Friday, May 9, 2025
  • Login
No Result
View All Result
Home
BDLAWNEWS.COM
  • বাংলাদেশ
    • খুলনা
    • চট্টগ্রাম
    • ঢাকা
    • বরিশাল
    • ময়মনসিংহ
    • রংপুর
    • সিলেট
    • রাজশাহী
  • জাতীয়
    • দেশ জুড়ে
    • রাজনীতি
    • অনিয়ম
    • দেশ ও দশ
    • একাদশ নির্বাচন
  • আন্তর্জাতিক
  • আইন আদালত
    • উচ্চ আদালত
    • কোর্ট প্রাঙ্গণ
    • আইন সংস্থা
    • যুগান্তকারী রায়
    • আইনী ভিডিও
  • আইন পড়াশুনা
    • দৈনন্দিন জীবনে আইন
    • গুণীজন
    • মতামত
    • আইন জিজ্ঞাসা
    • ইংরেজি
    • ব্লগ
  • আইন চাকুরী
  • সকল বিভাগ
    • ’ল’ ক্যাম্পাস
    • সাক্ষাৎকার
    • সাহিত্য
    • মানবাধিকার
    • খেলাধুলা
    • বিনোদন
    • খেলাধুলায় আইন
    • একাদশ নির্বাচন
    • আইন জিজ্ঞাসা
    • যুগান্তকারী রায়
    • আইন সংস্থা
    • দেশ ও দশ
    • সদ্যপ্রাপ্ত
    • সর্বশেষ সংবাদ
  • বাংলাদেশ
    • খুলনা
    • চট্টগ্রাম
    • ঢাকা
    • বরিশাল
    • ময়মনসিংহ
    • রংপুর
    • সিলেট
    • রাজশাহী
  • জাতীয়
    • দেশ জুড়ে
    • রাজনীতি
    • অনিয়ম
    • দেশ ও দশ
    • একাদশ নির্বাচন
  • আন্তর্জাতিক
  • আইন আদালত
    • উচ্চ আদালত
    • কোর্ট প্রাঙ্গণ
    • আইন সংস্থা
    • যুগান্তকারী রায়
    • আইনী ভিডিও
  • আইন পড়াশুনা
    • দৈনন্দিন জীবনে আইন
    • গুণীজন
    • মতামত
    • আইন জিজ্ঞাসা
    • ইংরেজি
    • ব্লগ
  • আইন চাকুরী
  • সকল বিভাগ
    • ’ল’ ক্যাম্পাস
    • সাক্ষাৎকার
    • সাহিত্য
    • মানবাধিকার
    • খেলাধুলা
    • বিনোদন
    • খেলাধুলায় আইন
    • একাদশ নির্বাচন
    • আইন জিজ্ঞাসা
    • যুগান্তকারী রায়
    • আইন সংস্থা
    • দেশ ও দশ
    • সদ্যপ্রাপ্ত
    • সর্বশেষ সংবাদ
No Result
View All Result
BDLAWNEWS.COM
No Result
View All Result
Home আইন-আদালত
ভরণপোষণ

“ভরণপোষণ” পরিভাষাটি পিতামাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কী!

by বিডিলনিউজ
July 8, 2020
in আইন-আদালত, উচ্চ আদালত, দৈনন্দিন জীবনে আইন, শীর্ষ সংবাদ, সদ্যপ্রাপ্ত
0
A A
0
560
VIEWS
Facebook

user-avatar-picআশীব কাঁইজি

ভরণপোষণ
Alimony (এ্যলিমোনি)/ ‘النفقة’ (আন্নাফাক্বা)
A husband’s or wife’s court-ordered provision for a spouse after separation or divorce.
—————————————————–
এই তো কিছুদিন পূর্বে বয়স্ক-বয়স্কা বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পিতামাতার অন্ন-বস্ত্রাদির দায়িত্ব উপযুক্ত সন্তানকে বহন করতে হবে বলে সংসদে বিধান নির্ধারণ করা হলো। এ বিধানটির নাম দেওয়া হলো “পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন- ২০১৩”। আর এর ওপর এদেশের সমস্ত পত্রিকা, প্রচার মাধ্যম এবং কিছু কিছু লেখক গবেষক একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কেউ একবারও ভেবে দেখল না যে ‘ভরণপোষণ’ পরিভাষাটির অভিধা কী? আইনটি নিচে তুলে ধরা হলো-

ভরণপোষণ- 2013-1ভরণপোষণ- 2013-2ভরণপোষণ- 2013-3

‘ভরণপোষণ’ পরিভাষাটি মূলত ‘ভরণ’ ও ‘পোষণ’ এ দু’টি পরিভাষার সন্ধিযোগে উৎপত্তি একটি সাধিত পরিভাষা। নিচে ভরণ ও পোষণ পরিভাষাদ্বয়ের অভিধা তুলে ধরা হলো।
ভরণ বি ভরা, পূরণ, পূর্ণকরণ ক্রি জোয়ানো পশুকে পাল দেওয়া, জোয়ানো গবাদিপশুকে বীর্য দান করা।
পোষণ বি পালন, লালন, পুষ্টি, বর্ধন, মনে ধারণ।

পরিভাষা দু’টির অভিধা হতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, ‘ভরণপোষণ’ পরিভাষাটির অভিধা ‘পালন করা ও সঙ্গম করা’। এরূপ অর্থ বহনকারী কোনো পরিভাষা বাবা-মা/ পিতা-মাতার ব্যাপারে কখনই প্রযোজ্য হতে পারে না। এরূপ পরিভাষা কেবল স্ত্রীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে।

হাস্যকর হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের বৃহত্তম অঞ্চল জুড়েই ভরণ পরিভাষাটির দ্বারা কেবল সঙ্গম বা মৈথুন বুঝায়। যেমন- নাটোর ও রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চল। গরু বা ছাগল গরম হলে এসব অঞ্চলের লোকেরা বলে থাকেন, গরুটি ভরণ করতে হবে, ছাগলটি ভরণ করতে হবে। গরু, ছাগল ও মুরগীর সঙ্গমের ক্ষেত্রে ঐসব অঞ্চলে সরাসরি ভরণ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে আবহমানকাল হতে।

এখন আমরা যদি বলি পিতামাতার ভরণপোষণ তবে এর অর্থ পিতামাতার সঙ্গমপোষণ এরূপকী দাঁড়ায় না?
আর এরূপ অশ্লীল অভিধাধারী পরিভাষা পরিত্যাগ করে পিতামাতার ‘পালনপোষণ’, ‘লালনপালন’, ‘দেখাশোনা’, ‘ব্যয়বহন’ ও ‘খায়ব্যয়’ এরূপ পরিভাষা ব্যবহার করলে কোথায় বিধানের ক্ষতি হতো? কোথায় মহাভারত অশুদ্ধ হতো? কোথায় বিধানসভার মানহানী হতো?

সভ্য সমাজের বিধানজ্ঞ বা বিধানবিশারদরা যে, স্বয়ং পিতামাতার ব্যাপারে এরূপ লজ্জাস্কর মাত্রিকার অধীনে বিধান প্রস্তুত করতে পারে তা কেবল অবাক হওয়া ও মাথা নীচু হওয়ার বিষয়ই বটে।

নিবেদন
বিধানবিদ ও বিধানবিশারদরা পিতামাতার ক্ষেত্রে ‘ভরণপোষণ’ পরিভাষাটি অবিলম্বে পরিত্যাগ করে ‘পালনপোষণ’, ‘লালনপালন’, ‘দেখাশোনা’, ‘ব্যয়বহন’ ও ‘খায়ব্যয়’ maintenance– এরূপ কোনো পরিভাষার ব্যবহার চালু করে সারা বাঙালীজাতিকে বাংলাভাষার বিপর্যয় ও বাংলাভাষার ধ্বংসের হাত হতে মুক্তি দেন। অন্যথায় জেনেশুনে বাংলাভাষার সাথে এরূপ রূঢ় আচরণ করা হবে সর্বকালের চরম আত্মঘাতী।

