং রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে।
(৩) বিক্রয় চুক্তি/বায়না চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে চুক্তিপত্রটি রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করতে হবে {ধারা ১৭এ (২)।
(৪) প্রতিটি হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে, রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রীত সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণ এবং বিক্রয়ের প্রকৃতি বর্ণনা করতে হবে। {ধারা ২২এ(১)।
(৫) প্রতিটি দলিলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের ছবি পেষ্ট করে সংযুক্ত করতে হবে, উক্ত ছবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর/বাম বৃদ্ধাঙ্গুলীর টিপসইযুক্ত হবে {ধারা ২২এ(২)।
(৬) সরকার এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে (দলিলের/চুক্তিপত্রের) নির্ধারিত ফরমেট জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবেন {ধারা ২২এ (৩)।
(৭) দলিল সম্পাদনের ৩ মাসের মধ্যে তা রেজিষ্ট্রির জন্য দলিল করতে হবে [যা পূর্বে ছিল ৪ মাস (ধারা ২৩)]।
২০০৫ সাল থেকে নতুন ফরমেট বা ছকবদ্ধ আকারে জমির বিক্রয় দলিল সম্পাদন করার নিয়ম চালু হয়েছে। এতে জমি পূর্ববর্তী নূন্যতম ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণ উল্লেখ করতে হয়। ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যে কোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইনানুযায়ী, যে দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক অথচ রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি, তখন সেই দলিল নিয়ে আপনি কোনো দাবি করতে পারবেন না। সাব-কবলা দলিল, হেবা বা দানপত্র, বন্ধকি দলিল, বায়না দলিল, বণ্টননামা দলিলসহ বিভিন্ন হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। দলিলের বিষয়বস্তু যে এলাকার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেই এলাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে।
লেখক : আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, কুমিল্লা।
Discussion about this post