নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে আইনাঙ্গনের তিন শতাধিক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই শতাধিক আইনজীবী, ২১ বিচারক ও ৮৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও ছয়জন বিচারক আইসোলেশনে আছেন। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে মারা গেছেন আট আইনজীবী। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তিন আইনজীবী এবং দুই কর্মচারী।
সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন ও আইনজীবী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, গত ২৪ মে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য সাবেক এমপি হাজী মকবুল হোসেন, ২৬ মে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শওকত হোসেন অপু, ৩ জুন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাফর মো. মহিউদ্দিন, ১১ জুন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ, ১৩ জুন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, ১৩ জুন রাতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ১৯ জুন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ নাসির উদ্দিন আহমেদ এবং ২০ জুন সিলেট বারের অ্যাডভোকেট আবু সাঈদ আবদুল্লাহ চৌধুরী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে ২৮ মে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম চৌধুরী, ৩১ মে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ফজলুল করিম এবং ১৩ জুন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হাই মণ্ডল মারা যান। সূত্র জানায়, গত ৮ মে করোনায় আক্রান্ত হন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার। ১১ মে তার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা এবং দায়িত্ব পালনের সময় সারা দেশে এ পর্যন্ত অধস্তন আদালতে ২০ জন বিচারক, সুপ্রিমকোর্টের ২৪ জন কর্মচারী এবং অধস্তন আদালতের ৫৯ জন কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে আছেন আরও ছয়জন বিচারক। পাশাপাশি উপসর্গ নিয়ে গত ১৮ জুন মাদারীপুর জেলা জজ আদালতের জারিকারক মো. কাউসার এবং ১৯ জুন নওগাঁ জেলা জজ আদালতের অফিস সহায়ক মহিউদ্দিন মোহনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের এখনও করোনা পরীক্ষার ফলাফল আসেনি।
সর্বপ্রথম গত ২২ মে নেত্রকোনা জেলা ও দায়রা জজ শাহাজাহান কবির করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং এরপরে মুন্সীগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট বেগম রোকেয়া রহমান আক্রান্ত হন। বর্তমানে তারা সুস্থ হয়ে আবার কাজে যোগদান করেছেন। এ মুহূর্তে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন লালমনিরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফেরদৌস আহমেদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক বেগম শামীম আহমেদ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন জয়পুরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রুস্তম আলী। করোনায় আক্রান্ত বাকি বিচারকরা বর্তমানে নিজ বাসস্থানে চিকিৎসাধীন আছেন।
সুপ্রিমকোর্ট থেকে আক্রান্ত বিচারক এবং কর্মচারীর চিকিৎসা বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা জজদের অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া তাদের সঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং সময় সময় প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করা হচ্ছে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিনউদ্দিন বলেন, আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সমিতির পক্ষ থেকে তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আমরা তাদের পাশে আছি।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজধানীর তিনটি বিশেষ হাসপাতালে করোনা রোগের চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছেন সমিতির সদস্য আইনজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এগুলো হলো হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল ও উত্তরার জাপান ইস্ট-ওয়েস্ট হাসপাতাল। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে প্রায় ১০ হাজার সদস্য রয়েছেন। করোনাকালে তাদের প্রণোদনাসহ বিভিন্নভাবে সেবা দেয়া হচ্ছে।
Discussion about this post