হ্যাঁ এরূপ ভুল যদি গতানুগতিক ভাবে হয়ে থাকত তবে অগত্যায় মেনে নেওয়া যেতো। কিন্তু সজ্ঞানে দেশের সর্বোচ্চ স্থান সংসদে বসে এরূপ ভুল করা কোনো মতেই মেনে নেওয়া যায় না।
—————————————————————
ভরণপোষণ পরিভাষাটির ঢালাও ব্যবহারমূলক কতিপয় বিশেষজ্ঞ মতামত নিচে তুলে ধরা হলো-
পারিবারিক আইনে স্ত্রী এবং সন্তানের ভরণপোষণের বিধান রয়েছে। সাধারণত স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর এবং সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার ওপর ন্যস্ত হয়। আবার অনেক সময় স্ত্রী তার বিয়েবিচ্ছেদের পরও স্বামীর কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন। কিন্তু বাবা-মা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন, তখন তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব কার? বাংলাদেশে এতদিন পর্যন্ত এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো আইন ছিল না। নৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে সন্তানরা বিশেষত ছেলে সন্তানরা এই দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমান আইনে এই দায়িত্ব ছেলে-মেয়ে উভয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য সাজার বিধানও রাখা হয়েছে।

সব পিতা-মাতাই সন্তানের মঙ্গল চান। সাধারণত কোনো পিতা-মাতাই সন্তানের বিরুদ্ধে যান না। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে কোনো সন্তান পিতা-মাতাকে বাধ্য করে বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোথাও বসবাস করতে, অথবা কোনো সন্তান যদি যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণে পিতা-মাতার ভরণপোষণ না করেন, তাহলে কি কোনো প্রতিকার নেই? অবশ্যই আছে। এ ক্ষেত্রে তারা ভরণপোষণের জন্য আইনের আশ্রয় নিয়ে তাদের অধিকার আদায় করতে পারেন।

‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন- ২০১৩’ আইনটি ইতোমধ্যে কার্যকরও হয়ে গেছে। গত ১ জুলাই চীনে এরকম একটি আইন পাস হয়। ‘এলডারলি রাইটস ল’ বা প্রবীণ অধিকার আইন নামের সেই আইনটির মূলকথা, সন্তানদের অবশ্যই বৃদ্ধ বাবা-মার দেখাশোনা করতে হবে। ৭৭ বছরের বৃদ্ধ যে মা ৪০ কিলোমিটার বা ২৫ মাইল দূরে থাকেন, তাকে বন্ধের দিনগুলো ছাড়াও দুই মাসে অন্তত একবার দেখতে যেতে হবে। এভাবে আইন করে আসলে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের অধিকার কতটুকু সংরক্ষণ করা যাবে বলা মুশকিল। তারপরও জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিও আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে সেদিক থেকে এই আইনের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের আইনটি সম্পর্কে জানা যাক।

পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন কী?
পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন একটি জনকল্যাণকর আইন। বাংলায় প্রণীত এ আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যেহেতু সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয় সেহেতু আইনটি প্রণয়ন করা হলো। অর্থাৎ কোনো সন্তান যদি কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে পিতা-মাতার ভরণপোষণ না করে তাহলে তারা ভরণপোষণের জন্য এ আইনের অধীনে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায় করতে পারবেন।

কে কাকে ভরণপোষণ করবে?
আইনে ভরণপোষণ প্রদানে সন্তান বলতে শুধু পুত্রকেই বোঝায়নি বরং কন্যাকেও বুঝিয়েছে। অর্থাৎ পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব শুধু ছেলের একার নয় বরং মেয়েকেও নিতে হবে। এর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা আনা হয়েছে। আর ভরণপোষণ শুধু কোনো বিশেষ সন্তান নেবে তা নয় বরং সবাইকে নিতে হবে। তবে একাধিক সন্তান থাকলে তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। কোনো সন্তান পিতা-মাতাকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোথাও একত্রে বা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। প্রত্যেক সন্তানকেই তাদের পিতা-মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে এবং চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে। পিতা-মাতা একত্রে বা আলাদা বসবাস করলে প্রত্যেক সন্তানকে সাধ্যমতো তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে।

কী পরিমাণ ভরণপোষণ দিতে হবে?
পিতা-মাতা যদি সন্তানের সঙ্গে বসবাস না করেন তবে তাদের প্রত্যেক সন্তান নিজ নিজ উপার্জন থেকে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে।

পিতা-মাতা ছাড়া আর কাকে ভরণপোষণ দিতে হবে?
আইনটি শুধু পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি। পিতা-মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদি ও নানা-নানির ভরণপোষণ বিষয়েও জোর দিয়েছে। পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদিকে এবং মাতার অবর্তমানে নানা-নানিকে পিতা-মাতার মতো ভরণপোষণ দিতে হবে।

অপরাধের শাস্তি কী?
আইনটি সন্তানদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি অপরাধ, দ- ও বিচারব্যবস্থা কেমন হবে সে বিষয়েও বিধান দিয়েছে। যেমন কেউ যদি এই বিধানাবলি লঙ্ঘন করে তবে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদ- হতে পারে। অনাদায়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদ- প্রদান করতে পারে আদালত। এছাড়া কোনো সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয় যদি পিতা-মাতা বা দাদা-দাদি বা নানা-নানির ভরণপোষণ প্রদানে বাধা দেয় বা অসহযোগিতা করে তবে তার সাজাও উপরোল্লিখিত দণ্ডের মতোই হবে।

অপরাধের ধরন কী?
আইনে কেউ অপরাধ করলে অবশ্যই তা আমলযোগ্য। এই আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলায় জামিনও পাওয়া যেতে পারে। মামলায় আপস-মীমাংসারও সুযোগ রয়েছে।

অভিযোগ কোথায় করতে হবে?
অপরাধের অভিযোগ দায়ের ও বিচার হবে প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। তবে অপরাধের লিখিত অভিযোগ পিতা-মাতাকেই দায়ের করতে হবে। অন্যথায় আদালত তা গ্রহণ করবেন না। পিতা-মাতার অবর্তমানে কে লিখিত অভিযোগ করার অধিকারী সে বিষয়ে আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি।

বিকল্প সমাধান আছে কি?
হ্যাঁ। আদালত সংশ্লিষ্ট অভিযোগের আপস নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার বা কাউন্সিলর কিংবা অন্য কোনো উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রেরণ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকে শুনানির সুযোগ দিয়ে তবেই নিষ্পত্তি করতে হবে এবং তখনই তা উপযুক্ত আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তি হয়েছে বলে গণ্য হবে।

এ আইনে কোনো মামলা কি এর মধ্যে হয়েছে?
ইতোমধ্যে ভরণপোষণ না দেয়ার অভিযোগ জানিয়ে চাঁদপুরের ছেলে ইয়াছিন রানার (৩০) বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার পিতা মো. লিয়াকত আলী (৬০)। আইন পাস হওয়ার পর এটিই প্রথম মামলা।
সব শেষ কথা, আইনের পাশাপাশি সন্তানের মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে। আর এ কাজটি পিতা-মাতাকেই নিতে হবে। আর সন্তানকেও তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা ভাবতে হবে এবং পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে পরিবার ও সমাজ তথা দেশ সুন্দর হবে।
লেখক: গবেষণা কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া),
ই-মেইল: monirlawbd@gmail.com

ভরণপোষণ
খোরপোষ বা ভরণপোষণের ব্যবস্থা ভারতবর্ষের বিভিন্ন আইনে আছে- যেমন, ভারতীয় ফৌজদারী পদ্ধতি, ১৯৭৩ (Code of Criminal Procedure, 1973)-এর ১২৫ ধারায় এবং হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ ও হিন্দু দত্তক এবং ভরণপোষণ আইন, ১৯৫৬-তে।

ভারতীয় ফৌজদারী পদ্ধতি, ১৯৭৩ (Code of Criminal Procedure, 1973)-এর ১২৫ ধারা অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির স্ত্রী, বৈধ কিংবা অবৈধ নাবালক সন্তান (তারা বিবাহিত হোক বা না হোক), শারীরিক বা মানসিক দিক থেকে প্রতিবন্ধী সাবালক সন্তান, পিতা বা মাতা যদি নিঃসম্বল হন এবং নিজেদের খরচপত্র চালাতে অসমর্থ হন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে তাঁদের খোরপোষ দিতে হবে। সাবালক কন্যা যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তার খোরপোষ দাবী করার অধিকার নেই।

