এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত বহুল আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার রায় প্রদান করে। উক্ত রায়টি যদিও পূর্ণাঙ্গ আকারে এখনও প্রকাশিত হয়নি তবুও বিভিন্ন রিপোর্ট ও আলোচনার ভিত্তিতে জানা যায় যে, মামলার কিছু আসামীদের দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দন্ডিত করা হয়েছে। জেনে নেয়া যাক যে, দন্ডবিধির ৩৪ ও ৩০২ ধারায় কি বলা হয়েছে।
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩৪ ধারায় কোন বিশেষ অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি বরং এখানে অপরাধীদের অভিন্ন অভিপ্রায় বা অভিন্ন উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী হবে কি না তা নির্ধারণ করে এ ধারা। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যদি পরিকল্পিত ভাবে কোন অপরাধ করে তবে তাদের প্রত্যেকে উক্ত অপরাধের জন্য দায়ী হবে। এক্ষেত্রে জরুরী নয় যে, সকলকে অপরাধে অংশগ্রহণ করতে হবে। কেবলমাত্র প্রত্যেকের অভিন্ন উদ্দেশ্য থাকলেই তারা একত্রে দায়ী হয়ে যাবে। ফৌজদারী মামলায় মূলত অপরাধীদের একত্রে দায়ী করার প্রয়োজনে এ ধারার আশ্রয় নেয়া হয়। তবে পরিকল্পিত অপরাধটি অবশ্যই সংঘটিত হতে হবে। তা না হলে দায়ী করা যাবে না।
দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে যা হচ্ছে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড। খুনের সংজ্ঞা দন্ডবিধিতে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটালেই তা সর্বদা খুন বলে বিবেচিত হয় না। কোন কোন সময় সেটাকে নিন্দনীয় নরহত্যাও বলা হয় (২৯৯ ধারা)। ৩০০ ধারায় কখন একটি হত্যাকে খুন হিসেবে গণ্য করা হবে তা বিস্তারিত বলা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলা যায়, পরিকল্পিত ভাবে যদি এমন একটি কাজ করা হয় যে কাজের ফলে অবশ্যই কোন ব্যক্তির মৃত্যু হবে বলে জানা আছে তাহলে হত্যাকারীকে খুনের জন্য দায়ী করা যাবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে অবশ্যই দেখতে হবে যে, হত্যাকারী সুস্থ মস্তিষ্কে জেনে শুনে আঘাত করেছে কি না। অনেক সময় এমন পরিস্থিতিও হতে পারে যে, হঠাৎ রাগের মাথায় কাউকে আঘাত করা হল এবং তার ফলে মৃত্যু হল। এমন অবস্থায় সেটা খুন নয় এমন নিন্দনীয় নরহত্যা বলে বিবেচিত হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, দুয়ের অধিক ব্যক্তি যদি খুনে জড়িত থাকে তবে দন্ডবিধির ৩৪ ধারা প্রয়োগ করার মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে ৩০২ ধারার অধীনে দন্ডিত করা যাবে। এ দুটো ধারা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা খুবই প্রয়োজনীয়।
Discussion about this post