প্রতিটি সিভিল বা দেওয়ানী মামলা দায়ের করতে হয় আরজি দাখিলের মাধ্যমে। মামলার বাদী আরজি দাখিল করলেই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হয়। দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৬ নং আদেশে মামলার আরজি সম্পর্কে বলা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে এ আরজি খারিজ হতে পারে, আবার সংশোধনের জন্য বাদীর নিকট ফেরত ও যেতে পারে। অর্থাৎ, মূল কথা হল মামলা দায়েরের জন্য একটি নির্ভূল আরজি এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে দাখিল করতে হবে।
মামলা দায়েরের শুরুতে বাদী আরজিতে মামলা দায়েরের কারণ, যে সকল ঘটনার কারণে মামলা দায়েরের কারণ উদ্ভব হয়েছে সে সব কারণ, মামলার বিষয়বস্তু, মূল্যমান, প্রতিকার উল্লেখ করে আরজিটি আদালত বা আদালত কর্তৃক নিযুক্ত কর্মকর্তার নিকট দাখিল করবে। আরজির সাথে একটি ওকালতনামা দিতে হবে এবং সেই সাথে কোর্ট ফিস, প্রসেস ফিস, সমন এবং ডাকযোগে সমন প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দিতে হবে। আরজির সব কিছু ঠিক থাকলে স্যুট ফাইল হবে। অর্থাৎ সেরেস্তাদার স্যুট ফাইলিং রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করবেন এবং সেই সাথে মামলার মূল্যমান, প্রতিকার, কোর্ট ফিস, প্রসেস ফিস ইত্যাদি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা বিচারকের নিকট পেশ করবে। বিচারক আরজিটি গ্রহণ যোগ্য মনে করলে প্রাথমিকভাবে তা গ্রহণ করবেন এবং অর্ডার সিটে প্রথম অর্ডারটি প্রদান করবেন।
দেওয়ানী মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হল যে, আরজিটি দাখিলের ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে যে, কোন দেওয়ানী আদালতের মামলাটি বিচার করার এখতিয়ার আছে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে, কিভাবে বাদী বুঝবে যে, তার মামলাটি শুনানী করার এখতিয়ার কোন আদালতের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন আদালতের আর্থিক এখতিয়ারগুলো লক্ষ্য করা প্রয়োজন। দেওয়ানী আদালত আইন, ১৮৮৭ অনুসারে বাংলাদেশে পঁাচ ধরনের দেওয়ানী আদালত আছে এবং প্রত্যেকটি আদালতের ভিন্ন ধরনের আর্থিক এখতিয়ার আছে। যেমন যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আর্থিক এখতিয়ার ৪ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সীমাহীন। কাজেই, মামলার বিষয়বস্তুর মূল্যমান যদি ৪ টাকার অধিক হয় তবে সেই মামলা অবশ্যই যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দায়ের করতে হবে। এভাবেই আদালতের এখতিয়ার নির্ধারণ করতে হবে। তাছাড়া আরও একটি বিষয় মামলার শুরুতে বিবেচনায় নিতে হয় এবং তা হচ্ছে সর্বনিম্ন স্তরের আদালতে প্রথমে আরজিটি দাখিল করতে হয় যা দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১৫ ধারায় বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রেও আদালতের আর্থিক এখতিয়ার অনুসরণ করতে হবে। বাদী যদি ভুলক্রমে এখতিয়ারবিহীন আদালতে আরজি দাখিল করে ফেলে তাতেও তেমন সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে আদালত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে দাখিলের জন্য আরজি ফেরত দিবেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে প্রায়ই বিভিন্ন কারণে দেওয়ানী মামলা দায়েরের প্রয়োজন পড়ে যেমন বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা, সম্পত্তির অধিকার থেকে উদ্ভব হওয়া কোন মামলা, ভরণপোষণের মামলা ইত্যাদি। এ ধরনের যে কোন মামলা দায়েরের ক্ষেত্রেই মামলা আরজি দাখিলের মাধ্যমে দায়ের করতে হয়। যে কোন পারিবারিক আদালতে মামলার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। আরজির সাথে প্রয়োজনীয় ফিস দেয়াও আবশ্যক।
Discussion about this post