প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট যদি প্রমাণপত্র দেখে নিশ্চিত হন যে, ব্যক্তিটি তাঁর উপর নির্ভরশীল উপরে উল্লেখিত পরিজনদের উপেক্ষা করছেন এবং ভরণপোষণে অস্বীকৃত হচ্ছেন, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট ঐ ব্যক্তিকে তাঁদের নিয়মিত মাসোহারা বা খোরপোষ দেবার হুকুম জারি করতে পারেন। সেই খোরপোষের পরিমান ম্যাজিস্ট্রেট নির্দিষ্ট করবেন এবং সময়ে সময়ে সেটা তাঁর নির্দেশে পরিবর্তীত হতে পারে। বিবাহিত নাবালিকা কন্যার ক্ষেত্রে যতদিন না সে নিজের খরচপত্র চালাতে সমর্থ হয়, ততদিন সে খোরপোষ পাবে।

এই ব্যবস্থায় স্ত্রী বলতে শুধু বৈধ স্ত্রী বোঝাচ্ছে না, যে নারীর সঙ্গে আইনগত ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে তাঁকেও বোঝাবে – যদি না তিনি আবার বিয়ে করে থাকেন। নাবালক বলতে বোঝাবে ভারতীয় সাবালকত্ব আইন, ১৯৭৫-এ যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আইন অনুসারে ১৮ বছরের অনুর্ধরা নাবালক।

এই ব্যবস্থা অনুযায়ী স্ত্রী হিসেবে কোনও নারী খোরপোষ দাবী করতে পারবেন না, যদি তিনি অন্য কারোর সঙ্গে ব্যাভিচারে লিপ্ত থাকেন অথবা কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে অস্বীকৃত হন, অথবা যেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে আলাদাভাবে বসবাস করছেন।

খোরপোষ বা ভরণপোষণের ব্যবস্থা হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ এবং হিন্দু দত্তক এবং ভরণপোষণ আইন, ১৯৫৬-তেও রয়েছে। ভরণপোষণ আইন, ১৯৫৬-তে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর ভরণপোষণ পাবার অধিকারের কথা বলা আছে। বিবাহিতার স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে স্বামী বাধ্য। একসঙ্গে বসবাস না করলেও স্ত্রী ভরণপোষণ দাবী করতে পারেন, যদি- স্বামী স্ত্রীর অনুমতি বা সম্মতি ছাড়াই তাঁকে ফেলে রেখে চলে যান, ইচ্ছেকরে স্ত্রীকে অবহেলা করেন বা যুক্তিসঙ্গতঃ কারণ ছাড়াই তাঁকে পরিত্যাগ করেন; স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিক ভাবে এমন নির্যাতন করেন যে স্ত্রীর পক্ষে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করা ভয়বশতঃ সম্ভব হয় না; স্বামী কোনও ভয়াবহ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন; যদি সেই স্বামীর অন্য কোনও বিবাহিত স্ত্রী থাকেন; যদি স্বামী তাঁর রক্ষিতাকে বাড়িতে এনে সহবাস করেন; হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন, কিংবা অন্য কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণে।

প্রসঙ্গতঃ হিন্দু দত্তক ও ভরণপোষণ আইনে সহায়-সম্বলহীন পুত্রবধূও শ্বশুরের কাছ থেকে খোরপোষ পেতে পারেন। সহায়-সম্বলহীন বলতে বোঝাচ্ছে যে, সেই নারী যদি নিজের খরচা চালাতে অসমর্থ হন, যদি তাঁর নিজের বা নিজের অধিকারে কোনও সম্পত্তি না থাকে এবং তাঁর স্বামীর জমি, বাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তি থেকে বা তাঁর পিতা বা মাতার জমি, বাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তি থেকে খরচ মেটাতে না পারেন।

হিন্দু বিবাহ আইনে রয়েছে যদি কোনও হিন্দু পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত থাকেন কিংবা নিজের হিন্দু স্ত্রীকে নির্যাতন করেন কিংবা স্ত্রীর কোনও খোঁজ খবর না রাখেন, অকারণে সহবাস থেকে নিরত থাকেন; উপরন্তু তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা আনেন কিংবা আইন সম্মত ভাবে আলাদা থাকার দাবী করেন কিংবা সহবাসের অধিকার পুনঃস্থাপনের জন্য দাবী জানান, সেক্ষেত্রে সেই হিন্দু স্ত্রী আদালতের কাছে রিলিফ বা আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা দাবী করতে পারেন। অর্থাত্, বৈধ স্বামীর কাছ থেকে খোরপোষের দাবী করে দরখাস্ত করতে পারেন এবং মামলা চালানোর খরচাও দাবী করতে পারেন।

ভরণপোষণ পাওয়া আপনার অধিকার
এই ছবির মতো দাম্পত্যে সুখ-আনন্দ থাকুক। কিন্তু দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে গেলে প্রশ্ন ওঠে ভরণপোষণ দেওয়া না-দেওয়ার। মডেল: শুভ ও বেনজীরতিথির (ছদ্মনাম) বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর। এর মধ্যে কোলজুড়ে এসেছে একটি সন্তান। বিয়ের পরই জানা গিয়েছিল স্বামী মাদকাসক্ত। এ থেকে বের করে আনার চেষ্টাও কম করেনি তিথি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। সন্তান জন্মানোর পর স্বামী তিথিকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। তিথিকে দেন না কোনো ভরণপোষণ, এমনকি একমাত্র সন্তানের জন্যও কোনো টাকা পাঠান না। তিথি লেখাপড়া তেমন একটা করেননি যে চাকরি করবেন, আবার বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। এখন কীভাবে তিথি আদায় করবেন নিজের আর সন্তানের ভরণপোষণ। তিথি হয়তো জানেন না, আইন তাঁর ভরণপোষণের অধিকার নিশ্চিত করেছে। মুসলিম আইনে আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা তাঁদের স্ত্রী, সন্তানসন্ততি, মা-বাবা, যাঁরা আর্থিকভাবে অসমর্থ, তাঁদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

ভরণপোষণ কারা পাবেন স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে বিয়ে বর্তমান থাকা অবস্থায় ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার লাভ করেন। ছেলেসন্তান সাবালক না হওয়া পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণ লাভ করার অধিকারী। ছেলেসন্তান সাত বছর পর্যন্ত এবং মেয়েসন্তান বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত যদি মায়ের কাছে কিংবা মায়ের মা, অর্থাৎ নানির কাছে থাকে, তবু বাবা তার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

এ ছাড়া পঙ্গু, অক্ষম, পাগল এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী সাবালক সন্তানও বাবার কাছে ভরণপোষণ পাবে। তবে সন্তান যদি অন্যায়ভাবে বাবার সঙ্গে থাকতে অস্বীকার করে কিংবা যে শিশু তার নিজস্ব সম্পত্তির আয় থেকে নিজের ভরণপোষণ করতে সক্ষম, সে শিশুর ভরণপোষণ দিতে বাবাকে বাধ্য করা যাবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলাদাভাবে বসবাস করলেও স্ত্রী স্বামীর কাছে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রাখেন। যেমন ১. স্ত্রীকে তাৎক্ষণিক দেনমোহর পরিশোধ না করলে ২. স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে ৩. স্বামী যদি অভ্যাসগতভাবে খারাপ ব্যবহার করেন ৪. দীর্ঘকাল স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামী দূরে থাকলে ৫. অনুমতি ছাড়া স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে।

পরিমাণ
ভরণপোষণের পরিমাণ স্বামী-স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক সংগতির ওপর নির্ভর করে। অনেক সময় নিকাহনামায় উল্লেখ থাকে, স্বামী মাসিক কত টাকা ভরণপোষণ হিসেবে দেবেন। সাধারণ অবস্থায় স্বামী তাঁর নিজ গৃহেই স্ত্রী বা স্ত্রীদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান দিয়ে থাকেন। আইনসংগত বা যুক্তিযুক্ত কারণে যখন স্ত্রী আলাদা বসবাস করেন, তখন স্বামী নগদ অর্থ দ্বারা ভরণপোষণ জোগাবেন।

তালাকের পর ভরণপোষণ
তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী কেবল ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ পাবেন। অর্থাৎ, তালাক কার্যকর হওয়ার পর স্ত্রী মাত্র তিন মাসের জন্য ভরণপোষণ পাবেন। তবে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে যে ইদ্দত পালন করতে হয়, সেই সময়ের জন্য স্ত্রী কোনো ভরণপোষণ পাবেন না। গর্ভবতী থাকলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত যেহেতু তালাক কার্যকর হয় না, তাই সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে হবে।

