সম্পত্তি থেকে বেদখলের প্রতিকার সমূহ
এডভোকেট মো: হাবিবুল হক
জমিজমাকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় বিরোধ দেখা দিতে পারে।অনেক সময় দেখা যায়, নিজের কেনা জমি অন্য কেউ দখল করে মালিকানা দাবি করছে কিংবা জাল দলিল তৈরি করে জমির দখল নিতে চায়। আদালতে মিথ্যা মামলাও ঠুকে দেয়।কিন্তু একটু সচেতন হলেই এ ঝামেলা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সে জন্য জানা থাকতে হবে জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে কীভাবে প্রতিকার পাবেন।
- প্রথমত, স্থানীয় সালিশ-দরবারের মাধ্যমে।
- দ্বীতিয়ত, আদালতের মামলা করে।
- জমি হতে বেদখল হয়ে গেলে প্রাথমিক ভাবে এলাকার সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে দখল ফিরে পাবার চেষ্টা করাই অতি উত্তম।
কারন গুলো দেখুন-
- আপনার আর্থিক খরচ কম হবে।
- সময় কম লাগবে।
- দাপ্তরিক হয়রানি থেকে বেচেঁ যাবেন।
- মালিকানার সামজিক স্বীকৃতি পাবেন।
এতে কাজ না হলে বেদখলের বিষয়ে ফৌজদারী এবং দেওয়ানী দুই ধরনের মামলা দায়ের করা যায়। মামলার বিষয়বস্তুু বিবেচনা করে এবং কাগজপত্র দেখে আইনজীবীগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যে কি ধরনের মামলা করলে বাদী তার অধিকার ফিরে পাবে বা ন্যায্য বিচার পাবে। এ বিষয়ে ফৌজদারী ও দেওয়ানী উভয় ধরনের মামলা করতে পারবেন।
![ফৌজদারি প্রতিকার](https://i2.wp.com/www.bdlawnews.com/wp-content/uploads/2021/01/ক্রিমিনাল-মামলার-ধারাবাহিক-ধাপ.jpg?resize=591%2C294&ssl=1)
ফৌজদারি প্রতিকার:
জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে।
কেউ কোনো মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার কে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে পুলিশকে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন । তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন।
তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করার জন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।
![সিভিল মামলার ধারাবাহিক ধাপগুলো একজন আইনজীবীর জন্য কতটা জরুরী!](https://i0.wp.com/www.bdlawnews.com/wp-content/uploads/2020/11/দেওয়ানি-মামলা-.jpg?resize=500%2C335&ssl=1)
দেওয়ানি প্রতিকার:
জমি থেকে উচ্ছেদ করা হলে দেওয়ানী আদালতে বিভিন্ন মামলা দায়ের করা যায়। কোন ধরনের মামলায় আপনি ন্যায়বিচার পাবেন তা নির্ধারণ করতে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ একজন আইনজীবীর কাছে যেতে হবে। মনে রাখবেন, দেওয়ানী মামলায় একজন দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ করা সব থেকে জরুরী।
আইনজীবীর সহিত নিজে গিয়ে সব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করবেন। কারণ, আপনার জমির বিষয়ে আপনার চেয়ে ভাল কেউ জানবেনা এটাই স্বাভাবিক।
থানার প্রতিকার :
জমিজমার মালিকানা বা বিরোধ বিষয়ে থানা পুলিশের কোন ভূমিকা বা সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই। যদিও থানায় বসে কেউ কেউ জমি বিরোধের নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ঘুষের লেনদেন থেকে বিরত থাকা উচিত কেননা থানার সিদ্ধান্ত দেয়ার কোন ক্ষমতা নেই যে কারণে এটি অমান্য করলে থানার কিছু করার থাকেনা।
জমি বিরোধের ক্ষেত্রে পুলিশ আনুষঙ্গিক ভূমিকা পালন করে, আইন অনুযায়ী আদালতের নির্দেশ পালনে কাজ করে কিন্তু প্রত্যক্ষ ভাবে পুলিশের কোন ভূমিকা নেই। জমির মালিকানা ইস্যুতে একমাত্র দেওয়ানি আদালতকে একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত
দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু জমি নিয়ে বিরোধের ফলে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি হলে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে।
![জমি-ক্রয়ের-নিয়মাবলী](https://i2.wp.com/www.bdlawnews.com/wp-content/uploads/2021/12/জমি-ক্রয়ের-নিয়মাবলী.jpg?resize=750%2C375&ssl=1)
মালিকানা দাবি করবেন যেভাবে:
জমির মালিকানা বা স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। জমি অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পেতে পারেন। এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী জমির মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমিটি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন।
তবে এ ধারা অনুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে জমিতে তাঁর স্বত্ব বা মালিকানা আছে কিংবা মালিকানার দাবি রয়েছে, তার ঘোষণা চাইতে হবে। না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলাকে
সাধারণত স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছেন—এটি প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তাঁর মাধ্যমে দাবিদার কোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো—বাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবি করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না; বিবাদী তাঁকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না; বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না।
তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় তাঁকে এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবে । তবে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধারায় প্রতিকার চাওয়া যাবে না।
![সম্পত্তি থেকে বেদখলের প্রতিকার সমূহ](https://i2.wp.com/www.bdlawnews.com/wp-content/uploads/2021/12/সম্পত্তি-বেদখল.jpg?resize=725%2C400&ssl=1)
কোথায় ও কীভাবে আইনের আশ্রয় নেবেন:
জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার মূল্যমান ১৫ লাখ টাকার কম হলে সহকারী জজ আদালতে এবং ২৫ লাখের বেশি হলে অসীম এখতিয়ার পর্যন্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে।
মামলা দায়ের করতে হবে আইনজীবীর মাধ্যমে। মালিকানাসহ দখলের প্রতিকার চাইলে জমির মূল্য বাবদ অ্যাড-ভ্যালোরেম (মূল্যানুপাতে) কোর্ট ফি দিতে হবে। ৯ ধারা অনুযায়ী শুধু দখলের জন্য প্রতিকার চাইলে সম্পত্তির মূল্য অনুসারে যে কোর্ট ফি তার অর্ধেক, অর্থাৎ অ্যাড-ভ্যালোরেম কোর্ট ফির অর্ধেক পরিমাণকোর্ট ফি দিতে হবে। জমির মালিকানাসহ দখল কিংবা শুধু দখল চেয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে যদি বাদী মনে করেন, তাঁর জমিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন পৃথক আবেদনের মাধ্যমে।
মো: হাবিবুল হক
এডভোকেট
জজ কোর্ট, ঢাকা
মোবাইল নং: ০১৮১৩৬১৩৬৭৯
Discussion about this post