এম আই মিরাজ
গত ২৩ শে অক্টোবর ২০২২ ইং সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিজয় ‘৭১’ এর ৩২ নম্বর কোর্টে মাননীয় বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের আদালতে বিচারের রায়ে প্রমাণিত হল এক কোটি টাকার চেকটি জাল ছিল । যে চেকের কারণে চেকদাতাদের সাজা হয়। সেই সাজার রায় বাতিল করেছে হাইকোর্ট ।
চেকের লেখাগুলো ভিন্ন ভিন্ন কালিতে। যা খালি চোখে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে। যা জাল চেক মর্মে প্রমাণ হয়। এটিকে সৃজিত চেক বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘হাজী দেলোয়ার হোসেন বনাম রাষ্ট্র’ মামলার রায়ে এই কোটি টাকার জাল চেকের মামলা প্রমাণিত হলো।
এই মামলার রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, শ্রম প্রদান ও ব্যবসায়িক কারণে চেকগ্রহীতাকে আসামিরা চেক দিয়েছেন। কিন্তু কিসের শ্রম ও ব্যবসায়িক কারণে চেক দেওয়া হয়েছে সেটা স্পষ্টতই উল্লেখ করা হয় নাই। এছাড়া এর স্বপক্ষে কি সাক্ষ্যপ্রমাণ বাদী আদালতে দাখিল করেছেন সেটার কোন তথ্য নাই।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে বিচারিক আদালতকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশাটি হলো ঃ-
চেক গ্রহীতা কিসের বিনিময়ে চেকটি পেয়েছেন সেটা সুনির্দিষ্টভাবে মামলার আর্জিতে উল্লেখ না থাকলে বিচারিক আদালত মামলাটি আমলে না নিয়ে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবেন। মামলার আর্জিতে যদি চেক বিনিময়ের সুনির্দিষ্ট কোন বর্ণনা না থাকে তাহলে বিচারিক আদালত সেই আর্জি গ্রহণ করবে না।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুই পক্ষের কৌসুলিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন তিনি।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, দেওয়ানি প্রকৃতির মামলায় সবকিছু প্রমাণের দায়িত্ব থাকে বাদীর। সেই কারণে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা যথানিয়মে অভিযোগকারীকেই তার অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ করতে হবে আদালতে।
মামলার আর্জিতে যদি চেক বিনিময়ের সুনির্দিষ্ট কোন বর্ণনা না থাকে তাহলে বিচারিক আদালত সেই আর্জি গ্রহণ করবে না।
আদালতে হাজী দেলোয়ার হোসেনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি বলেন, হাজী দেলোয়ার হোসেনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চেক গ্রহীতা কোনভাবে একটি চেক পেয়ে উনি তাতে ঘষামাজা করে কোটি টাকা দাবি করে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেছেন। হাইকোর্টের রায়ে আজ প্রমাণিত হলো চেকটি জাল ছিল।
নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় আর.এফ প্রোর্টিজের মালিক হাজী দেলোয়ার হোসেন ও কামরুল হাসান বাচ্চুকে আসামি করে মামলা করেন চেক গ্রহীতা মো. আমিনুল্লাহ। বাদী ওই প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। বাদী মামলায় অভিযোগ করেন যে, আসামিরা পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল এক কোটি টাকার একটি চেক দেন। চেকটি নগদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপস্থাপন করলে ওই বছরের ২৫ জুন তা প্রত্যাখ্যান হয়।
ওই বছরের ১৪ জুলাই ডাকযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। পরে টাকা পরিশোধ না করায় ২৫ আগস্ট মামলা করা হয়। এই মামলায় ২০১৭ সালের ২১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। পরে সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষে ২০২০ সালের পহেলা মার্চ দুই আসামিকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং চেকে উল্লেখিত টাকার সমপরিমাণ কোটি টাকা জরিমানা করে চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন আসামিরা।
আপিলের রায়ে ওই আদালত বলেন, মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। আইনত রক্ষণীয় নয়। এ কারণে মামলাটি পুনরায় বিচারের জন্য বিচারিক আদালতে পাঠান। এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন মামলা করেন হাইকোর্টে।
রিভিশন মামলার রায়ে হাইকোর্ট বাদী অভিযোগনামা প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি আসামিদের খালাস প্রদান করেছেন।
Discussion about this post