আদালতে যাওয়ার আছে অধিকার
আইনসম্মত স্বামী যদি স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ না দেন, তাহলে পারিবারিক আদালতে প্রতিকার চাওয়া যায়। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ অধিকার রয়েছে। সন্তান ও বৃদ্ধ মা-বাবাও আদালতের মাধ্যমে ভরণপোষণ পাওয়ার জন্য মামলা করতে পারেন।

চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছেও আবেদন করা যায় স্ত্রী খোরপোশ দাবি করে স্বামীর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের বা মেয়রের কাছে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন পাওয়ার পর চেয়ারম্যান বা মেয়র স্ত্রী ও স্বামী উভয় পক্ষের পছন্দমতো একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে সালিসি পরিষদ গঠন করবেন। সালিসি পরিষদ স্ত্রীর দাবির যৌক্তিকতা যাচাই করে ভরণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত দেবে এবং সেই মোতাবেক একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

ভরণপোষণ সংক্রান্ত ধর্মীয় আইনের বিধান
ভরণপোষণ সংক্রান্ত বিধান, মুসলিম আইনের মূলনীতি
একজন পিতা তাহার ছেলেদিগকে বয়প্রাপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এবং কন্যাগণকে তাহাদের বিবাহ হওয়া পর্যন্ত ভরণপোষণ যোগাইতে বাধ্য৷ যদি সন্তানগণ নিজেদের ভরণপোষণ যোগাইতে অসমর্থ থাকে, তবে তাহারা সাবালকত্ব অর্জন করার পরও ভরণপোষণ দাবী করাকে আইন অনুমতি প্রদান করে৷
[পি-এল-ডি (১৯৬৭) ঢাকা,৫৭৫]

এমনকি সন্তানগণ অন্য একজনের তত্ত্বাবধানে থাকিলেও পিতা তাহাদের ভরণপোষণ যোগাইতে বাধ্য৷ কিন্তু সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য নিজেদের আলাদা উত্ স থাকিলে সেই ক্ষেত্রে পিতা ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নহেন৷ পিতা তাহার প্রাপ্ত বয়স্ক পুত্রদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নহেন, যদি না তাহারা বৈকল্য বা রোগের কারণে ভরণপোষণ যোগাইতে বাধাগ্রস্ত হইয়া থাকে৷
[হেদায়া, ১৪৮]

ভরণপোষণের ক্ষেত্রে বযোঃপ্রাপ্তির বয়সকে বিবেচনা করিতে হইবে এবং ১৮৭৫ সনের সাবালকত্ব আইনের অধীনে সাবালকত্ব লাভের বয়সকে নহে৷
যদিও কোন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে কোন কাজ করার যোগ্য, তথাপি সে যদি ঐ কাজ করে এবং উহা তাহার জন্য উপযুক্ত বা সঙ্গত না হইলে, সেই ব্যক্তিকে দূর্বল এবং নিজের ভরণপোষণ যোগাইতে অসমর্থ বলিয়া গণ্য করা হইবে৷
[বেঈলী, ৪৬২]

পিতা তাহার নাবালক সন্তানদের স্বাভাবিক অভিভাবক ,তিনি সন্তানদের ভরণপোষণ বা খোরপোষের টাকা যোগাইবার জন্য দায়ী, যদিও সন্তানদের হিযানত বা তত্ত্বাবধান তাহার মা-এর নিকট
[পি-এল-ডি (১৯৬১) লাহোর, ৭৬৮]

অথবা সন্তানের মাতামহীর নিকট থাকিয়া থাকে ৷
[১৫৮, আই,সি, ৫৮১]

এমনকি যেই ক্ষেত্রে কোন স্ত্রী তাহার খোরপোষের আবেদনপত্রে সন্তানের ভরণপোষণ বা খোরপোষের দাবী স্পষ্ঠভাবে উল্লেখ করেন নাই,সেইক্ষেত্রেও আদালত সন্তানের খোরপোষ বা ভরণপোষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিতে পারেন ৷

[পি-এল-ডি (১৯৬১) করাচী, ১২]
যদি পিতা তাহার সন্তানের তত্ত্বাবধানের কোন অধিকার রাখেন,তবে তিনি তাহা বলবত্ করিতে পারেন, কিন্তু তিনি তাহা না করিলেই বা তাহার সন্তানগণ অনত্র বসবাস করিলেই তাহাদের পিতার নিকট হইতে ভরণপোষণ দাবী করা বা আদায় করার অধিকার হইতে তাহাদিগকে বঞ্চিত করিবে না

[পি-এল-ডি (১৯৬১) লাহোর, ৭৩৩]
ক্ষেত্রে কোন সন্তানের তত্ত্বাবধানের অধিকার তাহার মায়ের থাকে এবং যখন সে তাহার মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকে, সেই ক্ষেত্রেও পিতা সন্তানকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য ৷ এমতাবস্থায়, যেইক্ষেত্রে মা ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামীর নিকট হইতে দূরে বাস করিতেছেন ,সেইক্ষেত্রেও স্বামী তাহার স্ত্রীর সহিত বসবাসরত সন্তানের ভরণপোষণের জন্য দায়ী হইবেন ৷ তিনি এই অজুহাতে তাহা অস্বীকার করিতে পারেন না যে, স্ত্রীকে ফিরিয়া আসিতে হইবে এবং তাহার সহিত বাস করিতে হইবে ৷

[পি-এল-ডি (১৯৬৫) করাচী, ১৮৭]
পিতা গরীব নিজস্ব পরিশ্রমে আয়ক্ষম নয় অথচ মা স্বচ্ছল ৷ এক্ষেত্রে সন্তানের ভরণপোষণ মায়ের উপর পড়বে ৷

[হেদায়া-১৪৮]
পিতা-মাতা অস্বচ্ছল ও অসামর্থ অথচ দাদা স্বচ্ছল এ ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ দাদার দায়িত্ব ৷

[বেঈলী ৪৫৯-৪৬২]
কন্যা বিবাহের পর স্বামীর ঘরে চলে গেলে পিতার আর ভরণপোষণের দায়িত্ব থাকে না ৷ এমনকি কন্যা তালাকপ্রাপ্তা হলেও৷

[(১৯১৩) ৩৬ মাদ্রাজ ৩৩৮৫; ১৩ আই সি ২৩৬]
পিতা গরীব অথচ পিতার এক ভাই স্বচ্ছল৷ এক্ষেত্রে আদালত ঐ পিতার ভাইকে তার ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণের নির্দেশ দিতে পারেন৷
[বেঈলী ৪৬২]

ভরণপোষণ সংক্রান্ত বিধান, হিন্দু আইন
ক.
১. ভরণপোষণের সংজ্ঞা
ভারতে প্রযোজ্য ১৯৫৬ সালের হিন্দু দত্তকগ্রহণ ও ভরণপোষণ আইনের ৩(খ) ধারায় ভরণপোষণের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে৷ উক্ত ধারা অনুযায়ী ভরণপোষণ বলতে-
(১) সর্বাবস্থায় খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার বিধান করা;
(২) অবিবাহিতা কন্যাদের ক্ষেত্রে, তাদের বিবাহের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করাকে বোঝায়৷

হিন্দু ভরণপোষণ আইন অনুযায়ী, একজন হিন্দু ব্যক্তি তার নাবালক পুত্র, অবিবাহিতা কন্যা, স্ত্রী ও বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকে৷

২. ভরণপোষণের প্রকারভেদ
একজন হিন্দু ব্যক্তির ভরণপ্রষণের দায়িত্ব দুই প্রকার; যথা-
(ক) নিরংকুশ দায়িত্ব: একজন হিন্দু তার ধার্মিক স্ত্রী, নাবালক পুত্র, অবিবাহিতা কন্যা, বৃদ্ধ পিতা-মাতা ও অবৈধ সন্তানের ভরণপোষন দিতে বাধ্য ৷
(খ) সীমিত দায়িত্ব: ইপরে বর্ণিত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনার্থে পৈত্রিক সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় ৷

৩. ভরণপোষণের ব্যক্তিগত দায়িত্ব
একজন হিন্দুর সম্পত্তি থাকুক বা না থাকুক, সে তার স্ত্রী, নাবালক পুত্র, অবিবাহিতা কন্যা, বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণ দানে আইনতঃ বাধ্য ৷ এদের ভরণপোষণের দায়িত্ব ব্যক্তিগত প্রকৃতির এবং উক্ত পক্ষদের সাথে সর্ম্পকের কারণে উদ্ভূত ৷
[Savitribai Vs. Luximibai (1878) 2 Bom.573,597-8(F.B.)]

