বৈবাহিক ধর্ষণকে (ম্যারিটাল রেপ) অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে কেন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।একই সঙ্গে, নারী ও ১৩ বছরের ঊর্ধ্বে কিশোরীদের বৈবাহিক ধর্ষণ অনুমোদনকারী আইন নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
সংশ্লিষ্ট দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা কেন সংশোধন করা হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চারটি সংস্থার করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জেনিফা জব্বার ও শারমিন আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
এর আগে গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাক, নারীপক্ষ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এই চারটি সংগঠন রিট দায়ের করে।
পরে ব্লাস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নারী ও ১৩ বছরের বেশি বয়সী কিশোরীদের বৈবাহিক ধর্ষণ অনুমোদনকারী আইন যা বৈষম্যমূলক এবং বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের মৌলিক অধিকার সমতা, বৈষম্যহীনতা, আইনের সুরক্ষা, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের সুরক্ষা ক্ষুণ্ন করে, তা কেন বাতিল হবে না এবং এই আইনগুলো বাতিল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
Training on Land Documentation
দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কিত ব্যতিক্রম দফা এবং এ সংশ্লিষ্ট দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১) ধারা, যেগুলো বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের (১৩ বছরের ঊর্ধ্বে) স্বামীর মাধ্যমে ধর্ষণের বিচার পাওয়ার অধিকার ক্ষুণ্ন করে। এসব ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়।
টাঙ্গাইলের ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৫ অক্টোবর টাঙ্গাইলের ১৪ বছরের এক কিশোরী মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মারা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত ৩৪/৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে গত ২০ সেপ্টেম্বর তার বিয়ে হয়েছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বিয়ের প্রথম রাত থেকেই ওই কিশোরীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণ আইন সংস্কারের দারিতে রেইপ ল’ রিফর্ম কোয়ালিশনের ১০ দফা দাবির বিভিন্ন পর্যায়ে তুলে ধরা হয় এবং জোরপূর্বক যৌনমিলনের ফলে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে বিবাহিত কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনা এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত জাতীয় সমীক্ষায় (২০১৫) জানা গেছে যে, ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বিবাহিত নারী প্রতিনিয়ত তাদের স্বামীর মাধ্যমে যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, যার মধ্যে জোরপূর্বক যৌনমিলন অন্তর্ভুক্ত।
এমন পরিস্থিতিতে বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের (১৩ বছরের ঊর্ধ্বে) সাংবিধানিক মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চারটি মানবাধিকার সংস্থা ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের সংস্কার করে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশনা চেয়ে এই রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়।
Discussion about this post