৪. সহ-অংশীদারী সম্পত্তির মালিকানার উপর নির্ভরশীল দায়িত্ব:
কর্তার দায়িত্ব মিতাক্ষরা যৌথ পরিবারের কর্তা পরিবারের সকল পুরুষ সদস্য এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ দানে আইনতঃ বাধ্য ৷
[Manu. Chap. 9, Sec. 108 ;Narada,Chap. 13,Sec.26,27,28,33 ; Vaikuntam Vs. Kallapiram (1900) 23 Mad.512,516 ; Cherutty @ Vasu Vs. Hangamparambil Ramu @ Kuttaman (1940) Mad. 830 (1940) A.M. 664]
কোন একজন পুরুষ সদস্যের মৃত্যুতে কর্তা তার বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ দানে আইনতঃ বাধ্য থাকে ৷
[Bhagwan Singh Vs. Mst.Kewal Kaur (1927) 8 Lah.360]
কর্তার ভরণপোষণের দায়িত্ব সংক্রান্ত একই নীতি দায়ভাগ আইনেও প্রযোজ্য হয়৷

৫. উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির মালিকানার উপর নির্ভরশীল দায়িত্ব:
উত্তরাধিকারীদের দায়িত্ব একজন উত্তরাধিকারী তার উপর অর্পিত সম্পত্তি থেকে সে সকল ব্যক্তিবর্গকে ভরণপোষণ দানে বাধ্য থাকে যাদের ভরণপোষণ দানে মৃত স্বত্বাধিকারী আইনতঃ ও নৈতিকভাবে বাধ্য ছিল ৷ কেননা এক্ষেত্রে ঐ সমস্ত ব্যক্তিকে ভরণপোষণের শর্তে উক্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত হয়েছে ৷
[khetramani Vs. Kashinath (18690 2 Beng.L.R.A.C. 15,34,38, {F.B.} ;Kamini Vs. Chandra (1890) 17 Cal.373,376-78 ; Mst.Rupa Vs. Sriyabati (1955) A. Orissa 28]

৬. সরকারের দায়িত্ব
যদি সম্পত্তি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয় তবে ভরণপোষণের দায়িত্ব সরকারের ইপর অর্পিত হয় ৷
[Mst. Golab Koonwar Vs. Controller of Benaras (1847) 4 M.I.A. 246]

খ. ভরণপোষণ পাবার অধিকারী ব্যক্তি
হিন্দু আইনের বিধান অনুসারে পুত্র,কন্যা, পিতা-মাতা,পৌত্র-পৌত্রী,যৌথ পরিবারের মহিলা সদস্য, অক্ষম উত্তরাধিকারী, অবৈধ পুত্র, অবৈধ কন্যা, উপপত্নী- অবরুদ্ধ স্ত্রী ভরণপোষণ পেয়ে থাকেন৷

পুত্রঃ
ব্যক্তিগত দায়িত্ব অনুসারে একজন পিতা তার নাবালক পুত্রদের ভরণপোষণ দানে বাধ্য৷ এক্ষেত্রে পিতা তার পৃথক ও স্ব-উপার্জিত সম্পত্তি থেকেও নাবালক পুত্রদের ভরণপোষণে বাধ্য থাকে৷ দায়ভাগ আইন অনুসারে পিতা তার সাবালক পুত্রদের ভরণপোষণ দানে বাধ্য নয়৷ মিতাক্ষরা আইন অনুযায়ী একজন সাবালক পুত্র যৌথ পরিবারের সম্পত্তি থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী৷ কেননা মিতাক্ষরা আইন অনুযায়ী একজন পুত্র জন্মসূত্রে যৌথ পরিবারের সম্পত্তিতে অর্পিত স্বার্থ অর্জন করে ৷
[Savitribai Vs. Luximibai (18780 2 Bom. 573,597 {F.B.} ; Sartaj Kuari Vs. Deoraj Kuari (1888) 10 All.272,288.]

কন্যাঃ
একজন পিতা তার ব্যক্তিগত দায়িত্ব অনুসারে অবিবাহিতা কন্যাদের ভরণপোষন দানে বাধ্য ৷ পিতার মৃত্যুর ক্ষেত্রে অবিবাহিতা কন্যারা তাদের পিতার সম্পত্তি থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হয় ৷

[Bai Mangal Vs. Bai Rukhmini (1899) 23 Bom.291 ; Tulsha Vs. Gopal Rai (1884) 6 All. 32.]
স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ লাভে সক্ষম বিবাহিতা কন্যা বা স্বামীর মৃত্যুর পর বিবাহিতা কন্যার ভরণপোষণ দানে একজন পিতা নৈতিকভাবে বাধ্য; তবে এক্ষেত্রে সে আইনগতভাবে বাধ্য নয় ৷

[Matilal Vs.Brajabashi (1960) 12 D.L.R. 142]
এরূপ কন্যাগণ পিতার মৃত্যুর পর পিতার সম্পত্তি হতে তার উত্তরাধিকারীগণ কতৃর্ক আইনগতভাবে ভরণপোষণ লাভের অধিকারী কিনা তা এখনো স্থির হয় নাই ৷ বোম্বাই হাইকোর্ট এক্সেত্রে একটি মামলায় সিদ্ধান্ত দেয় যে, কন্যা এরূপ কোন অধিকার অর্জন করে না ৷
[Bai Mangal Vs. Bai Rukhmini (1899) 23 Bom.291 ; Khanta Moni Vs. Shyam Chand (1973) A.C. 112]

পিতা-মাতার ভরণপোষণ
সন্তান জন্ম দান ও লালনপালন কারী পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে যাতে সন্তান কর্তৃক অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার না হন সে জন্য পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩, কতগুলো বাধ্য-বাধকতার নির্দেশ দিয়েছে। এই আইনের ৩ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে হবে। এই আইনে সন্তান বলতে পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সক্ষম ও সামর্থ্যবান পুত্র বা কন্যাকে বুঝিয়েছে। তাই পিতা-মাতার ভরণপোষণ এককভাবে শুধু পুত্রের উপর নয়। কন্যাকেও তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। উক্ত আইনের ৩ ধারার ২ ও ৩ উপধারা অনুযায়ী একাধিক সন্তান থাকলে প্রত্যেকে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে এবং তাদের একই সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করবে। ৩ ধারার ৪ উপধারা অনুযায়ী পিতা বা মাতা অথবা তাদের উভয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন বৃদ্ধনিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করবে না। ৫ উপধারা অনুযায়ী প্রত্যেক সন্তান তার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে। যেক্ষেত্রে পিতা-মাতা জীবিত নেই সেক্ষেত্রে দাদা-দাদী অথবা নানা-নানি জীবিত থাকলে এই আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী তাদেরকেও ভরণপোষণ দিতে হবে।

পিতা-মাতার ভরণপোষণ না করার দণ্ডঃ ৫ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী কোন সন্তান ধারা ৩ এর যে কোন উপ-ধারার বিধান বা ধারা ৪ এর বিধান লংঘন করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে; বা উক্ত অর্থদ- অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

এমনকি কোন পুত্রবধূ বা মেয়ের জামাই অথবা অন্য কোন নিকট আত্মীয় যদি পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণপোষণ প্রদানে বাধা প্রদান করেন বা ভরণপোষণ প্রদানে অসহযোগিতা করেন তাহলে তিনি উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং ৫ ধারার ১ উপ-ধারায় উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

‘পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩’তে করা প্রথম মামলা
« on: November 20, 2013, 11:27:20 AM »

ভরণপোষণ না দেয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের একটি আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বাবা। মঙ্গলবার দুপুরে বিচারিক হাকিম আদালতে ইয়াসিন রানার (৩০) বিরুদ্ধে মামলাটি করেন তার বাবা লিয়াকত আলী (৬০)।

তাদের বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলার সুহিলপুর গ্রামে। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৪ জানুয়ারি আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। মামলার এহাজারে বলা হয়, ছেলে ইয়াসিন রানা দীর্ঘদিন দুবাইয়ে চাকরি করলেও গত তিন বছর ধরে বাবা-মায়ের ভরণপোষণ না দিয়ে তার উপার্জিত সব অর্থ শ্বশুরবাড়িতে পাঠাচ্ছেন। অন্য আসামিরা হলেন রানার স্ত্রী রাশিদা আক্তার রিতা (২৮), শ্বশুর শেখ মো. বাদল ওরফে বাবুল (৫০), শাশুড়ি লুৎফা বেগম (৪৫) ও শ্যালক মো. সোহেল (৩০)।

সন্তান পিতা-মাতার ভরণ পোষণ না দিলে ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে পিতামাতার ভরণপোষণ বিল সংসদে পাস হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর,২০১৩। ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিল-২০১৩’ এ পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান তার পিতা-মাতাকে ভরণপোষণ না করলে তা হবে জামিন অযোগ্য অপরাধ, তবে আপোসযোগ্য। ভরণপোষণ ও এর খরচ না পেলে বাবা-মা আদালতের আশ্রয়ও নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সন্তান সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা বা অর্থ দ-সহ অনাদায়ে অনুর্দ্ধ ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিলে আরও বলা হয়, কোনো সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী পিতা-মাতার ভরণপোষণ প্রদান না করতে প্ররোচনা দিলে উক্ত স্ত্রী বা স্বামীও কিংবা অন্য সহায়তাকারী উপরিউক্ত অপরাধে অভিযুক্ত হবেন। বিলের বিধান অনুযায়ী সন্তানের আয়ের যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ পিতামাতাকে দিতে হবে। বিলে বলা হয়েছে, ভরণপোষণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। কোনো সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বৃদ্ধনিবাস, বা অন্য কোথাও বা আলাদা ভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবেন না। প্রত্যেক সন্তান তার পিতামাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখবেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে। তারা পৃথকভাবে বসবাস করলে সন্তানদের নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে হবে। শুধু পিতা বা মাতার ভরণপোষণই নয়, পিতা বা মাতার মৃত্যুর পরও যদি দাদা-দাদী বা নানা-নানী বেঁচে থাকেন তবে তাদেরও ভরণপোষণ দেওয়া নাতী-নাতনীর আইনি দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিলে। বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে অসহায় অবস্থা থেকে বাঁচাতে মূলত আইনটি তৈরি করা হয়েছে। আর্থিকভাবে সক্ষম কিন্তু বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিতে অনাগ্রহী সন্তানদের জন্য এ আইন অসহায় পিতামাতার রক্ষা কবচ। খসড়া আইনে বলা আছে, প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে হবে। কোনো পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে সেক্ষেত্রে সন্তানরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বাবা-মার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। খসড়া আইনে অপরাধের আমল-যোগ্যতা, বিচার ও জামিন-সংক্রান্ত বিধানে বলা হয়, ‘এ ধরনের অপরাধ প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য হবে। তবে কোনো আদালত এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট সন্তানের পিতা বা মাতার লিখিত অভিযোগ ছাড়া আমলে নেবে না। অভিযোগকারী পিতা বা মাতাকে শুনানির সুযোগ না দিয়ে কোনো আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেবে না।
Source: BDnews24
« Last Edit: November 20, 2013, 02:27:17 PM by Ferdousi Begum »

ভরণপোষণের অধিকার
ভরণপোষণের অধিকার কনটেন্টটিতে স্ত্রীর ভরণপোষণ, সন্তানের ভরণপোষণ, মা-বাবার ভরণপোষণ, দরিদ্র আত্মীয়ের ভরণপোষণ, হিন্দু আইনে ভরণপোষণ, খ্রীস্টান আইনে ভরণপোষণ, বিয়ে বিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ, ভরণপোষণের দাবিতে কোথায় প্রতিকার পাওয়া যাবে, ভরণপোষণের অধিকার কখন নষ্ট হয় এই সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে ।

ভরণপোষণের অধিকার
সাবিনা ও মনসুরের বিয়ে হয়েছে এক বছর। কিন্তু তার স্বামী এখনো সাবিনাকে উঠিয়ে নেয়নি। সাবিনা তার বাবার বাড়িতেই থাকে। ওদের বিয়ের কাবিননামায় লেখা ছিল যতদিন মনসুর সাবিনাকে উঠিয়ে না নিবে ততদিন ১০০০ টাকা করে ভরণপোষণ বাবদ দিবে। মনসুর প্রথম ২/১ মাস ভরণপোষণ দিয়েছিল তবে এখন আর দিচ্ছে না। আবার সাবিনাকে তাদের বাড়িতে তুলেও নিচ্ছে না এবং শ্বশুর বাড়ি থেকে জানিয়েছে তাকে তুলে নিতে আরো কিছুদিন দেরি হবে। এ অবস্থায় সাবিনা মনসুরের কাছে ভরণপোষণের দাবী করে কিন্তু মনসুর সেটাও দিতে চাচ্ছে না। তাই সাবিনা তার বোনকে নিয়ে উকিলের কাছে যায়।

সাবিনা : আমাদের বিয়ে হয়েছে একবছর। আমার স্বামী আমাকে উঠিয়ে নিচ্ছে না আবার ভরণপোষণও দিচ্ছে না, এখন কি করা যায় ?

উকিল : আপনার কাবিননামায় কি ভরণপোষণ বাবদ টাকা দেয়ার কথা উল্লেখ ছিল ?

সাবিনা : হ্যাঁ, ছিল।

উকিল : তাহলে সে অবশ্যই ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এমন কি, কাবিন নামায় ভরণপোষণ দেয়ার কথা না থাকলেও আইন অনুসারে স্বামী স্ত্রীকে ভরণ পোষণ দিতে বাধ্য।

সাবিনা : আমি কি তাহলে ভরণপোষণ পাবো ?

উকিল : কেন নয়, অবশ্যই আপনি ভরণপোষণ পাবেন। স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও দরিদ্র্য আত্মীয়রা ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী। একজন সক্ষম ও উপার্জনশীল ব্যক্তি তার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও দরিদ্র্য আত্মীয়দের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

সাবিনা : আমি শুনেছি স্ত্রীর ভরণপোষণ নাকি বিভিন্ন রকম হয় ?

উকিল : হ্যাঁ, স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষেত্রেজ্জ ‘বিবাহিত অবস্থায় একসাথে থাকা, আলাদা থাকা বা তালাকের পর’ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিয়ের ফলে কিছু আইনগত অধিকার ও দায়িত্ব সৃষ্টি হয়। যেমন-একত্রে থাকার অধিকার, দেনমোহরের অধিকার, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর মতামতকে সম্মান প্রদর্শন, স্বামী স্ত্রী পরস্পরের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাবার অধিকার, ভরণপোষণের অধিকার। ভরণপোষণ স্বামীর দায়িত্ব ও স্ত্রীর অধিকার। তাই আইন অনুযায়ী এটা ধরেই নেয়া হয় যে, স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। ভরণপোষণ প্রদানের পর্যায়সমূহ হল-
বিবাহিত অবস্থায় ভরণপোষণ
বিবাহিত কিন্তু পৃথক থাকা অবস্থায় ভরণপোষণ
বিয়ে-বিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ

সাবিনা : বিবাহিত অবস্থায় ভরণপোষণ কি ধরণের ?

উকিল : বিয়ের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। তবে এর কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় নি। স্বামীর আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী ভরণপোষণ দেবার ক্ষমতা নির্ভর করে। ব্যাখ্যা: ১
সাবিনার বোন : বিবাহিত কিন্তু পৃথক থাকা অবস্থায় ভরণপোষণ কি ?

উকিল : স্ত্রী যদি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া স্বামীর কাছ থেকে আলাদা বসবাস করেন, তবে স্বামী স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবেন না। তবে, বিবাহিত থাকা অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে আলাদা বসবাস করেও কয়েকটি ক্ষেত্রে ভরণপোষণ পেতে পারেন।

সাবিনা : সে কয়েকটি ক্ষেত্র কি কি ?

উকিল : প্রথমতঃ স্বামী যদি স্ত্রীর তাৎক্ষণিক দেনমোহরের দাবি অস্বীকার করেন বা পরিশোধ না করেন, তাহলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে আলাদা বসবাস করলেও ভরণপোষণ পাবেন।
দ্বিতীয়তঃ স্বামী বর্বর বা নিষ্ঠুর আচরণ করলে স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন।
তৃতীয়তঃ স্বামী আরেকটি বিয়ে করলে বা রক্ষিতা রাখলে স্ত্রী স্বামীর সাথে থাকতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন এবং তারপরও স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ দাবি করার অধিকার রাখেন।

সাবিনার বোন : বিয়ে-বিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ কিভাবে পায় ?

উকিল : বিয়ে-বিচ্ছেদের পরও স্ত্রী কিছুদিন ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হয়। যেদিন থেকে বিচ্ছেদ কার্যকরী হয় সেদিন থেকে ৯০ দিন (এ সময়কে ইদ্দত বলা হয়) পর্যন্ত স্ত্রী ভরণপোষণ পাবার অধিকারী হয়। ব্যাখ্যা: ২

সাবিনা : আচ্ছা, সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষেত্রে তো মা-বাবার দায়িত্ব আছে, তাই না ?

উকিল : হ্যাঁ, মুসলিম আইন অনুযায়ী সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক বাবা এবং মা মূলতঃ সন্তান লালন পালন করেন। এক্ষেত্রে মাতা-পিতার আলাদা দায়িত্ব আছে।

সাবিনা : ভরণপোষণের ক্ষেত্রে পিতার দায়িত্ব কি ?

উকিল : একজন মুসলমান পুরুষ সাবালক হওয়া পর্যন্ত ছেলেকে এবং বিয়ের আগ পর্যন্ত মেয়েকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

সাবিনা : বিয়ের পর মেয়ে যদি তালাকপ্রাপ্ত হয় ?

উকিল : বিধবা ও তালাক প্রাপ্তা মেয়ে যদি সামর্থবান না হন সেক্ষেত্রে পিতা তাদেরকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য, তবে বিধবা পুত্রবধুকে ভরণপোষণ দিতে তিনি বাধ্য নন।
সাবিনার বোন : সাবালকত্ব অর্জনের পরও যদি সন্তানরা নিজ ভরণপোষণ যোগাতে সমর্থ না হয় তবে ?

উকিল : আইন বাবার কাছে ভরণপোষণ দাবি করাকে অনুমতি দেয়। তবে এক্ষেত্রে পিতা সাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন।

সাবিনা : অসুস্থ ও অক্ষম সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্বও কি বাবার ?

উকিল : হ্যাঁ, অসুস্থ ও অক্ষম সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার।
সাবিনার বোন : মা যখন সন্তানের জিম্মাদার তখনও বাবা ভরণপোষণ দিবেন ?

উকিল : মা-বাবার বিচ্ছেদের পরেও মা ছেলেকে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত ও মেয়েকে বয়োঃসন্ধি পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ করার অধিকারী। এই সময়ে সন্তানেরা বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে মায়ের সঙ্গে বসবাস করলেও বাবা সন্তানের ভরণপোষণ দানে আইনত বাধ্য। ব্যাখ্যা: ৩

সাবিনা : ভরণপোষণের ক্ষেত্রে মায়ের দায়িত্ব কি ?

উকিল : শুধুমাত্র বাবা সব সময় সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন। যদি কোন মা, বাবার চেয়ে স্বচ্ছল হন তাহলে মাও বাবার মতো সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। স্ত্রীর সামাজিক অবস্থা, প্রয়োজন, স্বামীর আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই সাধারণত ভরণপোষণ নির্ধারিত হয়ে থাকে।

সাবিনা : মা-বাবার ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও তো সন্তানের দায়িত্ব আছে, তাই না?

উকিল : হ্যাঁ, দরিদ্র ও অক্ষম বাবা-মাকে ভরণপোষণ দেয়া সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব। আদালত বাবা-মার ভরণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে পারে এবং সন্তানদের তা দিতে আদেশ প্রদান করতে পারে।

সাবিনার বোন : স্বচ্ছল সন্তানেরাও কি গরিব মা-বাবাকে ভরণপোষণ দিবে ?

উকিল : মা যদি স্বচ্ছলও হন তবু গরিব ছেলে তাকে দেখতে বাধ্য। উপার্জনক্ষম ছেলেমাত্র গরিব মা-বাবাকে দেখবে বা লালন- পালন করবে।

উকিল : এছাড়া আত্মীয়ের ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও কিছু দায়িত্ব আছে। দরিদ্র আত্মীয়রাও ভরণপোষণ পাবার অধিকারী। উত্তরাধিকারে তাদের প্রাপ্য অংশের অনুপাতে তাদের ভরণপোষণ দেয়া যায়। উল্লেখ্য, দাদা-দাদীও নাতির কাছে ভরণপোষণ পেতে পারেন। দাদা-দাদী গরিব না হলে নাতিকে তাদের ভরণপোষণ দিতে হবে না।

সাবিনা : আচ্ছা, মুসলিম আইনেই কি শুধু ভরণপোষণের অধিকার আছে ? হিন্দু আইনে কি কিছু নেই ?

উকিল : হিন্দু আইনেও কোন ব্যক্তির ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যেমন :
একজন হিন্দুর কোন সম্পত্তি না থাকলেও সে তার নাবালক ছেলে, অবিবাহিতা মেয়ে ও বাবা-মার ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য। দায়ভাগা মতে, বাবা সাবালক ছেলেকে ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য নন।
কর্তা যৌথ পরিবারের সকল পুরুষ, তাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণে আইনতঃ বাধ্য।
একজন মৃত ব্যক্তি যাদের ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য ছিল, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীও মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে তাদের ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য।
বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত বাবা তার কন্যা সন্তানের ভরণপোষণ করতে বাধ্য। বাবার অবর্তমানে কন্যার ভরণপোষণ বাবার সম্পত্তি হতেই চলতে থাকবে।
অক্ষমতা বা অযোগ্যতাহেতু কেউ পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারে বঞ্চিত থাকলে তাকে ও তার পরিবারবর্গকে অক্ষম ব্যক্তির বাবা ও বাবার অবর্তমানে বাবার উত্তরাধিকারী যথাযোগ্য ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এছাড়া স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মে কিছু আইন আছে। ব্যাখ্যা:৪

সাবিনার বোন : খ্রিষ্টান ধর্মে কি ভরণপোষণের অধিকার নেই ?

উকিল : হ্যাঁ, আছে। ডিভোর্স এ্যাক্টের ৩৭ ধারা অনুযায়ী, স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদের পর থেকে স্থায়ীভাবে ভরণপোষণ পেতে পারে। এছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মে সন্তানের ভরণপোষণ সম্পর্কেও বলা হয়েছে।

সাবিনা : খ্রিস্টান আইনে স্ত্রীর ভরণপোষণ কি রকম হয় ?

উকিল : খ্রিস্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামী বা পিতার। বিয়ে বর্তমান থাকাকালীন অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর ভরণপোষণ দিবেন।

সাবিনার বোন : বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলেও কি আদালতের আদেশে স্বামী-প্রাক্তন স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিবেন ?

উকিল : হ্যাঁ, বিয়ে বিচ্ছেদের কারণে কখনোই স্বামী ভরণপোষণ দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারবেন না।

সাবিনা : সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষেত্রে মা-বাবার দায়িত্ব কি ?

উকিল : মা-বাবার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পর সন্তানের ভরণপোষণের প্রশ্নটি আদালতের এখতিয়ারধীন। সন্তানের কল্যাণের কথা চিন্তা করে মা-বাবার আর্থিক সামর্থ্যের বিবেচনায় আদালত নির্দেশ দিবেন যে, মা-বাবা কে কি পরিমাণ ভরণপোষণ সন্তানদের দিবেন।

সাবিনা : ভরণপোষণের অধিকার পেতে কোন ধারায় মামলা করতে হবে ?

উকিল : ভরণপোষণের অধিকার পেতে ফৌজদারী কার্যবিধি, পারিবারিক আদালত, মুসলিম পারিবারিক আইন এ মামলা করতে পারেন। ব্যাখ্যা: ৫

সাবিনার বোন : সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের মামলা কোথায় করা যাবে ?

উকিল : সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের মামলা ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট বা পারিবারিক আদালতে করা যাবে। ব্যাখ্যা: ৬
সাবিনার বোন : বিবাহিত মুসলিম নারী কখন স্বামীর কাছ থেকে আইনতঃ ভরণপোষণ পায় না –

উকিল : তালাক কার্যকর হওয়ার পর অথবা স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ ছাড়া আলাদাভাবে বসবাস করলে স্ত্রী ভরণপোষণ পাবে না।

সাবিনার বোন : তাহলে হিন্দু আইনে কি আছে ?

উকিল : স্ত্রী যদি অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় অথবা স্ত্রী যদি আইনসঙ্গত কারণ ছাড়াই স্বামীর সাথে স্ত্রীরূপে বসবাসে অনিচ্ছুক হয়। তাহলে সে ভরণপোষণ পায় না।

সাবিনার বোন : খ্রিস্টান আইনেও কি এমন কিছু আছে ?

উকিল : হ্যাঁ আছে, খ্রিস্টান আইনে কখনোই স্ত্রী স্বামীর পক্ষ থেকে ভরণপেষণ লাভে বঞ্চিত হয় না।
সাবিনা উকিলের কাছ থেকে ভরণপোষণের বিষয়ে জানতে পেরে অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। সে উকিলের সহায়তায় আদালতের শরনাপন্ন হয় এবং আদালতের রায়ের মাধ্যমে বর্তমানে স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাচ্ছে।

সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১ : ভরণপোষণের অধিকার বলতে কি বুঝায় ?
উত্তর : ভরণপোষণ হলো জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণ। মুসলিম আইনে নির্ভরশীল ও আর্থিকভাবে অসমর্থ ব্যক্তিরা সাধারণত ভরণপোষণ পায়।

প্রশ্ন-২. কে কে ভরণপোষণ পাওয়ার যোগ্য?
উত্তর. সকল ধর্মমতে স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও দরিদ্র্য আত্মীয়রা ভরণপোষণ পাবার অধিকারী।

প্রশ্ন-৩. ভরণপোষণ থেকে বঞ্চিত হলে কোথায় প্রতিকার পাওয়া যায়?
উত্তর. পারিবারিক আদালত, ফৌজদারি আদালত ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন-৪. বিয়ে বিচ্ছেদের পর স্ত্রী কি ভরণপোষণ পাবেন?
উত্তর. মুসলিম নারীরা বিয়ে বিচ্ছেদের কার্যকর হওয়ার পর ভরণপোষণ পাবেন না।
হিন্দু আইনে বিয়ে বিচ্ছেদ নেই কিন্তু যুক্তিসঙ্গত কারণে স্ত্রী পৃথক বসবাস করলে আইন অনুযায়ী স্ত্রী ভরণপোষণ পাবেন।
খ্রিস্টান নারীরা সকল সময়েই ভরণপোষণ পাবেন।

তথ্যসূত্র
পারিবারিক আইনে বাংলাদেশের নারী, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, পৃষ্ঠা: ৪৫, ৪৭, ৭৬, ১০১, প্রথম প্রকাশ: জুন-১৯৯৭।
নারী ও আইন, মুসলিম নারীর খরপোষের অধিকার, এ্যাডভোকেট লুৎফে আরা বেগম, পৃষ্ঠা-১৯, চতুর্থ সংস্করণ: ডিসেম্বর ১৯৯৩।

ভরণপোষণের অধিকার : ব্যাখ্যা
ব্যাখ্যা: ১
১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৮৮ ধারায় বলা আছে, স্ত্রীকে মাসিক ৪০০ টাকার সমপরিমাণ ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য থাকবেন। অবশ্য ৪০০ টাকার পরিমাণ যে সময়ে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তার সাথে বর্তমান অবস্থার তফাত রয়েছে।

ব্যাখ্যা: ২
১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্ত্রী ভরণপোষণের দাবি করে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন। এটি একটি দেওয়ানী প্রতিকার। যে জায়গায় স্ত্রী বসবাস করছেন সে জায়গায় পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। উল্লেখ্য যে, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভরণপোষণ, বিবাহ বিচ্ছেদ, দেনমোহর, সন্তানের অভিভাবকত্ব ইত্যাদি ব্যাপারে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে। তবে এই অধ্যাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৮৮ ধারাকে খর্ব করেনি বলে দুই ধরণের আদালতেই মামলা করা যায়।

ব্যাখ্যা: ৩
গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস এ্যাক্ট অনুযায়ী যদি কোন মা আদালতের রায় অনুযায়ী তার সন্তানদের অভিভাবকত্ব পেয়ে যান তাহলে সন্তানেরা ২১ বছর পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকলেও বাবা সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

ব্যাখ্যা: ৪
১৯৪৬ সালের বিবাহিতা হিন্দু নারীর পৃথক বাসস্থান ও ভরণপোষণ আইনানুযায়ী, নিম্নোক্ত কারণসমূহের উদ্ভব হলে, একজন বিবাহিতা নারী স্বামীর কাছ হতে পৃথকভাবে থেকেও স্বামীর নিকট হতে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারীঃ
স্বামী যদি এমনকোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে যা সে স্ত্রীর কাছ থেকে পায় নি; স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে এবং নিষ্ঠুরতা যদি এমন পর্যায়ের হয় যে স্বামীগৃহে তার জীবনাশংকার ভয় থাকে স্বামী যদি স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই তাকে পরিত্যাগ করে স্বামী যদি স্ত্রীর বর্তমানে পুনরায় বিয়ে করে।
স্বামী যদি ধর্মান্তরিত হয় স্বামী যদি ঘরেই কোন উপপত্নী রাখে অথবা অভ্যাসগত ভাবে উপপত্রন সাথে বসবাস করে।

অন্যান্য যৌক্তিক কারণ

ব্যাখ্যা: ৫
স্ত্রীর ভরণপোষণ আদায় সংক্রান্ত মামলা
ভরণপোষণের দাবিতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৮৮ ধারা অনুযায়ী স্ত্রী মামালা করতে পারেন।
১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভরণপোষণের জন্য স্ত্রী মামলা দায়ের করতে পারেন।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীকে ভরণপোষণ না দিলে স্ত্রী স্থানীয় চেয়ারম্যানের নিকট ভরণপোষণের জন্য আবেদন করবেন। চেয়ারম্যান সালিশী পরিষদ গঠন করে সার্টিফিকেট ইস্যু করবেন। এরপরও স্বামী ভরণপোষণ না দিলে স্ত্রী বকেয়া ভূমি রাজস্ব আকারে তা আদায় করতে পারবেন।

ব্যাখ্যা: ৬
প্রথমতঃ অবহেলিত সন্তানেরা ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪৮৮ ধারার অধীনে ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে পিতাকে ভরণপোষণ দানের নির্দেশ দেয়ার জন্য মামলা দায়ের করতে পারে। এছাড়া পারিবারিক আদালতেও মামলা দায়ের করে ভরণপোষণ আদায়ের ব্যবস্থা আছে। উল্লেখ্য যে, ফৌজদারি আইনের ৪৮৮ নং ধারায় হিন্দু ও খ্রিস্টান স্ত্রী এবং সন্তানেরাও ভরণপোষণ বা খোরপোষের দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।

Next Post
ঘুস বৈধ অবৈধ!

ঘুস বৈধ অবৈধ!

Discussion about this post

নিউজ আর্কাইভ

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
« Oct    
Facebook Youtube RSS


সম্পাদক: এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম,
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

অফিস ঠিকানাঃ

বকাউল ম্যানশন, ৩য় তলা, সেগুন বাগিচা মোড়, ৪২/১/খ, সেগুন বাগিচা, ঢাকা - ১০০০ ।
মোবাইলঃ 01842459590

© 2021 BDLAWNEWS.COM - A News portal founded by A.B.M. Shahjahan Akanda Masum.

No Result
View All Result
  • আন্তর্জাতিক
  • ’ল’ ক্যাম্পাস
  • অনিয়ম
  • অন্যান্য
    • একাদশ নির্বাচন
    • খেলাধুলায় আইন
    • আইন চাকুরী
    • আইন জিজ্ঞাসা
  • আইন পড়াশুনা
  • আইন সংস্থা
  • আইন-আদালত
  • আইনী ভিডিও
  • ইংরেজি
  • উচ্চ আদালত
  • কোর্ট প্রাঙ্গণ
  • খেলাধুলা
  • গুণীজন
  • জাতীয়
  • জেলা আইনজীবী সমিতি
  • দেশ ও দশ
  • দেশ জুড়ে
  • অপরাধ
  • দৈনন্দিন জীবনে আইন
  • বাংলাদেশ
    • খুলনা
    • চট্টগ্রাম
    • ঢাকা
    • বরিশাল
    • ময়মনসিংহ
    • রাজশাহী
    • বগুড়া
  • বিনোদন
  • ব্লগ
  • মতামত
  • মানবাধিকার
  • রাজনীতি
  • লিগ্যাল নোটিশ
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • শীর্ষ সংবাদ
  • সাক্ষাৎকার
  • যুগান্তকারী রায়

© 2021 BDLAWNEWS.COM - A News portal founded by A.B.M. Shahjahan Akanda Masum.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In